পাকিস্তানে সরকার গঠনে এগিয়ে নওয়াজ-বিলওয়াল সমঝোতা
পাকিস্তানে ফেডারেল, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানে সরকার গঠনে সব দলই ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের নিউজপোর্টাল দ্য নিউজের নিউজ স্টোরিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্টোরিতে জানানো হয়, পাকিস্তানের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এ ইঁদুর দৌড় শুরু করে।
তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ), পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সমঝোতা পাকিস্তানের ফেডারেল, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানের সরকার গঠন করতে জোটে যেতে সমঝোতায় উপনীত হয়েছে।
শনিবার থেকেই দলগুলো তাদের পছন্দের দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এর আগে শুক্রবার নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন দল মুসলিম লীগ শুক্রবার থেকেই কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) ও প্রাদেশিক সরকার গঠনের জন্য তৎপরতা শুরু করে।
শনিবার দ্য নিউজ জানায়, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) দলের নেতা শেহবাজ শরীফ পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, তারা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে রাজি। এ জন্য শেহবাজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহসিন নাকভির বাসভবনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, জারদারির সঙ্গে ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের জন্য আলোচনা হয়েছে। এজন্য শেহবাজ নওয়াজ শরীফের বার্তা তার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) সঙ্গে আরো আলোচনায় বসতে চায়।
সূত্রটি জানায়, পরবর্তী বৈঠকে দল দুটি কেন্দ্র ও পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানে সরকার গঠন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এজন্য জারদারি ও শেহবাজ দুজনেই একমত হয়েছেন। শনিবারের বৈঠকে শেহবাজ সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে সিনেটের ইসকার দর, খাজা সাদ রফিক, সরদার আয়েজ সাদিক, মারিয়াম আওরঙ্গজেব, মালিক মুহম্মদ আহমেদ খান, সিনেটর আজম নাজির তারার, আতাউল্লাহ তারার এবং খাজা ইমরান নাজির উপস্থিত ছিলেন।
ইতোমধ্যে, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএমপি) দলের প্রতিনিধি দলের সদস্য খালিদ মকবুল সিদ্দিকী, মুস্তাফা কামাল, ফারুক সাত্তার এবং সিন্ধু প্রদেশের গভর্নর কামরান তেসোরি লাহোরে নওয়াজ শরীফের আমন্ত্রণে দেখা করেন।
পাকিস্তানি পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ নির্বাচনোত্তর ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকার গঠনে আলোচনা করে।
রোববার জিও নিউজ জানায়, নব নির্বাচিত ১৮ থেকে ২০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নওয়াজ শরীফ নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জোট সরকার গঠন করলে তাদের সমর্থন করবে।
তবে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতৃত্ব এ সব তথ্যকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
দ্য নিউজকে উদ্ধৃত করে জিও নিউজ জানায়, নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও বিলওয়াল নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) জোট পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও রাওয়ালপিন্ডিতে সরকার গঠন করলে তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। ইমরান খানের পিটিআই দলের নেতারা জানিয়েছেন, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পিটিআইকে সমর্থন করবে।
উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে ষোড়শতম জাতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৬৫টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একটির নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়।
২৬৬টি আসনের মধ্যে কোনো দল ১৩৪টি আসন পেলে এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু ঘোষিত আসনের মধ্যে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৯৩টি আসনে, নওয়াজ শরীফ নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ পেয়েছে ৭৩টি আসন, বিলওয়াল ভুট্টো নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি আসন, জিইউআই-এফ দল পেয়েছে ৩টি আসন এবং নির্দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩৩টি আসন। এককভাবে কোনো দলই সরকার গঠনে সক্ষম নয়।
তবে রোববারের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও বিজয়ী স্বতন্ত্র ২০ সদস্য যদি জোট সরকার গঠনে রাজি হয়, তাহলে তাদের মোট আসন সংখ্যা হচ্ছে, ১৪৭।
তাহলে তারা সহজেই ফেডারেল, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানে সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব এ সরকারকেই সমর্থন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।