নওয়াজ শরীফকে ঠেকাতে চায় আইএসআই!
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সংস্থাটির ইশারায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজকে (পিএমএলএন) ঠেকাতে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ (পিটিআই) এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) হাত মেলাতে পারে বলে গুরু শুরু হয়েছে।
ওই জোট সরকারে একদা ইমরান-ঘনিষ্ঠ মুত্তাহিদ কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএমপি) যোগ দিতে পারে বলেও জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের একাংশ।
পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এখন মোট আসন ৩৩৬। তার মধ্যে সরাসরি ভোট হওয়ার কথা ছিল ২৬৬টি আসনে। কিন্তু এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ২৬৫টি আসনে ভোট হয়েছে। বাকি ৭০টি আসন নারী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।
এর মধ্যে নারীদের জন্য ৬০ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি আসন। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী সরাসরি ভোটে যে দল যে সংখ্যক আসনে জয় পাবে, সেই অনুপাতে ওই সংরক্ষিত আসনগুলোতে প্রতিনিধি ঠিক করে দলগুলো।
যদিও এই সংরক্ষিত আসনগুলোর উপর সরকার গঠন নির্ভর করে না। সেই হিসাব হবে সংরক্ষিত বাদ দিয়ে ২৬৫টি আসনের মধ্যে। সেই অর্থে বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৩৩ জন জয়ীর সমর্থন পেলেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ছোঁয়া সম্ভব হবে।
নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বীকৃতি বাতিল করায় পিটিআই সরাসরি ভোটে অংশ নিতে পারেনি। যদিও ইমরানের দল সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৯৩টি আসনে জিতেছেন।
নওয়াজের দল পেয়েছে ৭৫টি এবং পিপিপি পেয়েছে ৫৩টি আসন। এমকিউএমপি জিতেছে ১৭টিতে।
কট্টরপন্থী নেতা মাওলানা ফজলুর রেহমানের নেতৃত্বাধীন উলেমা-ই-ইসলাম ফাজি (জেইউআইএফ) জিতেছে ৪টি আসনে।
এককভাবে কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৩টি আসন না পাওয়ায় জোট সরকার গড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরও প্রকাশ্যে জোট সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে নওয়াজ ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় পিপিপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার ভাই শেহবাজের নাম ঘোষণা করেছেন।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল সমঝোতার শর্ত হিসাবে আসিফ আবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবেন। তার ছেলে বিলাবল ভুট্টো জারদারি হবেন শেহবাজ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০২২ সালে ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে পিএমএলএন-পিপিপি জোট সরকারে শেহবাজ প্রধানমন্ত্রী এবং বিলাবল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু, এবার ভোটে দুই দল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এখনও পিপিপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেহবাজকে সমর্থনের বিষয়ে কোনও ঘোষণা করা হয়নি।
ফলে ক্রমশ নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে আলোচনা দানা বাঁধছে। আইএসআই ইমরানের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করেছে বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
জেইউআইএ প্রধান মাওলানা ফজলুর সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ২০২২ সালে ইমরান সরকারের পতনের জন্য সরাসরি তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার চক্রান্তকে দায়ী করেছেন।
ফলে এক সপ্তাহ আগে শরীফের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেও তার ভূমিকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাছাড়া, অতীতে অনেকবারই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে আইএসআইয়ের সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে।
টানাপড়েনের এই পরিস্থিতিতেই জেলবন্দি ইমরানের দলের নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যেই জনমত উপেক্ষা করে শরীফকে সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়ার বিরোধিতায় দেশজুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। ফলে ক্রমশ প্রবল হচ্ছে নতুন করে অশান্তির সম্ভবনা।