থাইল্যান্ডে মুসলিমদের হাই উৎসব



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ব্যাংকক; থাইল্যান্ড থেকে
ছবি. বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি. বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

থাইল্যান্ডে দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মাবলম্বী মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশেরও বেশি। যা সংখ্যায় ৬০ লক্ষের উপরে। থাইল্যান্ডে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতিকে বড় বিষয় হিসেবে ধরা হয়। নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি নির্বিঘ্ন পালনে দেশটি সহায়ক।

দক্ষিণ থাইল্যান্ড অর্থাৎ মালয়েশিয়া সীমান্তেই বেশিরভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস। মোট মুসলিমদের অর্ধেকই বাস করে—নারাথিওয়াত, ইয়ালা, সাথুন, পাত্তানি এবং সোংখালা প্রদেশের কিছু জেলায়। এছাড়া উত্তর থাইল্যান্ডেও রয়েছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563293611565.jpg
হাই উৎসবে হামদ-নাত প্রতিযোগিতা ◢

 

গত শুক্রবার (১২ জুলাই) ব্যাংককের স্পোর্টস একাডেমি মাঠে থাই মুসলিমদের নিজস্ব মিলনমেলা ‘হাই উৎসব’-এর আয়োজন করা হয়। এ মেলায় স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠী নিজেদের সংস্কৃতি, ফ্যাশন ও খাদ্যাভ্যাসের রীতি তুলে ধরে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী থাইরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুসলিমদের এই উৎসবে অংশ নেয়।হাই উৎসবে বড় প্যান্ডেলের নিচে মূল মঞ্চে বিকেল থেকেই স্কুল পর্যায়ের হামদ-নাত প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই পর্যায়ে দর্শক শ্রোতা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে সন্ধ্যার পর সাংস্কৃতিক পর্বে হয়তো মানুষের ভিড় হবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563294341183.jpg
রাজামানগালা এলাকাতেই বেশিরভাগ মুসলিমদের বাস ◢

 

এখানে যে কোনো নাইট মার্কেট বা উৎসবস্থলের নির্দিষ্ট একটি অংশে থাকে খাবারের দোকান। হাই উৎসবেও ব্যতিক্রম নয়৷ ছোট বড় প্রায় ৬০টির মতো খাবারের দোকান রয়েছে মেলায়। দোকানগুলোতে গরুর কাবাব থেকে শুরু করে রয়েছে ছাগলের মাংস বা দুধ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563294469719.jpg
উৎসবস্থলের নির্দিষ্ট একটি অংশে থাকে খাবারের দোকান ◢

 

এখানকার হালাল খাবার খেতে মুসলিমরা তো বটেই, ভিড় করে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের মুসলিম জনগোষ্ঠীর খাবার আইটেমগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই মালয় খাবারের স্বাদ ও রঙের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563293755759.jpg
ব্যাংককে অবস্থানরত মুসলিমদের মিলনস্থল এই উৎসব ◢

 

জনসংখ্যার ৫ শতাংশ হলেও ইসলামী ব্যাংকিং এখানকার ব্যাংকিং ব্যবস্থার অন্যতম একটি দিক। হাই উৎসবেও রয়েছে ইসলামিক ইন্সুরেন্স, হালাল ফুড ইন্ড্রাস্টিজসহ আরো অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্টল৷ থাইল্যান্ডের মুসলিমরাও অন্য শহরগুলোর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মতো একত্রে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এখানে রাজামানগালা এলাকাতেই বেশিরভাগ মুসলিমদের বাস। ব্যাংককের সবচেয়ে বড় মসজিদটিও রয়েছে এখানেই। এই মেলা শুধু কেনা বেচার জায়গাই নয়, ব্যাংককে অবস্থানরত মুসলিমদের সবচেয়ে বড় মিলনস্থলও এটি।

থাইল্যান্ডের বেশিরভাগ মুসলিমরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। তবে ধর্মীয় গোঁড়ামিও রয়েছে অনেকের মধ্যে। যেমন সরকারি বাধার পরেও বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতন হতে ইচ্ছুক নয় এখানকার অনেক মুসলিম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563293856809.jpg

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563294108139.jpg
বোরকার ফ্যাশনে পরিবর্তন এনেছে থাই মুসলিমরা ◢

 

মেলায় দুটি প্যান্ডেলের নিচে রয়েছে মুসলিমদের পরিধেয় কাপড়ের দোকান। মুসলিমদের মধ্যে শার্ট প্যান্টের পাশাপাশি জোব্বা পরিধানের রেওয়াজ রয়েছে৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়ার মুসলিমদের মতো বড় কুর্তার বদলে ধর্মীয় পোশাক বলতে জোব্বারই আধিক্য। আমাদের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ান ঘরানার পাঞ্জাবি এই উৎসবে খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ রয়েছে মেয়েদের বোরকার দোকান। বোরকার ফ্যাশনে যে কত ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব সেটা থাইল্যান্ডের এই বোরকার দোকানগুলো না দেখলে বোঝা যাবে না। আবার একরঙা সাদা বা কালো বোরকার দামও অনেক। কারণ এগুলোতে বসানো রয়েছে ঝকঝকে পাথর। দাম ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/16/1563294262086.jpg
মুসলিমদের উৎসবে বক্তব্য রাখছেন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু ◢

