মোদির ‘একদেশ, একভোট’-এ ভোলেননি ভোটাররা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নরেন্দ্র মোদি চেয়েছিলেন, একদেশ, একভোট’! ভারত মানেই বিজেপি, সে ভাবমূর্তিকে সারাদেশের ভোটারদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। তার সে স্বপ্ন যেমন অধরাই রয়ে গেল, তেমনি ‘একদেশ, একভোট’ও হালে পানি পায়নি সাধারণ ভোটারদের কাছে।

নরেন্দ্র মোদির ধারণা ছিল, ২০২৪ সালের ভারতের লোকসভার নির্বাচনে ৪শ’য়ের বেশি আসন পাবে বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। লোকসভা নির্বাচনি প্রচারণাভিযানে নেমে নরেন্দ্র মোদি সবসময় স্লোগান ব্যবহার করেছেন, ‘আবকি বার, ৪০০ পার’ (এবার ৪শ পার)। তারমানে একথা বলে ভোটারদের বিজেপির দিকে টানতে চেষ্টা করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও তিনি আরেকটি স্লোগানকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। সেটি হলো ‘একদেশ এক ভোট’! সেটিও যে হালে পানি পায়নি, তা তো প্রকাশিত ফলাফলেই দেখা গেছে।

বিজেপির জয়ের মূল এলাকা ‘হিন্দি বলয়’। সেখানেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি দলটি। হিন্দি বলয়ের মূল ঘাঁটি হচ্ছে উত্তর প্রদেশ। সেখানে লোকসভার আসন ৮০টি। সেখানেও ধাক্কা খেয়েছে এনডিএ জোট এবং বিজেপি।

বিজ্ঞাপন

সেখানে ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ৪৩টি আসন। এনডিএ জোট ৩৬টি এবং অন্যান্য একটি আসনে বিজয়ী হয়েছে। বাস্তবে যে ভোটাররা তাদের কথায় আস্থা রাখেননি তার প্রমাণ ৪ জুনের ফলাফল ঘোষণা।

'আবকি বার, ৪০০ পার' অধরাই থেকে গেল নরেন্দ্র মোদির কাছে, ছবি- সংগৃহীত 

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ২শ ৪০টি আসন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে পেয়েছিল ৩শ ৩টি আসন।

২০১৯ সালে তুলনায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আরো ৬৩টি কম পেয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন করে বলেছিলেন, ‘অতীতে নিশ্চয়ই আমাদের কিছু খামতি ছিল। তাই রামমন্দির হয়নি। আজ সেই খামতি দূর হয়েছে বলে রাম মন্দির হয়েছে’। এটা রাষ্ট্রচেতনার মন্দির। তিনি বলেন, ‘এখনই সঠিক সময়, ভারতে হতাশার কোনো স্থান নেই। রামই হলেন ভারতের ভিত্তি, ভারতের আস্থা’।

রাম মন্দিরকে মোদি একটি ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। শুধু মন্দির নির্মাণেই বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮শ কোটি টাকা।

এত অর্থ খরচ এবং মন্দির নির্মাণ কোনোভাবেই ভোটারদের মনে আস্থার ভিত গড়তে পারেননি মোদি। তার স্বপ্ন ছিল, লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে ৪শ’য়ের বেশি আসন পাবে। সেটি তো হলোই না বরং সরকার গঠনের জন্য অন্যান্য শরিক দলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে মোদিকে।

শুধু তাই নয়, দলের হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ বলেছিলেন, রায়বেরিলি ও আমেথিতে বিজেপিকে জিতিয়ে দিন, তাহলে এমনিতেই ৪শ’ আসন পার হয়ে যাবে বিজেপির। সেটিও হয়নি। সেখানেও জিতেছে জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রার্থী। সে কারণে একটা ক্ষত নিয়েই জোট সরকারের দিকেই ঝুঁকতে হচ্ছে, বিজেপিকে। এটা বিজেপির একক দলের ভেতরেই প্রশ্ন উঠতে পারে, ‘আবকি বার ৪০০ পার’ হলো না কেন, আত্মমূল্যায়ন কী বলে!

উল্লেখ্য, ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) পেয়েছে মোট ২শ ৯৩টি আসন।জোটের মূল দল বিজেপি পেয়েছে ২শ ৪০টি আসন।

সেইসঙ্গে জাতীয় কংগ্রেস (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস) নেতৃত্বাধীন জোট ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) পেয়েছে ২শ ৩৪টি আসন। জোটের মূল দল জাতীয় কংগ্রেস দল এককভাবে পেয়েছে ৯৯টি আসন।

তৃতীয়বারের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এনডিএ জোট। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে, অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টি এন চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের জেডি (ইউ)-এর নীতিশকুমার ওপর।

জানা গেছে, বুধবার তারা দু’জন দিল্লি রওয়ানা হয়ে গেছেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা করতে। তারা বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী বিষয়গুলি নির্ধারণ করবেন। ইতোমধ্যে, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, পরবর্তী সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে।