সামরিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সম্মত বাইডেন-জিনপিং
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন নিজেদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকে কমিয়ে সামরিক যোগাযোগ পুনরায় শুরু করতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) ক্যালিফোর্নিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় পর এই দুই নেতা ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, "আমরা সরাসরি, খোলা, পরিষ্কার যোগাযোগে ফিরে এসেছি।"
বাইডেন আরও বলেছেন, উভয় দেশ একে অপরের সাথে সামরিক যোগাযোগ স্থাপনে সম্মত হয়েছে।
এ বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একমত হয়েছেন তারা। তার মধ্যে অন্যতম সামরিক যোগাযোগ, ফেনটানাইল ইস্যু। মিটিং শেষে জো বাইডেন বলেছেন, আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ। কিছু ইস্যুতে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে।
অন্যদিকে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক কখনো মসৃণ ছিল না বলে স্বীকার করে নেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি আরও বলেছেন, তাই বলে এই দুই সুপার পাওয়ারের একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা কোনো অপশন হতে পারে না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয়েই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী। তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও পদক্ষেপ নিতে একমত হয়েছেন। জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি থেকে কিছুটা দূরে রয়েছেন তারা।
মিথেন নির্গমন ধীরগতির করার বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুই দেশের নেতা। মিথেন হলো গ্রিনহাউসের ক্ষেত্রে শক্তিশালী একটি গ্যাস। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে নবাবয়নযোগ্য জ্বালানির উদ্যোগ তিনগুণ করায় সমর্থন দেয়ার কথা বলেছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় পক্ষই মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করার কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি ফেনটানাইলের উৎস দমন করতে রাসায়নিক কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজি হয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই ফেনটানাইলের অতিরিক্ত ডোজের কারণে সেখানে মৃত্যু বাড়ছে। গত বছর এই শক্তিশালী সিন্থেটিক অপিয়ড প্রায় ৭৫০০০ মানুষের মৃত্যুতে ভূমিকা রেখেছে। এই পদার্থটি মাদক বা ওষুধের চালানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
উত্তেজনাকর একটি সময় পেরিয়ে দুই দেশের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ শুরু হচ্ছে আবার। এই পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার শীর্ষে ছিল। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরের পর এই সামরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয় চীন।
বৈঠকে দুই নেতা ইসরায়েল ও গাজার সংঘাত নিয়েও আলোচনা করেছেন। এছাড়াও দুই পরাশক্তি যৌথভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) পরীক্ষা করতেও সম্মত হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে বড় ও বিপজ্জনক সমস্যা তাইওয়ান সম্পর্কে দীর্ঘ কথোপকথন করেছে শীর্ষ এই দুই নেতা।
এছাড়া বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন দুই প্রেসিডেন্ট। মিটিংয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং শি জিনপিং হ্যান্ডশেক করেছেন। বিবিসির উত্তর আমেরিকা বিষয়ক সম্পাদক সারাহ স্মিথের মতে এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। তিনি বলেন, দুইটি সবচেয়ে শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্টরা যখন একে অন্যের সঙ্গে কথা বলেছেন, তখন এটা হলো কূটনৈতিকভাবে একটি অর্জন। যদি তারা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকতে একমত হয়ে থাকেন, তাহলে এ ঘটনাকে একটি সফলতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।