পাকিস্তানে আবারও প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন আসিফ জারদারি, হেরে যাচ্ছে পিটিআই
২০১৩ সালের পর পাকিস্তানে আবারও দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন দেশটির সাবিক প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মাঝরাতের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে পাকিস্তান মুসলীম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পিপিপি। পিএমএল-এন- পিপিপির ঐক্যমতের পর বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন ও বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে জর্জরিত পাকিস্তানে প্রায় দেউলিয়া দশা চলমান। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির রিজার্ভ ছিল মাত্র ৮ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। বছর শেষে বৈশ্বিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে ৭ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ। ২০২২ সালে জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ পেয়েছিলেন শাহবাজ। শরিফরা পাকিস্তানের সেই পরিবারের একজন যারা কয়েক দশক ধরে পাকিস্তান শাসন করে আসছেন। অন্যদিকে বেশি ভোট পেলেও জোটের কাছে হেরে যেতে বসেছেন খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
আসিফ আলী জারদারি ১৯৫৫ সালে সিন্ধুর নবাবশাহর সুপরিচিত বালুচ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক বছর জেলও খাটেন জারদারি। পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারে বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রী বেনজির ভুট্টো দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ছিলেন। যিনি নিজেও পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাদের বিয়ের এক বছর পর ১৯৮৭ সালে বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
একই বছর, জারদারি জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসাবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভুট্টো আলী জারদারিকে পাকিস্তানের বিনিয়োগ ও পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে তার প্রশাসনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যা অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। মন্ত্রিসভায় থাকাকালীন বিরোধীরা জারদারির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি পাবলিক ফান্ড চুরি করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল। তখন থেকে দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির কারণে তাকে ‘মি. টেন পার্সেন্ট’ তকমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১০ শতাংশ কমিশন ছাড়া এক পাও সামনে বাড়াতেন না তিনি। বিরোধী এবং সরকারি তদন্তকারী উভয়পক্ষ থেকেই অভিযোগ ছিল, জারদারি শত শত মিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে আÍসাৎ করেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত জেলে ছিলেন তিনি।
২০০৭ সালের আগে পাকিস্তানের বাইরে আলী জারদারি খুব একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। কিন্তু জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম উঠে আসে জারদারির। বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর পর জনগণের সহানুভূতি পেয়ে ২০০৮ সালে তিনি সহজেই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। তবে উচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতায় তার যাত্রা আবারও বিতর্ক এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে ছেয়ে যায়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি অসদাচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন বারবার। যদিও আদালতে কিছুই প্রমাণিত হয়নি। তিনি একজন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতা বলেও বেশ পরিচি পেয়েছেন। গত বছর ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আসিফ আলী জারদারি নিঃসন্দেহে দেশের অন্যতম বুদ্ধিমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হিসেবে দুটি বিলে স্বাক্ষর করেন তিনি। প্রথম বিলে বিভিন্ন প্রথার অধীনে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া এবং তাদের ন্যায্য উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়। দ্বিতীয় বিলে এসিড হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়েছে।