ইন্দোনেশিয়ায় জড়ো হয়েছে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা 

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আসার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ার একটি সমুদ্রসৈকতে আটকা পড়েছে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। 

রোববার (১০ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ৩ টায় নৌকায় করে উপকূলে এসে পৌঁছায় প্রায় ২০০ শরণার্থী। পরে আরও ২০০ জন নিয়ে সমুদ্র সৈকতে ভিড়ে অন্য নৌকাটি। বর্তমানে প্রায় ৪০০ শরণার্থী অবস্থান করছে সেখানে।

আচেহের মাছ ধরা সম্প্রদায়ের প্রধান মিফতাহ কাট আদে বলেছেন, রোববার ভোর পর্যন্ত দুটি নৌকা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছে। প্রতিটি নৌকায় আনুমানিক ২০০ রোহিঙ্গা ছিল বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সামরিক আধিকারিক অ্যান্ডি সুসান্তো বলেন, ভোর ৪ টায় প্রায় ১৮০ জন রোহিঙ্গা পিডিতে পৌঁছায়। তারপর অপর নৌকাটি আসে।  

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণ করবে না বলে জানালে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যেহেতু জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে ইন্দোনেশিয়া স্বাক্ষর করেনি, তাই তাদের শরণার্থী গ্রহণে বাধ্যও করতে পারবেনা আন্তর্জাতিক মহল।

রোহিঙ্গাদের নৌকা যেখানে পৌঁছেছে, সেই আচেহ প্রদেশের পিডি সোশ্যাল এজেন্সির প্রধান মুসলিম বলেন, শরণার্থীদের নৌকা যেখানে থেমেছে সেখানেই রাখা হবে। এবার আর সরকার তাদের জন্য কোনো খরচ বহন করবে না। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার শরণার্থীদের তাঁবু বা অন্য কোনো মৌলিক চাহিদা প্রদানের দায়িত্ব নেবে না।

পিডি নামক স্থানটিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা নেই বলেও জানান মুসলিম।

এএফপির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শরণার্থীদের সমুদ্রসৈকতে জড়ো হতে দেখা গেছে। মায়েরা তাদের সন্তানদের কোলে নিয়ে আছেন। শিশুদের বেশির ভাগেরই পর্যাপ্ত জামাকাপড় ছিল না। অন্যরা সমুদ্রসৈকতে শুয়ে আছে। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করছে।

গত মাসেও ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এই উপকূলে এসেছিল। এবার আর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং বাসিন্দারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে রাজি নয়। তাদের এবার সমুদ্রে ঠেলে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার আচেহর সাবাং দ্বীপে প্রায় ১৫০ জন বিক্ষোভকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীকে অন্যত্র পাঠানোর দাবি জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। 

প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো গত শুক্রবার বলেছেন যে, স্থানীয় সম্প্রদায়ের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্বাস্তুদের জন্য অস্থায়ী ত্রাণ সরবরাহ করা হবে। বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার তাদের দেশে পৌঁছানোর পেছনে মানব পাচারকারী নেটওয়ার্ক জড়িত আছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় ইন্দোনেশিয়া। তাই শরণার্থীদের গ্রহণ করতেও তারা বাধ্য নয়। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোও রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটির যাওয়ার তাই খুব বেশি জায়গাও নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রধান লক্ষ্যবস্তুই ছিল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, যার বেশির ভাগই মুসলিম। এই গণহত্যা শুরুর পর প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার জন্য সমুদ্রে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল যাত্রা করে।

মিয়ানমারে বর্তমানে সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত চলমান রয়েছে। মিয়নমারের এই দীর্ঘদিনের সংঘাত পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশ ছেড়ে তাই তারা মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে আশ্রয়ের আশায় ছুটে যাচ্ছে।