মিয়ানমার অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের ট্রানজিটে পরিণত
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবৈধ বন্যপ্রাণীর ব্যবসায় মিয়ানমার একটি প্রধানতম ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমার বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের আটক করার বিষয়ে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি ছাড় দেয়। এ কারণে বন্যপ্রাণী নিয়ে তাদের জমজমাট বাণিজ্য চলে।
জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম সম্পর্কিত সংস্থা (ইউএনওডিসি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ইউএনওডিসি চলতি মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মিয়ানমারের কর্মকর্তারা প্যাঙ্গোলিন বা বনরুইয়ের ৩৪টি চালান জব্দ করেছেন। যার ওজন মোট ১ হাজার ২০০ কেজির সমান।
মিয়ানমারে হাতির চামড়ারও বিশাল অবৈধ বাণিজ্য রয়েছে। যা দেশটির শান স্টেটের মাইন লার এবং তাচিলিকের মতো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জনপ্রিয় বাজারগুলোতে বিক্রয়ের জন্য পাওয়া যায়।
মিয়ানমারের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টি উইলিয়ামস বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণেই মিয়ানমার অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের জন্য আদর্শ হয়ে উঠেছে।’
এ দেশে প্রচুর বন্যপ্রাণী, সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত বা সরকারি নিয়ন্ত্রণহীনতার জন্য এ ব্যবসা রমরমা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের মত প্রতিবেশী একটি দেশ যেখানে বন্যপ্রাণীর বিপুল চাহিদা রয়েছে।
মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করার জন্য বন্যহাতির দাঁত এবং অন্যান্য প্রাণীর ১.১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরেও ২৭৭ টি হাতির দাঁত, অন্যান্য প্রাণীর ২২৭টি হাড়, ৪৫টি পশুর চামড়া, ১ হাজার ৫৪৪টি শিং এবং ৪৪.৫ কেজি বনরুইয়ের খোসা এবং ১২৭ অন্যান্য অংশ ধ্বংস করা হয়েছিল।
চলতি বছরের মার্চে ইয়াঙ্গুনে ২১৯টি হাতির দাঁত, ২১০টি হাতির হাড়, ৫২৭টি বাঘের চামড়া এবং অন্যান্য প্রাণীর অংশ, বিভিন্ন ধরনের ৮০০ শিং, ১৩৪.৭ কেজি বনরুই খোসাসহ মোট ৭৬৬.১১ কেজি পণ্য পুড়িয়ে ফেলে।
ইয়াঙ্গুনে এক অনুষ্ঠানে প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মন্ত্রী ইউ ওন উইন বলেছেন, ‘আমরা অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার প্রতিরোধ ও ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এই প্রচেষ্টার সাফল্য নিশ্চিত করতে জনসাধারণকেও সহযোগিতা করা দরকার।
শক্তিশালী স্থানীয় চাহিদা এবং নির্ভরযোগ্য স্থানীয় বাজার থাকার কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম অবৈধ বন্যপ্রাণী লেনদেনের জন্য স্বর্গে পরিণত হয়েছে।
ব্রুনেই ও মালয়েশিয়া ছাড়া আসিয়ান অন্তুর্ভুক্ত ১০টি দেশের মধ্যে আটটি দেশে প্রকাশ্যে হাতির দাঁত বিক্রি হয়। এশিয়া এবং আফ্রিকাতে আইন প্রয়োগকারীরা প্রতি বছর ৫০০ কেজির মতো হাতির দাঁত জব্দ করে। এতেই বোঝা যায় কতগুলো হাতিকে হত্যা করা হয়ে থাকে।
তবে জব্দ করার চেয়ে অনেকগুণ চীনের মূল ভূখণ্ডে, হংকং, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন বা মালয়েশিয়ায় গোপনে বিক্রি করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতি বছর কয়েক হাজার হাজার হাতি অবৈধভাবে হত্যা করা হয়, রফতানির জন্য কয়েকশ টন হাতির দাঁত প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু মাত্র ১০ টন প্রতিবছর ধরা পড়ে।
গত দশ বছর ধরে অবৈধ বনরুইয়ে বাণিজ্য এতই বেড়েছে যে, ১০ লাখেরও বেশি এ প্রাণীকে হত্যা করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য উদ্বেগের আরেকটি নাম হল বাঘ। বাঘের চামড়া, পাশাপাশি অন্যান্য এশিয়ান বড় বিড়ালের চামড়াগুলি সাজসজ্জা এবং উপহারের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর চামড়া ছাড়া সম্পূর্ণ মাংস হাড় ব্যবাহার হয় যৌন উত্তেজনা বর্ধক ওষুধে। যদিও এ ওষুধের কোনোও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
অন্যদিকে বাতের ব্যা্থার ওষুধে এশিয়ার কালো ভাল্লুকের পিত্তথলি ব্যবহার করতে এ প্রাণীর সংখ্যা ৩০ বছরে ৩০ শতাংশ কমিয়ে এনেছে।
মজার বিষয় হল এ সকল অবৈধ প্রাণীর ভোক্তার ৯০ শতাংশই হল চীনের মূল ভুখণ্ডের। কিন্তু তারা এ পণ্য কিনতে ও ব্যবহার করতে টুরিস্ট সেজে আসেন হংকংয়ে।
ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং ক্রমবর্ধমান লাওস এবং মালয়েশিয়া প্রধান ট্রানজিট হাব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মূল ট্রানজিট পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং কম্বোডিয়া।