 

আরেকটি স্টলে চলছে একটি কর্মশালা। যেখানে একজন মুসলিম পুরুষ কয়েকজন নারীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কিভাবে একটি ওড়নাকে ব্যাগ এবং হরেক রকমের পাগড়ি বা স্কার্ফের মতো ব্যবহার করা যায়।

সন্ধ্যা হলে মূল মঞ্চে অতিথিরা আসতে থাকেন। সেখানে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুও বক্তব্য রাখছিলেন। থাই ভাষায় বললেও তার উপস্থাপনায় একটি ভিডিওতে ছিল ইংরেজি সাবটাইটেল। আর উপস্থাপনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘প্রদান করাই মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।’

   

গাজায় সাহায্য কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে সমর্থন রাশিয়ার



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজা উপত্যকায় সকল সাহায্য কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া।

এ তথ্য রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া।

কেবলমাত্র রাফাহ শহরের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে নেবেনজিয়া বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বিধানগুলো কঠোরভাবে মেনে চলার দাবি জানাই এবং ওই এলাকায় কর্মরত জাতিসংঘের এবং সাহায্য কর্মীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় এগিয়ে আসা সকল সাহায্য কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার আন্তর্জাতিক ও স্বাধীন তদন্তের মহাসচিবের আহ্বানকে সমর্থন করি।’

ওই কূটনীতিক বলেন, ‘এই ছিটমহলে মানবিক সহায়তা প্রবেশের কোনো স্থিতিশীল চ্যানেল নেই। গত দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী রাফাহ এবং কেরেম শালোম চেকপয়েন্ট দিয়ে ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সাহায্য নিয়ে আসা ৩ হাজার ট্রাকের প্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণ এবং মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি আবারো ছিটমহলে ফিলিস্তিনিদের সাতটি গণকবর আবিষ্কারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছি। এই ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তাদের এক বিবৃতিতে এমন তদন্তের দাবি করেছিল।’

;

নাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৪০



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উত্তর-মধ্য নাইজেরিয়ার খনি শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়ে প্রায় ৪০ জনকে হত্যা করেছে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।

নাইজেরিয়ার স্থানীয় সরকার মঙ্গলবার (২১ মে) জানিয়েছে, মোটরসাইকেলে চড়ে আসা বন্দুকধারীরা খনি শ্রমিকদের এলাকার বাসিন্দাদের উপর গুলি চালায় এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়।

প্লেটিউ রাজ্যের ওয়াসে জেলায় সোমবার (২০ মে) এই হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই সম্পদ নিয়ে বিরোধ এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য আলোচনায় রয়েছে।

প্লেটিউ রাজ্যের তথ্য কমিশনার মুসা ইব্রাহিম আশোমস টেলিফোনে এএফপিকে বলেছেন, ‘সশস্ত্র ব্যক্তিরা জুরাক সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করেছে। বন্দুকধারীরা বিক্ষিপ্তভাবে গুলি করেছে এবং বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তবে স্থানীয় যুবনেতা শাফি সাম্বোও বলেন, ‘হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছে।’

ওয়েসে জিঙ্ক এবং সীসার খনি রয়েছে এবং এই প্লেটিউ রাজ্য টিনের খনি শিল্পের জন্য সুপরিচিত।

প্রসঙ্গত, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-মধ্য নাইজেরিয়ার অংশগুলোতে সশস্ত্র অপরাধী চক্র রয়েছে, যারা মুক্তিপণের জন্য ব্যাপক অপহরণ এবং লুটপাট করার জন্য গ্রামগুলোতে হামলা চালায়।

গত জানুয়ারিতে প্লেটিউ রাজ্যের মাঙ্গু শহরে মুসলিম এবং ক্রিস্টানদের মধ্যে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়। যার ফলে অনেক গির্জা ও মসজিদ পুড়ে যায়। ওই সংঘর্ষে ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

;

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।

কাতারের আল জাজিরা টিভির খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূ-খন্ডের উত্তরে জাবালিয়া এবং বেইত লাহিয়া শহরে বিমান হামলায় কমপক্ষে ২১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেক।

আল জাজিরা আরও জানিয়েছে, গাজা শহরের আবাসিক ভবনগুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণে ১২ বেসামরিক লোক মারা গেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

