বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বে কংগ্রেস এমপিদের বিক্ষোভ
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ করেছেন কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পার্লামেন্ট ভবন চত্বরে তারা এই বিক্ষোভ করেন।
বিজ্ঞাপন
আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন খবরে বলা হয়, গতকাল সোমবার প্রিয়াঙ্কা পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকেছিলেন ফিলিস্তিনের সমর্থন লেখা ঝোলাব্যাগ নিয়ে।আজ বিক্ষোভের সময় প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা লেখা ছিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে। ঘিয়ে রঙের একটি ব্যাগ। তাতে উপরে লেখা, ‘বাংলাদেশ’। তার নীচে লেখা, ‘হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের পাশে দাঁড়ান।’
বিক্ষোভ সমাবেশে সুবিচার চেয়ে নানা ধরনের স্লোগানও দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জবাবদিহি করতে বলা হয়। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকার কেন নীরব, তা জানতে চাওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বক্তৃতার সময়েও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রকে পদক্ষেপের জন্য চাপ দেন তিনি। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রকে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনারও প্রস্তাব দেন তিনি।
মস্কোতে বোমা হামলায় রাশিয়ার পারমাণবিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলভকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ২৯ বছর বয়সী উজবেকিস্তানের এক নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থার বরাতে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী উজবেক যুবক ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। ইগর কিরিলভকে হত্যার বিনিময়ে ১ লাখ ডলার এবং ইউরোপে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী ইগর কিরিলভকে হত্যার পিছনে রয়েছে।
ইউক্রেনের একটি সূত্র জানিয়েছে, কিরিলভ যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার কারণে তিনি ‘ন্যায্য লক্ষ্যবস্তু’ ছিলেন। হামলার একদিন আগে ইউক্রেনে তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়।
এফএসবি জানায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি মস্কোতে এসে হাতে তৈরি একটি বিস্ফোরক ডিভাইস স্কুটারের মধ্যে স্থাপন করে। তিনি একটি গাড়ি ভাড়া করে কিরিলভের বাসস্থান পর্যবেক্ষণ করেন এবং ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে ইউক্রেনের দনিপ্রো শহরে তার পরিচালকদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। কিরিলভ যখন বাড়ি থেকে বের হন, তখন তিনি বিস্ফোরকটি বিস্ফোরিত করেন।
৫৪ বছর বয়সী কিরিলভ রাশিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তার নেতৃত্বে রাশিয়া ৪,৮০০ বারেরও বেশি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা ২০১৭ সালেই তাদের রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার থেকে ১৭ বছর পর মুক্তি পেয়েছেন আরও এক বন্দি। তার নাম মোহাম্মদ আবদুল মালিক বাজাবু। তিনি কেনিয়ার নাগরিক।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদন মতে, গতকাল মঙ্গলবার পেন্টাগন আবদুল মালিক বাজাবুর মুক্তি ঘোষণা দেয়। বলা হয়েছে, গত মাসে বাজাবুর কেনিয়ায় প্রত্যাবাসনের বিষয়টি প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মার্কিন কংগ্রেসকে অবহিত করেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৭ সালে কেনিয়ার মোম্বাসায় আবদুল মালিক বাজাবুকে গ্রেফতার করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মূলত আল কায়েদার পূর্ব আফ্রিকার শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়। কয়েক সপ্তাহ পর তাকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি পর্যালোচনা পরিষদ পিরিয়ডিক রিভিউ বোর্ড ২০২১ সালে তাদের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে জানায়, আবদুল মালিক বাজাবু আর ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি নন’। এরপর তার মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আবদুল মালিক বাজাবুর মুক্তিপ্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল ‘রিপ্রাইভ ইউএস’ নামের একটি সংগঠন। বাজাবুর মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে তারা।
আবদুল মালিক বাজাবুকে সহায়তা দেওয়া একজন আইনজীবী এক বিবৃতিতে বলেন, নিরীহ একজন ব্যক্তিকে তার জীবনের সেরা সময়টায় বন্দী রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমন একটা সময়ে তাকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল, যখন তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। তাকে এভাবে বন্দি রাখায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কখনই পূরণ করা যাবে না। তবে মার্কিন সরকার অন্তত যেটা করতে পারে, সেটা হল আবদুল মালিক যাতে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সুযোগ করে দেয়া।
