ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব পড়বে তরুণ দৃষ্টিভঙ্গির

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা

ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা

২০২২ সালে হিজাব না পরায় গ্রেফতারের পর মৃত্যু হয় মাহসা আমিনির। এরপর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইরানে। সে বিক্ষোভে দেখা যায় মতাদর্শের দিক থেকে তরুণ দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা। দেশটির বর্তমান সাড়ে ৮ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই তরুণ হওয়ায় তাই এবারের নির্বাচনের মূল প্রভাবক তারাই। 

ইরানের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তরুণ ভোটারই নিয়ামক হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইরানের সাম্প্রতিক ইতিহাস তরুণদের রক্ষণশীলতা এবং সংস্কারবাদ দুই ভাগে ভাগ করেছে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের সাথে কথা বলেন ২০২২ সালের হিজাব বিরোধী আন্দোলনে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী আতুসা। নিরাপত্তার কারণে পুরো নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

২২ বছর বয়সী আতুসা ইরানের শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন। তবে, সে বিক্ষোভ দমনেই যোগ দিয়েছিলেন বর্তমান সরকারের অনুগত আরেক তরুণ রেজা। দুই তরুণ ইরানির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগত দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। আর সেটিই এবার প্রভাব রাখতে পারে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও, বদলে দিতে পারে ফলাফল।

বিজ্ঞাপন

আগামী শুক্রবার (২৮ জুন) ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আতুসা এ নির্বাচনকে সার্কাস হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ইব্রাহিম রাইসির উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার জন্য শুক্রবারের ব্যালটে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন তিনি।

কিন্তু রেজা কট্টরপন্থী হওয়ায় তিনি ভোট দিতে চান, এবং ভোট দেওয়াকে ধর্মীয় দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি। ফলে নির্বাচনে বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্যণীয়। যা ৪৫ বছরের ইতিহাসে দেশটি আবারও একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের দ্বারপ্রান্তে।

আতুসা বলেন, ‘ইরানের সব নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও একটি সার্কাস। আমি যখন শাসনের পতন চাই, তখন কেন আমি ভোট দেব? এমনকি যদি এটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনও হয় এবং যদি সমস্ত প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তারপরও ভোট দিব না, কারণ আমি জানি ইরানের প্রেসিডেন্টের কোন ক্ষমতা নেই।’

গত কয়েক সপ্তাহে ইরানিরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ হ্যাশট্যাগ ‘ইলেকশন সাকার্স’ ব্যাপকভাবে পোস্ট করেছে। দেশে এবং বিদেশে কিছু ইরানি নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।

ইরানের রাজনৈতিক ধারায় দেশের সর্বোচ্চ নেতা হলেন সুপ্রিম লিডার, যে পদে এখন আছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। আর ইরানের প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাবলে দ্বিতীয়। তবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কট্টরপন্থী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে।

২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে আটক করে দেশটির পুলিশ। ঠিকমতো হিজাব না পরায় মাহসাকে গ্রেফতারের পর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইরানে। বিক্ষোভে অনেকেই হিজাব না পড়ে অংশ নেন।

সেই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অপরাধে আটক হোন আতুসা এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হোন। ইরানের সরকার বিরোধীদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির তৎতকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ওই হিজাব বিরোধী আন্দোলনে দমনে পুলিশি হামলায় ৫ শতাধিক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়।

আতুসা বলেন, ‘আমি আশাবাদী ছিলাম, আমি ভেবেছিলাম অবশেষে পরিবর্তন আসবে এবং আমি একটি স্বাধীন দেশে কোনো দমন-পীড়ন ছাড়াই জীবনযাপন করতে পারব। আমি চরম মূল্য দিয়েছি, কিন্তু শাসন এখনও সে অবস্থায় আছে।’

উল্লেখ্য, ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যাদের মধ্যে ৫ জনই রয়েছেন কট্টরপন্থী। একজন রয়েছেন স্বল্প-মধ্যপন্থী, তবে তিনিও কট্টরপন্থী সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাড়ে ৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৬০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের কম। ফলে, সকল প্রার্থীই সোশ্যাল মিডিয়ায়, বক্তৃতায় এবং প্রচারে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।