জেরুজালেমের ওল্ড সিটির টেম্পল মাউন্টে আল-আকসা মসজিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের আগ্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় হামাস সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস।

এরপর প্রতিশোধ মূলক হামলা শুরু ইসরায়েল। গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধ করে ভয়াবহ বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে তারা।

এতে পুরো গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। চলমান যুদ্ধে ৩৫ হাজারের বেশী নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশীর ভাগই নারী ও শিশু।

;

অবিশ্বাস্য বদলে বিশ্বসেরার পথে এয়ার ইন্ডিয়া



ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক দশক ধরে কম বিনিয়োগের পর ভারতের বেসরকারিকরণ করা ৯২ বছরের পতাকাবাহী এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের গড় বয়স ৫৪ বছর। এয়ারলাইন্সের ইমেইল সিস্টেম এত পুরাতন ছিল যে কর্মীরা জিমেইল ব্যবহার করতে শুরু করেন। এটিই এয়ার ইন্ডিয়া।

অথচ ৭০’র দশকে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা শাসক লি কুয়ান ইউ এয়ার ইন্ডিয়ার সেবা দেখে বলেছিলেন, তিনি তার দেশে এই ধরনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা করতে চান। সেই সেবার মান নিয়ে সেরার তালিকায় থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার মান কমে ক্ষয়িঞ্চু হতে হতে একটি রুগ্ন এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়। হাজার হাজার কোটি রুপির লোকসান নিয়ে পরবর্তীতে লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেয় ভারতীয় সরকার। ২০২১ সালের অক্টোবরে তা কিনে নেয় টাটা গ্রুপ। সম্পদশালী টাটা পরিবার পুনরায় এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টাটার চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরন স্পষ্ট করে বলেন, আমাদের লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বসেরা এয়ারলাইন্স হিসেবে গড়ে তোলা।

এরপর টাটা এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও নিয়োগ দেয় ক্যাম্পবেল উইলসনকে। এখানে যোগদানের আগে ক্যাম্পবেল সিঙ্গাপুরের লো-কস্ট এয়ারলাইন স্কটে কাজ করেছেন। ৫ বছরের টার্ন অ্য্যারাউন্ড প্রকল্পের অধীনে এয়ার ইন্ডিয়ার সেই হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৪৭০টি নতুন উড়োজাহাজ অর্ডার করেছে। নতুন করে ৫ হাজার কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের গড় বয়স ৫৪ থেকে ৩৫ এ নামিয়ে আনা হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়াকে ঢেলে সাজাতে গত কয়েক বছরে টাটা গ্রুপ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে ৪৭০টি নতুন উড়োজাহাজের কেনার অর্ডার ছাড়াও কেবিন আধুনিকায়ন, যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন করা হয়েছে।

৫ বছরের পরিকল্পনায় এয়ার ইন্ডিয়া দেশের অভ্যন্তরীণ মার্কেটে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির আশা করছে, যেখানে বছরে প্রায় ১৪৫ মিলিয়ন যাত্রী রয়েছে। টাটার প্রাথমিক অগ্রাধিকার হচ্ছে তাদের পুরাতন উড়োজাহাজগুলোকে বহর থেকে বিদায় করা। কারণ কয়েক দশক ধরে এসব উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ উপেক্ষিত ছিল। মালিকানা নেওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া লিজের মাধ্যমে ৩৬টি উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করে, এর মধ্যে ১১টি বোয়িং ৭৭৭ ও ২৫টি এয়ারবাস এ৩২০ ছিল। এসব উড়োজাহাজের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সটি নতুন ৬টি নতুন আন্তর্জাতিক রুট চালু করে। এছাড়া ২৪টি রুটে ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
এয়ার ইন্ডিয়া সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করেছে উড়োজাহজা কিনতে। ৪৭০টি উড়োজাহাজের জন্য এয়ারলাইন্সটি ৭০বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। এসব উড়োজাহাজের মধ্যে থাকছে এ৩২০নিওস ১৪০টি, এ৩২১নিওস ৭০টি এবং ১৯০টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাটার মতো এত বিশাল সম্পদশালী একটি কোম্পানি এটি কিনে নিয়েছে বলেই এত বিপুল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে এর ভবিষ্যৎ কি তা এখনই বলা কঠিন। তবে টাটা যেভাবে পরিকল্পনা মাফিক বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে এগিয়ে যাচ্ছে তার কোনো বিকল্প ছিল না। ডুবন্ত এই এয়ারলাইন্সকে টেনে তুলতে এটিই সেরা বিনিয়োগ।

