অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র বলে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মিলার এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারকে বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয়রা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দাবি করেছে। আমেরিকা কি জানে যে, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে? এই অবস্থায় বাংলাদেশি জনগণের ভোটাধিকার থাকা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া যৌক্তিক হলেও অসম্ভব।
দ্বিতীয় আরেকটি প্রশ্নে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তার বিষয়ে কিছু উসকানিমূলক ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। তিনি একই কাজ করেছিলেন ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট। সে সময় (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) মার্সিয়া বার্নিকাটের গাড়িতে শেখ হাসিনার নির্দেশেই হামলা হয়েছিল। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বসে আবারও সেই একই ঠাট্টা এবং একই বিদ্রুপ করছেন।
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি শুধু বলতে চাই, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি যে আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করি। যেমনটা আমরা আশা করি, প্রতিটি সরকারই কূটনীতিকদের নিরাপদ সুরক্ষার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে। আপনার প্রথম প্রশ্নটির প্রেক্ষাপটে আমি বলতে চাই, যেমনটি আমি আগেও বলেছি, গতকালও বলেছি—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার। সব রাজনৈতিক দল, ভোটার, সরকার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের। আর আমরা বাংলাদেশে যা চাই, বাংলাদেশের জনগণও তা-ই চায়। সেটি হলো, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
আরেক প্রশ্ন ম্যাথিউ মিলারকে করা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদের মধ্যে সংলাপ আহ্বানের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপে বসেন, তারপর তিনি বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপে বসবেন কি না, সে বিষয়ে ভাববেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি এবং তার প্রশাসন বিরোধীদের ওপর ব্যাপক আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। মঙ্গলবার বিরোধীদের কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের গুলিতে বিরোধীদলীয় দুই নেতা নিহত হয়েছেন। আর গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। প্রতিদিনই তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে। তাহলে আপনি কীভাবে বিশ্বাস করবেন যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশের বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে এটি বলতে চাই যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা আগে যে লক্ষ্যগুলো উল্লেখ করেছি, আমরা বিশ্বাস করি যে সেই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিচ্ছি। আমরা সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সুবিধার জন্য, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তাদের একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাতে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা তা চালিয়ে যাব।