সংঘাত মোকাবিলার প্রস্তুতিতে চীন, বৈশ্বিক হুমকি কতটুকু!



সানজিদা খান, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিরোধ অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এই দুই পরাশক্তির মধ্যে যে শীতল স্নায়ুযুদ্ধ চলছে, তা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে ক্রমেই উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকী করোনা মহামারির চেয়েও এই দুই শক্তির মতভেদকে আরো বেশি উদ্বেগজনক মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একটি লক্ষ্য হলো, চীনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। কেননা, চীন এখন অর্থনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং এ কারণেই প্রধান শত্রুও।

এদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তবে দুটি দেশই এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে কাজের ক্ষেত্রে স্বল্পসংখ্যক নিয়োগদাতা বৃহৎ-সংখ্যক কর্মজীবীর ওপর আধিপত্য করে। যুক্তরাষ্ট্রে কাজের বেশির ভাগ ক্ষেত্রই ব্যক্তিমালিকানাধীন। অন্যদিকে, চীনের আবার একটি হাইব্রিড ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি মালিকানাধীন দুটি ব্যবস্থাই চলছে।

সম্প্রতি, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ, সামাজিক অস্থিরতা ও মহামারি মোকাবিলায় চীনা কোম্পানিগুলো এমন এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, যা পুরো পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে এসব কোম্পানি তাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলেছে, যা চীনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা বহির্বিশ্বের জন্য বড় সামরিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।

বিশ্বের 'দ্বিতীয় অর্থনীতি'র দেশ হিসেবে চীনের সামরিক শক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী। এমন সময়ে বেসরকারিভাবে গঠিত এ ধরনের মিলিশিয়া বাহিনীর প্রত্যাবর্তন দেশটির সামরিক শক্তিকে আরো বেশি জোরদার করে তুলবে। এর ফলশ্রুতিতে চীন সামরিক শক্তিতে বিশ্বের কাছে এক মহাপরাক্রম শক্তি হিসেবে প্রতীয়মান হবে, যা আগামী দিনগুলোতে বহির্বিশ্বের জন্য ভয়ংকর হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বেসরকারি মালিকানাধীন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিসহ অন্তত ১৬টি বড় বড় প্রতিষ্ঠান গত এক বছরে তাদের নিজস্ব 'ফাইটিং ফোর্স' (নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাহিনী) গঠন করেছে।

'পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্ট' নামে পরিচিত এসব ফাইটিং ইউনিট ওই সব কোম্পানিতে চাকরিরত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়। তারা বিশ্বের বৃহত্তম দেশ চীনের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি রিজার্ভ এবং সহায়ক বাহিনী হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাড়া দেওয়া থেকে শুরু করে যুদ্ধের সময় সহায়তা প্রদান করে থাকে। তবে এই ফোর্সটি কেবল চীনের ভেতরেই কাজ করে থাকে। বেসামরিক এই বাহিনীটির সঙ্গে মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ডের বেশ মিল রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের কর্পোরেট ব্রিগেড (বাহিনী) প্রতিষ্ঠা বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের পাশাপাশি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এটিকে, প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের চীনকে সামরিক শক্তিতে বিশ্বের 'আধিপত্যশীল' দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার বহুদিনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেও দেখছেন অনেকেই।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর চায়না অ্যানালাইসিসের চীনা রাজনীতিবিষয়ক ফেলো নিল থমাস বলেন, কর্পোরেট মিলিশিয়াদের প্রত্যাবর্তন জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো ভালোভাবে সংহত করতে শি জিন পিংয়ের প্রচেষ্টাকেই প্রতিফলিত করে। কারণ, দেশটির ধীর প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আরো কঠিন ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সামরিক নেতৃত্বের অধীনে এসব কর্পোরেট মিলিশিয়ারা কমিউনিস্ট পার্টিকে ভোক্তা বিক্ষোভ এবং কর্মচারী ধর্মঘটের মতো সামাজিক অস্থিরতার ঘটনাগুলো আরো কার্যকরভাবে দমন করতে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বেইজিংয়ের নির্ধারিত আনুষ্ঠানিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য কিছু বেশি। তবে রেকর্ড পরিমাণ মন্দা, ক্রমবর্ধমান যুব বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির চাপ, ক্রমবর্ধমান কর্পোরেট খেলাপি এবং স্থানীয় সরকারগুলোর আর্থিক চাপসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে চীনকে ।