এয়ার ইন্ডিয়ার সাবেক নির্বাহী পরিচালক জিতেন্দার ভার্গব বলছেন, টাটা এয়ার ইন্ডিয়া কেনার পর সত্যিকার অর্থে এর লক্ষ্যণীয় উন্নতি চোখে পড়বে ২০২৭ সালে। আর সত্যি বলতে এটি টি২০ ক্রিকেট নয়। ব্র্যান্ড ইমেজ পুনরুদ্ধার, প্রযুক্তি, সেবা এবং নতুন উড়োজাহাজ অধিগ্রহণ করতে সময় লাগবে।

হার্দি প্যাটেল নামে আরেক ট্রাভেল কিউরেটর বলছেন, ঋণ জর্জরিত, লোকসানি একটি এয়ারলাইন্সকে টেনে তুলতে সময় দিতে হবে। আর টাটা সমালোচনা ও কর্মীদের অস্থিরতা সত্বেও তাদের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও বলেন, অধিগ্রহণের মাধ্যমে এয়ার ইন্ডিয়া ৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী দক্ষ উড়োজাহাজ পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এয়ারলাইন্সটি কেবিনের অভ্যন্তরীণ সংস্কার করে বিদ্যমান বহরের শ্রীবৃদ্ধি করতে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। অনবোর্ড পরিষেবাও উন্নত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটে প্রিমিয়াম ইকোনমি আসন চালু এবং নতুন ফুড মেনু প্রবর্তন।

এয়ার ইন্ডিয়ার লক্ষ্যমাত্রা

ভারতই একমাত্র দেশ যাদের জনসংখ্যা আগামীতে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। আর এদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে। যে কারণে উচ্চবিত্তই শুধু নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণির আকাশপথে ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে। গেল দশকে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স এই চাহিদার সদ্ব্যব্যবহার করে দেশের বৃহৎ এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক গন্তব্যেও তারা ভালো করছে। যখন টাটা এয়ার ইন্ডিয়াকে কিনে নেয় তখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের মার্কেট ২৫ শতাংশ মাত্র।

এরই মধ্যে টাটা শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে প্রযুক্তি খাতে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এয়ারবাস এ৩৫০-৯০০ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-মুম্বাই রুটে নতুন করে সূচি তৈরি করছে। একই সাথে ভিস্তারাকে এয়ার ইন্ডিয়ার সাথে একত্রীকরণ আরেকটি মাইলফলক হবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফলে এয়ার ইন্ডিয়া সত্যিকার অর্থে ওয়ার্ল্ড ক্লাস এয়ারলাইনে পরিণত হবে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার লক্ষ্য ৩০ শতাংশ মার্কেট দখল করার (অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক)।

এয়ার ইন্ডিয়া প্রতি ৬ দিনে একটি করে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হচ্ছে বহরে। সুতরাং এটি দেখেই যে কেউ বুঝতে পারবেন কত দ্রুততার সাথে এয়ারলাইন্সটির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের নতুন হাব নইডা বিমানবন্দর

ভারত যে শুধু বিশ্বমানের এয়ারলাইন্সের দিকে নজর দিচ্ছে তা-ই নয়। এর সাথে তাল মেলাতে প্রয়োজন বিশ্বমানের বিমানবন্দর। আর সেই লক্ষ্যে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিকল্প আরেকটি হাব তৈরি করা হচ্ছে। নইডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর থেকে তিন গুণের বেশি যাত্রী পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরের বিকল্প হিসেবে আভির্ভূত হবে। এটি উত্তর প্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগর জেলায় অবস্থিত। এটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে তৈরি হচ্ছে। ২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিমানবন্দরের পরিচালনায় যুক্ত ফ্লুগফেন নইডা নির্মাণের কাজ জিতে নেয়। তারা ৪০ বছর বিমানবন্দরটি পরিচালনা করবে। নতুন এই বিমানবন্দর নির্মাণ ও ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করতে ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ খরচ হচ্ছে।

বিমানবন্দরটিতে যেতে ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রিনফিল্ড হাইওয়ে নির্মাণ করছে। শুরুতে বিমানবন্দরে দুটি রানওয়ে হবে এবং এটি ৮টি রানওয়েতে উন্নীত করার মতো জায়গা রাখা হয়েছে। শুরুতে নইডাতে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে এবং তা ১২ কোটি যাত্রী সেবা পর্যন্ত উন্নীত করা হবে।

শঙ্কা যেখানে

তবে এতকিছুর পরেও এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। এতসব সুখবরের পরেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়াকে সফল করতে এসব বিনিয়োগ একটি ভিত্তি হিসেবে সাহায্য করবে, তবে এয়ারলাইন্সটি যাত্রীদের কাছে নির্ভরযোগ্য এবং সময়নিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হতে না পারলে পরিবর্তনগুলো খুব বেশি কাজে আসবে না। সর্বোপরি এয়ারলাইন্সটিকে অন টাইম ফ্লাইটের বিষয়ে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে, নতুবা একবার যদি যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন ও দুরূহ হবে।

;