ভারত ভ্রমণে অস্ট্রেলিয়ার এমপিদের বার্নার ফোন ব্যবহারের পরামর্শ
অস্ট্রেলিয়ার এমপি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের ভারত ভ্রমণের সময় বার্নার মোবাইল ফোন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি)। চীন ও ইউক্রেন ভ্রমণকারীদেরও একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করে বলা হয়েছে, তাদের ফোন চীনা এবং রাশিয়ানরা হ্যাক করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য নাইটলি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
ডিএফএটির এমন বার্তায় অস্ট্রেলিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের মধ্যে টানাপোড়েনের বিষয়টি সামনে এল। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এএসআইও) আরও জানায়, ২০২০ সালে কিছু গুপ্তচরদের চক্রান্ত ভন্ডুল ও তাদের অস্ট্রেলিয়া থেকে বিতাড়িত করা হয়, সেই গুপ্তচরদের দল ভারতীয় ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার নিয়ম যে, ফাইভ আইজ জোটবর্হিভূত কোনো দেশে অস্ট্রেলিয়ার ভিআইপিরা ভ্রমণে গেলে তাদের মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে যাওয়ার। তবে দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভারতের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে জোরারোপ করেছে।
নিরাপত্তার জন্য এই পরামর্শের বিষয়ে ডিএফএটি কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
বার্নার ফোন এমন এক ধরণের মোবাইল যা দিয়ে অস্থায়ী ও বেনামি নম্বর তৈরি করা যায়। একবার ব্যবহারের পর ওই নম্বর চিরতরে মুছে ফেলা যায়। এই ধরনের মোবাইল ফোন দামেও সস্তা। আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছাড়াই প্রিপেইড মিনিটসহ বার্নার মোবাইল কেনা হয়। এই ফোন বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকে।
ভারতকে দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়া একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করতো। কিন্তু গত বছর কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় হরদীপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতা পান্নুন হত্যাচেষ্টাকে ঘিরে ফাইভ-আইস জোট ও কোয়াড মিত্রদের সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে ভারতের। যার জেরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও দেশটির তিক্ততা তৈরি হয়।
ফাইভ-আইস জোট ও কোয়াড মিত্ররা হলো- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
নিয়মিত ভারত ভ্রমণ করা নাম জানাতে অনিচ্ছুক অস্ট্রেলিয়ার বিশিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, তাকে ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বার্নার ফোন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং ভারত বিশেষজ্ঞ ইয়ান হল বলেছেন, তিনি আশা করেন, নিরাপত্তা বিষয়ক এই পরামর্শ অস্ট্রেলিয়াকে ভারত সম্পর্কে আরও বাস্তবসম্মত বৈদেশিক নীতির দিকে নিয়ে যাবে।
নাগরিকদের এই ধরনের পরামর্শে ভারতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড, কানাডীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব, মার্কিন অনুরোধের প্রতি নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠেছে বলেন তিনি। তিনি আশা করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা অতি-উচ্ছ্বসিত কথার তুবড়ি থেকে আরও পরিমাপিত ও স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে ভারত নীতির দিকে নিয়ে যাবে।