পারমাণবিক নীতি অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান সংশোধন করলো উত্তর কোরিয়া

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলিতে সংশোধনী পাসের মুহূর্ত। ছবি : সংগৃহীত

সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলিতে সংশোধনী পাসের মুহূর্ত। ছবি : সংগৃহীত

পারমাণবিক  অস্ত্র তৈরির নীতিকে অন্তর্ভুক্ত করে সাংবিধান সংশোধন করেছে উত্তর কোরিয়া।

দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া কোরিয়ান নিউজ এজেন্সির (কেসিএনএ) বরাতে রয়টার্স বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন ওই সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানিকে রোধ করতে পারমাণবিক অস্ত্রের উৎপাদন ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

উত্তর কোরিয়ার পার্লামেন্ট সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলিতে ওই সংশোধনী সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে ওই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া তার অস্তিত্বের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে।’

বিজ্ঞাপন

কিম জং উন পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নীতিকে রাষ্ট্রের মৌলিক আইন হিসাবে গ্রহণ করেছে, কারও হুমকিতে যা উপেক্ষা করার কোনও সুযোগ নেই।’

কিম জোর দিয়ে বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্রের উৎপাদনকে বাড়ানো, পারমাণবিক হামলায় বৈচিত্র্য আনা এবং বিভিন্ন পরিষেবায় তাদের মোতায়েন করার জন্য পরমাণু প্রকল্পকে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়া এবং এই অঞ্চলে তার কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন চরম উস্কানিমূলক।’

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার একীকরণ মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সংশোধিত সংবিধানে পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ না করার দৃঢ় ইচ্ছা প্রদর্শিত হয়েছে।’

মন্ত্রণালয়টি এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, ‘আমরা আবারও জোর দিচ্ছি যে, উত্তর কোরিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তবে কিমের শাসনের অবসান হবে।’

জাপানের মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিরোকাজু মাতসুনো বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন আমাদের দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি কখনই সহ্য করা যায় না।’

উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মরক্ষার জন্য পূর্বনির্ধারিত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার আইনে অন্তর্ভুক্ত করার এক বছর পরে এই সংশোধনী আসলো।

যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতাকে ন্যাটোর এশীয় সংস্করণ ন্যাটো হিসাবে নিন্দা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দেশগুলোর সঙ্গে সংহতি রক্ষার জন্য কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন কিম।

কিম গত সপ্তাহে রাশিয়া সফর করে দেশে ফিরেছেন। সেখানে তিনি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছেন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, পিয়ংইয়ং মস্কোর কাছে তার পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা চাইতে পারে।

বিনিময়ে ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে গোলাবারুদ অর্জনের চেষ্টা করছে রাশিয়া।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘সংবিধানে পারমাণবিক নীতি অন্তর্ভুক্তি করা একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে পিয়ংইয়ং এই বার্তা দিচ্ছে যে, তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধের বিষয়ে কোনও আলোচনায় আর বসবে না।’

সিউলের উত্তর কোরিয়ান স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াং মু-জিন বলেছেন, ‘এর ফলে উত্তর-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে নতুন শীতল যুদ্ধ এবং কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক উত্তেজনা তীব্রতর হবে।’