ইমরান খানের সরকার গঠন করতে পারার সম্ভাবনা কতটুকু?
পাকিস্তানের জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থনপন্থি স্বতন্ত্র দলের প্রার্থীরা দেশটির সদ্যসমাপ্ত ১৬তম সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছে। সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশের আগেই কর্মী-সমর্থকদেরকে বিজয় উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন ইমরান খান। এখন প্রকৃতই উদযাপনের সময়।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৪ আসনের ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০১ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ৭৫ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১৭টি আসন।কিন্তু সরকার গঠনে ইমরান খানের সমর্থনপন্থি স্বতন্ত্র দলের প্রয়োজন হবে ১৩৪টি আসন।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির (পিআইএলডিএটি) সভাপতি আহমেদ বিলাল মেহবুবের মতামতে খোঁজা হয়েছে সে সম্ভাবনা।
প্রশ্ন: এই নির্বাচনে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অন্য সব রাজনৈতিক দলকে আসনের সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেছে। তবুও স্বতস্ত্র প্রার্থীরা পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করতে একত্রিত হতে পারে কিনা?
আহমেদ বিলাল মেহবুব বলেন, পিএমএল-এন বা পিপিপির মতো বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জোট গঠন না করে স্পষ্টতই পিটিআইয়ের সরকার গঠনের মতো কোনো শক্তিশালী অবস্থান নেই। কারণ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন তারা পায়নি। সংরক্ষিত আসনের হিসাব আপাতত বাদ দিলে পাকিস্তানে সরকার গঠন করার জন্য কোনও দলকে ন্যূনতম ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করতে হবে। তাই সব আসনের প্রাপ্ত ফলাফল পিটিআইয়ের সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
প্রশ্ন: পাকিস্তানের সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার তিনদিনের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জানাতে হবে, তারা কোনও দলে যোগ দেবেন নাকি স্বতন্ত্র হিসাবেই থাকবেন। এমন অবস্থায় পিটিআই-অনুমোদিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন-পরবর্তী তিন দিনের সময়ের মধ্যে পিটিআইতে আবারও যোগ দিতে চাইলে কী হবে?
বিলাল মেহবুব বলেন, এটা সম্ভব। তবে মেহবুব ব্যাখ্যা করেছেন, এটি তাদের জন্য বেশ দীর্ঘ একটি পথ হবে। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যে দলে যোগ দিতে চান তাদের অবশ্যই একটি দলীয় প্রতীক থাকতে হবে, আর এটি বাধ্যতামূলক। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আবার পিটিআইতে যোগ দিতে চাইলে পিটিআইকে আন্তঃদলীয় নির্বাচন করতে হবে এবং তাদের প্রতীক বা অন্য কোনও প্রতীক ফিরে পেতে হবে। আর এটি হলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংরক্ষিত আসনও পাবে পিটিআই। ২০১৭ সালের ইসিপি বিধির ৯৪ বিধিতে দলীয় প্রতীক থাকার শর্তটি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
প্রশ্ন: পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা এমডব্লিউএমের মতো অন্য নিবন্ধিত দলগুলোতে যোগ দিতে পারে কিনা?
মেহবুব ইতিবাচকভাবে বলেন, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা এমডব্লিউএম বা অন্য যে কোনও দলে যোগ দিতে পারেন। তবে যদি তারা সেটি করেন তাহলে তারা সেই দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা যদি এমডব্লিউএম বা অন্য কোনও দলে যোগ দেয়, তাহলে তারা জাতীয় পরিষদে তাদের মোট আসন সংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষিত আসন পেতে পারে। তেমনটি হলে মোটামুটিভাবে তারা ২৫ থেকে ২৭ আসন পেতে পারে যদি তাদের মোট আসন ১০০টির কাছাকাছি থাকে।
তবে এমডব্লিউএম-এ যোগদানের পর সংরক্ষিত আসন পেতে পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীদের ইসিপিতে হলফনামা জমা দিতে হবে যে তারা এমডব্লিউএম বা অন্য কোনও দলে যোগ দিচ্ছে। পরবর্তীতে এমডব্লিউএম বা তারা যে দলে যোগদান করবে তার প্রধানকে ইসিপিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গ্রহণ করেছেন। ইসিপি ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এমনটি হতে পারে।
প্রশ্ন: এমডব্লিউএম সবচেয়ে বেশি আসন পেলে সরকার গঠন করতে পারবে কিনা?
মেহবুব আবারও ইতিবাচকভাবে বলেন, একটি সরকার গঠন বা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার জন্য একটি দলকে জাতীয় পরিষদে কমপক্ষে ১৬৯টি আসন থাকতে হবে।পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীদের বর্তমান আসন সংখ্যা ১০০ এর বেশি হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের এই সংখ্যাটি নিশ্চিত করতে আরেকটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে যার মাধ্যমে পিটিআই সরকার গঠন করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার সময় যদি কেউ প্রথম দফায় জাতীয় পরিষদের ৩৩৬ আসনের মধ্যে ১৬৯টির ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সেদিন হাউসে সংখ্যাগরিষ্ঠ যে কেউ তাদের পছন্দের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে বা সরকার গঠন করতে পারে।দ্বিতীয় রাউন্ডে যার সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে তারা তাদের পছন্দের প্রধানমন্ত্রী পেতে পারেন বা সরকার গঠন করতে পারেন।
প্রশ্ন:পিটিআই-সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা স্বতন্ত্র ব্লকে একত্রিত হলে তারা কী ভূমিকা পালন করতে পারে?
মেহবুব বলেন, সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংরক্ষিত আসন পাবে না এবং ৭০টি সংরক্ষিত আসন জাতীয় পরিষদে দলভিত্তিক শক্তিমত্তা বিবেচনায় অন্যান্য দলকে দেওয়া হবে। তবে পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা কোনও দলে যোগ না দিলেও তারা জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ পেতে পারেন। এর জন্য তাদের জাতীয় পরিষদের স্পিকারের কাছে একটি আবেদন জমা দিতে হবে যে, তারা তাদের মনোনীত কোন একজন প্রার্থীকে সমর্থন করেন।