তথাকথিত নাইন-ইলেভেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ২০০২ সালে গুয়ানতানামো বে কারাগার চালু করা হয়। কিউবার কাছে মার্কিন এক সামরিক ঘাঁটিতে এই কারাগার অবস্থিত।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত আদালতে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে, সেখানে সেগুলো নেই। এ কারাগারে বন্দীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করা হয় বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। আর এতেই কারাগারটির কুখ্যাতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় এই কারাগারে ৮০০ বন্দী ছিলেন। পেন্টাগনের হালনাগাদ তথ্য, এখন গুয়ানতানামো বে কারাগারে ২৯ জন বন্দী আছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থানান্তর করার মতো উপযুক্ত পর্যায়ে রয়েছেন।
বন্দিদের সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয়। এই কার্যক্রমের অনুমোদন করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধ করার ঘোষণা দেন। তবে তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে কারাগারটি চলমান রাখার আদেশ জারি করেন।
আদেশে বলা হয়, 'জাতির সুরক্ষার জন্য আইনানুগ এবং প্রয়োজনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত বন্দীদের ইউএস নেভাল স্টেশন গুয়ানতানামো বেতে নিয়ে যেতে পারে।'
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তার জমানায় তিনি ‘টিট ফর ট্যাট’ নীতিতেই গুরুত্ব দেবেন বেশি। অর্থাৎ যে দেশ আমেরিকার সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখবে, সেই দেশের সঙ্গে তেমনই ব্যবহার করা হবে। সেই বিষয়ে ভারতের শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তার কথায়, যদি তারা (ভারত) আমাদের কর দিতে বলে, তবে আমরাও তাদের থেকে একই পরিমাণ কর নেব।
ভারতের বাজারে আমেরিকার বেশ কিছু পণ্যের জন্য ১০০ শতাংশ কর ধার্য রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, পারস্পরিক শব্দটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যদি আমাদের থেকে ১০০ শতাংশ কর নেয়, আমরা কি তাদের কাছ থেকে কিছুই নেব না? এটা ভাবা ভুল।
শুধু ভারত নয়, একই বন্ধনীতে ব্রাজিলের মতো দেশকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তার কথায়, ভারত, ব্রাজিল আমাদের থেকে অনেক বেশি কর নেয়। আমরা এ বার তাদের থেকেও একই জিনিসের ওপর একই পরিমাণ কর নেব। তার জমানায় বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি যে আরও কড়াকড়ি হতে চলেছে, তার আভাসই দিলেন ট্রাম্প।
উল্লেখ্য, বাণিজ্য সম্পর্কে শুল্ক নিয়ে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে মতবিরোধ দীর্ঘদিনের। এ বার বাণিজ্য নীতি নিয়ে আমেরিকা প্রশাসন আরও কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে তারই ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প।
আমেরিকার অভিবাসন নীতি নিয়ে ইতোমধ্যেই সুর চড়িয়েছেন ট্রাম্প। ভোটের প্রচারে বার বার কড়া অভিবাসন নীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তৎপর ট্রাম্প। এর ফলে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় সমস্যার মুখে পড়তে চলেছেন।
আমেরিকার অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর ইতোমধ্যেই প্রায় ১৫ লাখ অবৈধ অভিবাসীর তালিকা তৈরি করে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর সেই ‘প্রথম দফার তালিকা’য় রয়েছেন ১৭ হাজার ৯৪০ জন ভারতীয় নাগরিক। আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
গাজা উপক্যতায় চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দেওয়া কমাতে বা অভিযুক্ত ইউনিটগুলোর সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পাঁচজন ফিলিস্তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) এই মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী পাঁচ ফিলিস্তিনি মামলাটি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গত শতকের ৯০-এর দশকের ‘লেহি আইন’–এর আওতায় মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, লেহি আইন পররাষ্ট্র দফতর চাইলে প্রয়োগ করতে পারত, কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নজিরবিহীনভাবে ইসরায়েলের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন যেভাবে বেড়েছে, তা ভয়ংকর।
ইসরায়েল গত বছরের অক্টোবরের শুরু থেকে গাজায় বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযান পরিচালনা করছে। এ কারণে ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ ও বিশ্বের প্রধান মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ নানা ধরনের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।
গাজায় বসবাসকারী পেশায় শিক্ষক পরিচয়দানকারী মামলার একজন বাদীর ছদ্মনাম আমাল গাজা। এই নারী এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি এখন পর্যন্ত সাতবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় তার পরিবারের ২০ সদস্য নিহত হয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমার দুঃখ-কষ্ট ও আমার পরিবারের অকল্পনীয় ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ইসরায়েলের ইউনিটগুলোর কাছে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে।
মামলার বিষয়ে জানতে আল–জাজিরার তরফে যোগাযোগ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, বিচারাধীন মামলা নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করে না।