ছবি: সংগৃহীত

এ পরিস্থিতিতে হতাশা যতই বাড়ছে, বিক্ষোভ ততই ছড়িয়ে পড়ছে। শ্রমিকবিক্ষোভ পর্যবেক্ষণকারী হংকংভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা চায়না লেবার বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিক্ষোভের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৯৪টিতে, যা ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

মাত্র একবছর আগেও, ঝেংঝুতে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম আইফোন তৈরির কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছিল। এছাড়াও ফক্সকনের মতো বড় কোম্পানিতেও করোনা মহামারি পরবর্তী কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে বেতন ও সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করায় শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল।

তবে শুধু কর্পোরেট সেক্টরই না, এর বাইরেও মিলিশিয়া ইউনিটগুলো স্থানীয় সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও গঠিত হয়েছে। তবে আগের দশকগুলোর মতো এত বড় পরিসরে না হলেও এই ইউনিটগুলো এখনো নির্দিষ্ট একটি জায়গায় স্থির হয়ে রয়েছে।

কর্পোরেট মিলিশিয়া গঠনকারী বিভিন্ন ধরনের ফার্ম

এখন পর্যন্ত যেসব কোম্পানি মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, তাদের বেশির ভাগই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান (এসওই), যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরাসরি কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক সরকারের অধীন।

কিন্তু গত ডিসেম্বরে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান 'ইলি গ্রুপ' ইতিহাসের প্রথম বড় বেসরকারি নিয়ন্ত্রিত চীনা কোম্পানি হিসেবে 'পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্ট ইউনিট' তৈরি করে। 'ইলি' কোম্পানির মালিকানায় রাষ্ট্রীয় অংশীদারিত্ব নেই। তবে এক্সচেঞ্জ ফাইলিং অনুসারে, হোহোট স্থানীয় সরকারের ৮.৫% শেয়ার রয়েছে।

এছাড়া এখানে, ইলির মিলিশিয়া বাহিনীর শক্তি বা যোগদানকারী কর্মীদের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেওয়া হয়নি। চীনের মিলিটারি সার্ভিস আইন অনুযায়ী, মিলিশিয়া বাহিনীর পুরুষ সদস্যদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে। বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এ আইনে কিছুটা শিথিলযোগ্য। নারীদের যোগদানের জন্য বয়সের সীমা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

তবে ইলির এই ইউনিটটি পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং আঞ্চলিক সরকারের কমিউনিস্ট পার্টির সরাসরি পরিচালনায় থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইলির মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান হুয়াং ঝিকিয়াং বলেন, একটি জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলার জন্য এই ইউনিটটি গঠন করা হয়েছে, যা শান্তির সময় সেবা করতে পারে। জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করতে পারে এবং যুদ্ধের সময় ভূমিকা রাখতে পারে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে চীনা সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি মিলিশিয়ার মধ্যে এটিই ছিল সর্বশেষ বড় মিলিশিয়া ইউনিট।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে, সাংহাইয়ের একটি সরকারি মালিকানাধীন নির্মাণ সংস্থা একটি 'পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্ট ইউনিট' স্থাপন করেছে। শহরটির কমিউনিস্ট পার্টির অফিসিয়াল সংবাদপত্র জিফাং ডেইলি অনুসারে, এটি পিএলএ'র অধীনে নিয়ন্ত্রিত হবে। এটি চাকরিচ্যুত প্রবীণদের চাকরি দেওয়া বা সামরিক বাহিনীর জন্য সৈন্য নিয়োগের মতো দায়িত্বে সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য গঠিত হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সিএনএন জানিয়েছে, গত বছর আরো অন্তত ১৪টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান একই কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেংনিউ ডেইরি; জিয়াংসু প্রদেশের নানটং শহরে হাইয়ান আরবান কনস্ট্রাকশন ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট; গুয়াংডং প্রদেশের হুইঝো শহরের তিনটি নির্মাণ, পরিবহন ও জলসেবা সংস্থা এবং হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের নয়টি সংস্থা রয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, 'রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে মিলিশিয়া গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে -'জাতীয় প্রতিরক্ষা উন্নয়নকে আরো জোরদার করা।' 

মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের ইতিহাস

চীনের মিলিশিয়া বাহিনী ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠারও আগেও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, তারা ১৯২০-এর দশকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং কমিউনিস্ট পার্টির অসংখ্য লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল। ১৯৪৯ সালের পর যখন পার্টি চীনের মূল ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল, তখন এই ইউনিটগুলোকে সরকার, স্কুল এবং সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল।

সরকারি নথি অনুযায়ী, ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মাওবাদী যুগে এই বাহিনীর তৎপরতা ছিল। তবে ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে যখন তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যখন চীনের সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল তখন ২২ কোটি সদস্য নিয়ে বাহিনীটি তার ইতিহাসের শীর্ষে অবস্থান করছিল।

মিলিশিয়ারা চীনের সামরিক বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দুটি পূর্ণকালীন পেশাদার বাহিনী পিএলএ এবং পিপলস আর্মড পুলিশ নিয়ে গঠিত। এটি অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। এছাড়া চীনের প্রতিরক্ষা আইন অনুযায়ী, মিলিশিয়ারা পিএলএ'র সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে।

ছবি: সংগৃহীত 

এদিকে, কর্পোরেট ব্রিগেডে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে তালিকাভুক্ত করে চীনের বিপ্লবী নেতা মাও সেতুং বলেছিলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দেশের প্রতিরক্ষা জোরদার করছেন। কিন্তু ঐতিহাসিকরা বলেন, মাও তার ব্যক্তিগত এজেন্ডা প্রচার এবং তার ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য এই বাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন।

তিনি ব্রিগেডগুলোকে কমিউন (প্রজাসভার) অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এই কমিউনগুলো ১৯৫৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে গ্রামীণ চীনের প্রায় সমস্ত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করেছিল। কমিউনগুলো মাওয়ের 'গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড' প্রচারাভিযানের একটি কেন্দ্রীয় অংশ ছিল।

মাও তার কট্টর নীতির বিরোধিতাকারীদের দমন ও ভয় দেখানোর জন্য মিলিশিয়া বাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন।

১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর দেশটি রাজনৈতিক সংগ্রামের পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৮০ লাখে নেমে আসে। যদিও কিছু এসওই তাদের মিলিশিয়া ধরে রেখেছিল, কিন্তু তখন কোনো বেসরকারি উদ্যোগ ছিল না। কারণ, ১৯৭৮ সালের পর যখন চীন মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়লো তখন থেকেই কেবল বেসরকারিখাত প্রসার লাভ করতে শুরু করে।

কর্পোরেট মিলিশিয়াদের পুনরুত্থান: এখনই কেন

র‌্যান্ড কর্পোরেশনের সিনিয়র আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষাগবেষক টিমোথি হিথের মতে, কর্পোরেট মিলিশিয়াদের পুনরুত্থান সম্ভবত কোভিড-১৯ মহামারি এবং সাম্প্রতিক সময়ে রিয়েল এস্টেট খাতের সংকটের কারণে হয়েছে। চীনে বছরের পর বছর ধরে রিয়েল এস্টেট বাজারের চলা মন্দা ব্যাপক আকারে ধর্মঘটের সূত্রপাত ঘটায়। এ কারণে ২০২২ সাল থেকে চীনের বিভিন্ন শহরে নগদ অর্থের সংকটে থাকায় ভবন নির্মাণে বিলম্ব বা প্রকল্প পরিত্যক্ত হওয়ায় ক্রেতারা অসমাপ্ত অ্যাপার্টমেন্টের জন্য কিস্তি দিতে অস্বীকার জানান।

