মহুয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা তুলে নিলেন দেহদ্রাই
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে করা মানহানির মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদ্রাই। এনডিটিভি জানিয়েছে, এই আইনজীবীর আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই সাংসদ পদ হারিয়েছিলেন মহুয়া।
দিল্লি হাইকোর্টে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এই মামলার শুনানি ছিল। সেই সময়ে আবেদনকারী দেহদ্রাইয়ের কৌঁসুলি রাঘব অবস্তী জানান, সাবেক সাংসদ যদি ঘোষণা করেন যে দেহদ্রাইয়ের বিরুদ্ধে তিনি আর কোনও অসত্য অভিযোগ আনবেন না, তাহলে ২ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণের এই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে মামলার শুনানিতে হাজির হয়ে মহুয়া দেহদ্রাইকে ‘লুনাটিক’ বা ‘পাগল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। বিচারপতি প্রতীক জালান যার প্রতিবাদে বলেছিলেন, মহুয়ার মন্তব্য ‘দৃশ্যতই অসত্য।’
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জালান বলেন, বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয়ে গেলে ঘরের ঝগড়া প্রকাশ্যে আসবে না।
এর পরে মহুয়ার আইনজীবী সমুদ্র ষড়ঙ্গীকে বিচারপতি বলেন, ‘আপনি চাইলে বাদী পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে নিতে পারেন। সেই জন্য কিছু সময় দেওয়া হলো।’
এরপর এজলাসের এক পাশে অবস্তী এবং ষড়ঙ্গী বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। তারপরে দেহদ্রাইয়ের পক্ষে আইনজীবী অবস্তী বিচারপতিকে বলেন, তিনি কোনও শর্ত ছাড়াই মামলাটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
এরপরে বিচারপতি জালান ঘোষণা করেন, ‘বাদী পক্ষের অনুমতি নিয়ে তার কৌঁসুলি মামলা প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি খারিজ করা হলো।’
ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে ঘুষ ও উপহারের পরিবর্তে মহুয়া মৈত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুগত শিল্পপতি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লোকসভায় প্রশ্ন তুলতেন বলে অভিযোগ করেছিলেন দেহদ্রাই।
বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সেই অভিযোগ লোকসভার স্পিকারের নজরে আনেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে মহুয়ার সাংসদ পদ কেড়ে নেয় লোকসভার শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি।
জবাবে মহুয়া দেহদ্রাইকে ‘কর্মহীন আইনজীবী’ এবং ‘প্রত্যাখ্যাত প্রেমিক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্যের জন্যই মহুয়ার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছিলেন দেহদ্রাই।
তবে মহুয়াও দেহদ্রাইয়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। সেই মামলা এখনও চলছে। মহুয়া বরাবরই দেহদ্রাইয়ের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দেহদ্রাই জানিয়েছিলেন, লোকসভা সদস্য হিসাবে নিজের লগইন ও পাসওয়ার্ডও মহুয়া হিরানন্দানির এক কর্মচারীকে দিয়েছিলেন, যিনি মহুয়ার নামে লোকসভায় প্রশ্ন তৈরি করে পেশ করতেন।
মহুয়া বলেন, লগইন-পাসওয়ার্ড কোনও গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যে তা অন্যকে দেওয়া যাবে না। সাংসদদের সহকারীরাই এটি ব্যবহার করে।
মহুয়া বলেন, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তিনি লোকসভায় সবচেয়ে সরব বলেই বিজেপি দেহদ্রাইদের ঘুঁটি করে তার সদস্যপদ কেড়ে মুখ বন্ধ করিয়েছে। প্রথমে দূরত্ব রচনা করলেও পরে মহুয়ার পাশে দাঁড়ান তৃণমূল নেতৃত্ব। কৃষ্ণনগরে প্রার্থীও করেছেন তাকে। এই পরিস্থিতিতে দেহদ্রাইয়ের সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে মহুয়াকে।