উইকিলিকিসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের মুক্তির নেপথ্যে

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত, অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় পৌঁছানোর পর স্ত্রী স্টেলার সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

ছবি: সংগৃহীত, অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় পৌঁছানোর পর স্ত্রী স্টেলার সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

অনেক বছর কারাগারে কাটানোর পর উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্তির সুবাতাস পেয়েছেন। কূটনৈতিক তৎপরতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আইনি সম্মতি সহায়তা করেছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মুক্তি পেতে।

এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লবিং এবং মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে দোষ স্বীকার করার পর মুক্তি মেলে অ্যাসাঞ্জের। এতে অবশ্য সম্মতি মেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের।

বিজ্ঞাপন

এরপর সোমবার একটি প্রাইভেট জেট প্লেনে করে লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ সাইপানে পৌঁছে একটি আদালতে হাজিরা দেন। সেখান থেকে তাকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

এতে করে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারবেন। তাকে আর সে দেশে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না।

বুধবার বিকেলে উইকিলিকিসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা আসেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান, তার স্ত্রী স্টেলা।

বিবিসি ও অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসি অনলাইন সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) এক বিবৃতি জানায়, গত মার্চ মাসে অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে চুক্তিটি তাদের নজরে আসে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মার্কিন আদালতে হাজির হবেন, সেখানে তিনি তার অপরাধ স্বীকার করবেন। এরপর তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে কারাগারে অ্যাসাঞ্জ যে সাজা ভোগ করেছেন, তাতে নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সাজা ভোগ করতে হবে না।

কূটনৈতিক, রাজনৈতিক লবিং এবং আইনি সম্মতির নেপথ্যে
২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়। তিনি তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অ্যান্থনি আলবানিজ নিজে থেকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, উইকিলিকিসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মার্কিন সামরিক বাহিনীর একান্ত গোপনীয় তথ্য ফাঁস করাকে তিনি সমর্থন করেন না। তবে তিনি চান, অ্যাসাঞ্জ মুক্তিলাভ করুক।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সংসদের একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তারা মার্কিন কংগ্রসে অ্যান্থনি আলবানিজের হয়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে লবিং করেন। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা।

এছাড়া এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এরপর বিষয়টি ভোটাভুটিতে সর্বসম্মতভাবে অ্যাসাঞ্জের মু্ক্তির জন্য যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বানকে জোরালোভাবে সমর্থন জানানো হয়।

লবিংয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতের প্রভাব

অস্ট্রেলিয়ার সংসদে অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়ে সম্মতি আলোচনায় গতি পায়। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্যারোলিন কেনেডির সঙ্গে যোগাযোগ অস্ট্রেলিয়া সরকার।

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির পর তার আগমণকে যেভাবে সমর্থকেরা স্বাগত জানান, ছবি- সংগৃহীত

এছাড়া ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন স্মিথ যুক্তরাজ্যে হাইকমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়টিকে অনেকটা ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর এপ্রিল মাসে তিনি যু্ক্তরাজ্যে বেলমার্শ কারাগারে গিয়ে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করেন। তারপর থেকেই অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়টি দ্রুত পরিণতির দিকে আগাতে থাকে।

অবশেষে মুক্তি এবং মার্কিন আদালতে অ্যাসাঞ্জের হাজিরা

অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ছবি- সংগৃহীত

বেলমার্শ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই সোমবার একটি প্রাইভেট জেটে করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ সাইপানের একটি আদালতে হাজির হন তিনি।
সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে ফের বুধবার অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাতে ফেরেন তিনি। সেখানে ফিরে পরিবারের সদস্যদের মিলিত হন অ্যাসাঞ্জ।