রিয়েল এস্টেটের এই মন্দার পরিণতি আর্থিকখাতে ছড়িয়ে পড়ে যার ফলে কিছু ব্যাংক তাদের বিনিয়োগকৃত প্রকল্প ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। এটি জামানত হারানো মানুষদের বিক্ষোভকে আরো আলোড়িত করেছে।

এ পরিস্থিতে কর্পোরেট মিলিশিয়াদের আবারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে দেশটি। এর ফলে বেসরকারি মালিকানায় কর্পোরেট মিলিশিয়াকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে টিমোথি বলেন, পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্টের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চীনা সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর জন্য শি'র বৃহত্তর প্রচেষ্টারই একটি অংশ। চীনা প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং এটিকে একটি বিশ্বমানের লড়াকু বাহিনীতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রতিরক্ষাখাত পরিচালনায় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো।

জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো উইলি লাম দেজা ভু বলেন, 'গণযুদ্ধ' এবং 'বেসামরিক ও সামরিকখাতের সহাবস্থানের মাধ্যমে আমরা মাওয়ের মূল স্লোগানের পুনরুজ্জীবন দেখতে পাচ্ছি ।

দেজা ভু'র এ মন্তব্য এটাই ইঙ্গিত করে যে, সমাজের ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরো শক্ত করা এবং চীনকে যুদ্ধকালীন পর্যায়ে দাঁড় করানোর যে আকাঙ্ক্ষা শি জিন পিংয়ের, তা এবার প্রতিফলিত হতে যাচ্ছে। যেমনটি ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে মাও করেছিলেন।

দেজা ভু আরো বলেন, অনেকদিন ধরেই প্রেসিডেন্ট শি তাইওয়ানে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এজন্য শি এসব কর্পোরেট মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের মাধ্যমে পুরো চীনকে সামরিকীকরণ করতে চান। কারণ, বহুকাল ধরে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি তাইওয়ানকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখে। যদিও তারা কখনো এর নিয়ন্ত্রণ পায়নি।

তিনি বলেন, 'যদি আরো বেশিসংখ্যক চীনা নাগরিক মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য হয়ে ওঠে, তাহলে তাইওয়ানসহ বহির্বিশ্বের জন্য চীন এক বৈশ্বিক হুমকিতে পরিণত হতে পারে।' 

গাজায় ইসরায়েলি হামলা: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯১৭৫



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ১৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। 

বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই)) কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া উত্তর গাজা শহরে আরও দু'জন এবং নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলার ৩৯ হাজার ১৭৫ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৯০ হাজার ৭০৩ জন। তাছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও কয়েক লাখ মানুষ। নিহত ও আহতদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও নারী। 

অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলি ১১৩৯ জন নিহত হয়েছে।

;

স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর তৃণমূল নেতার আত্মহত্যা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ির খড়িবাড়ির চক্করমারি শ্মশানঘাট এলাকায় তার নিজ বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিলিগুড়ি টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ জানায়, জগদীশ রায় (৬৫) নামের ওই ব্যক্তি স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং বিশিষ্ট লোকশিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার নবম শ্রেনির এক ছাত্রী জগদীশ রাযয়ের কাছে গান শিখতেন। সেই সুযোগ নিয়ে ওই ছাত্রীকে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করে জগদীশ। ধর্ষণের বিষয়টি জানতে পারলে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) স্থানীয় থানায় অভিযোগ করে ভুক্তভোগীর বাবা। এর একদিন পরেই উদ্ধার হলো অভিযুক্ত জগদীশ রায়ের মরদেহ। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার তদন্তে নেমেছে খড়িবাড়ি থানার পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় চার মাস আগে ওই তৃণমূল নেতা ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এতদিন পর ঘটনাটি জানাজানি হলে হয়তো লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছেন তৃণমূল নেতা।

;

শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সহিংসতার কয়েকটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে এমন প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুনর্বাসন করার দাবি জানায় সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলেছে, আন্দোলন-সহিংসতার প্রেক্ষাপটে কারফিউ জারি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এর মধ্যে যেসব ভিডিও এবং আলোকচিত্র পাওয়া যায়, সেগুলো যাচাই–বাছাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্ভূত পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ও এর ক্রাইসিস অ্যাভিডেন্স ল্যাব বিক্ষোভ দমনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আইনবহির্ভূতভাবে প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের তিনটি ঘটনার ভিডিও যাচাই করেছে।

এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জ্যেষ্ঠ পরিচালক দেপোরসে মুচেনা বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা ভিডিও এবং আলোকচিত্র অব্যাহতভাবে যাচাই করে ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকার ও এর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রতি বিক্ষোভের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সহিংস দমনাভিযান এবং যোগাযোগব্যবস্থার ওপর সব ধরনের বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে।

ঢাকার সাভার, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে ধারণ করা তিনটি ভিডিও যাচাই করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা যথাযথ উপায় নয়। আগ্নেয়াস্ত্র শুধু তখনই ব্যবহার করা যাবে, যখন মৃত্যু ঘটতে পারে বা গুরুতর আহত হওয়ার মতো হুমকি মোকাবিলার প্রয়োজন হয়।

;

পাকিস্তান তার ইতিহাস থেকে কিছুই শিক্ষা নেয়নি: মোদি



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কার্গিল বিজয় দিবসের রজত জয়ন্তী উদযাপন করছে ভারত। এ উপলক্ষে শুক্রবার (২৬ জুলাই) কার্গিল যুদ্ধে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আয়োজিত স্মরণসভায় মোদি বলেন, পাকিস্তান তার ইতিহাস থেকে কিছুই শিক্ষা নেয়নি। যে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা ব্যর্থ করবে ভারত।

শুক্রবার সকালে লাদাখে ‘কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়ালে’পৌঁছে কার্গিল যুদ্ধে শহিদ বীর সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মোদি। এসময় যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জন্য তাদের আত্মত্যাগ অমর। কার্গিল বিজয় দিবসে তাদের সর্বদা স্মরণ করা হবে।

পাকিস্তান এখনও জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে দাবি করে মোদি বলেন, ‘আমি সন্ত্রাসবাদের প্রভুদের বলব, ওদের অপচেষ্টা কখনই সফল হবে না। শত্রুদের যোগ্য জবাব দেব। লাদাখ বা ​​জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের পথে আসা প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে হারাবে ভারত। পাকিস্তান তার ইতিহাস থেকে কিছুই শিক্ষা নেয়নি। তারা সন্ত্রাসবাদ এবং ছায়া যুদ্ধ ব্যবহার করে। আমি আজ এমন একটি জায়গা থেকে কথা বলছি, যেখানে সন্ত্রাসবাদীরা সরাসরি আমার কথা শুনবে। আমি তাদের বলতে চাই, তাদের পরিকল্পনা কখনই সফল হবে না। লাদাখ হোক বা ​​জম্মু ও কাশ্মীর, আমরা উন্নয়ন চালিয়ে যাব।’

এর আগে এদিন সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘২৬ জুলাই প্রত্যেক ভারতীয়র জন্য একটি বিশেষ দিন। এবার আমরা ২৫তম কার্গিল বিজয় উদযাপন করব। আমাদের দেশকে যারা প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই বিশেষ ভাবে পালিত হচ্ছে আজকের এই দিন।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রায় তিনমাস যুদ্ধের পর কার্গিলে ভারতের দিকে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের দখল করা অংশ পুনরুদ্ধার করে অভিযানের বিজয়ের সাফল্য ঘোষণা করে। যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়কে স্মরণ করতে দিনটিকে কার্গিল বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে দেশটি।

 

;