সেনাদের বাধায় মিয়ানমারে জাতিসংঘ নাগরিক অধিকার চুক্তি বাতিল



খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের জোটের বিরোধীতার কারণে দেশটির সংসদ আন্তর্জাতিক নাগরিক অধিকার চুক্তিতে (আইসিসিপিআর) যোগদানের প্রস্তাব বাতিল করেছে।

মিয়ানমারের সংসদের নিম্নসভা এ বিল বাতিল করেছে, কারণ এ কক্ষে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু এমপি কোটার ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে বহাল রয়েছেন। বিশেষত তাদের বিরোধিতায় এ বিলটি বাতিল হয়ে যায়।

মিয়ানমারের জান্তা আমলের সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর দখলে রয়েছে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ কারণে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হচ্ছে এনএলডিকে।

এনএলডির সদস্য এমপি ডাউ তান্দার ২০১৯ সালে ২১ মে অনুমোদনের জন্য এ চুক্তিটি নিম্ন সভায় জমা দিয়েছিলেন।

নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) এ প্রস্তাবটিতে ভোট দেওয়ার সময় সামরিক সংসদ সদস্য এবং তাদের মিত্ররা মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বলেছে, এ চুক্তিটি দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন করতে এবং এর সুরক্ষা বিপন্ন করতে পারে।

তারা এও বলেছে যে অনুমোদনের জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি, কারণ কোনও এনএলডি সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের পরিবর্তে নিম্ন কক্ষে এ চুক্তিটি জমা দিয়েছিলেন।

সামরিক এমপিরা বলছেন, ২০০৮ এর সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদনের প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে সংসদের মারফতে।
সে জন্য এটি আগে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে তা সংসদে উঠবে।

এ সম্পর্কে সামরিক এমপি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মায়ো হেত উইন বলেন, সংসদ যদি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই এ চুক্তিটি অনুমোদন করে, তবে এটি সরকারের দু’টি সমমানের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে।

আরেক সামরিক এমপি লেফটেন্যান্ট কর্নেল অং জিন মিন বলেন, এ চুক্তির বিধানগুলো আরও বিশ্লেষণ করা দরকার। কারণ এগুলো অত্যন্ত জটিল এবং এটি অনুমোদিত হলে মিয়ানমারকে অনেক বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।

এনএলডির সদস্য এমপি ডাউ তান্দার বলেন, আইসিসিপিআরে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে মানবাধিকার সুরক্ষিত ও প্রচার করে এমন একটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করব। আইসিসিপিআর স্বাক্ষর করা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করে এবং দেশকে আন্তর্জাতিক আস্থা ও স্বীকৃতি দেবে।

এনএলডির আরেক বিধায়ক ইউ লুইন কো লাত বলেন, আমি আইসিসিপিআরে স্বাক্ষরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। কারণ এটি রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা করবে। একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্যক্তি অধিকার রক্ষা করার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পারি যে আমরা আমাদের জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি।

বিরোধী ইউনিয়ন সংহতি ও উন্নয়ন দলের সদস্য ইউ মাং মাইন্ত এনএলডি আইন প্রণেতাদের এ চুক্তি স্বাক্ষরের তাৎপর্য পুরোপুরি বোঝাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে এ কক্ষের বেশির ভাগ সংসদ সদস্য (এমপি) প্রস্তাব জমা দেওয়ার আগে আইসিসিপিআর সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।

তিনি উল্লেখ করেন, ১৭২টি দেশ আইসিসিপিআর স্বাক্ষর করলেও সিঙ্গাপুর করেনি।

তিনি জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে এ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউ থেইন সেনের সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, কিন্তু তিনি বিনয়ের সঙ্গে এটি অস্বীকার করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আইসিসিপিআরে স্বাক্ষর করার সঠিক সময় এটি নয়। কারণ এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির (ইউএনএইচআরসি) একটি অঙ্গ। অনেক দিন ধরেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক তদন্ত কর্মকর্তা
ইয়াংহি লি মিয়ানমারে আসতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। মিয়ানমারে তাকে প্রবেশ করতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

আইসিসিপিআর চুক্তি স্বাক্ষর করা হলে ইয়াংহি লির মতো মানবাধিকার প্রতিনিধিদের ভিসা অস্বীকার করা অসম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রী ইউ কিউ থিন সংসদকে চুক্তিটি স্বাক্ষর করার জন্য প্রস্তাবটি রেকর্ডে রাখার আহ্বান করে বলেন, ২০১৯ সালে আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আইসিসিপিআরের সঙ্গে এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে আরও সময় প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয় চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর করতে বিলম্বের জন্য কমিশনের কোনো প্রভাব নেই, তবে মিয়ানমার অবশেষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে ভালোই হবে।
আমরা সংসদীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে পারি না, তবে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে, সব নাগরিকের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে সমর্থন এবং সুরক্ষার জন্য এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা ভালো।

মিয়ানমার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এমএনএইচআরসি) চেয়ারম্যান ইউ উইন মরা এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ চুক্তি স্বাক্ষর করতে দেশটির আরও কয়েক বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মিয়ানমার মাত্র চারটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে শিশু অধিকারের কনভেনশন (সিআরসি) এবং নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন রয়েছে। এছাড়া দেশটি প্রতিবন্ধীদের অধিকার সম্পর্কিত কনভেনশন এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতি অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনকেও অনুমোদন দিয়েছে এবং সশস্ত্র সংঘর্ষে শিশুদের যোগদানের বিষয়ে সিআরসি প্রোটোকলে স্বাক্ষর করেছে।

ইউএনএইচআরসির সার্বজনীন পর্যায়ের পর্যালোচনা পদ্ধতির সমর্থক হওয়ার কারণে মিয়ানমার ২০২০ সালে তৃতীয় জাতীয় প্রতিবেদন জমা দেবে।

   

সৌদির বাদশাহ সালমান অসুস্থ



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথায় ভুগছেন। বেশি অসুস্থ্যতাবোধ করায় এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

রবিবার (১৮ মে) জেদ্দার আল সালাম প্যালেসের রয়্যাল ক্লিনিকে এই পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি।

সৌদির রয়্যাল কোর্ট জানিয়েছে, জেদ্দার রাজপ্রাসাদের ভেতর অবস্থিত রয়্যাল ক্লিনিকেই বাদশার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তারা বলেছে. “সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে জেদ্দার আসসালাম রাজপ্রাসাদের রয়্যাল ক্লিনিকে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। বাদশার অসুস্থতার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা।”

৮৮ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান ২০১৫ সাল থেকে সৌদির সিংহাসনে আসীন। তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হলেও কার্যত তিনিই দেশটি শাসন করছেন। সৌদি বাদশাহর স্বাস্থ্যের খবর খুব কমই প্রকাশ্যে আসে। তবে গত এপ্রিলে রয়্যাল কোর্ট কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হাসপাতালে তার ভর্তির হওয়ার খবর জানিয়েছিল। এর আগে, শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় ২০২২ সালের মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তার কোলোনোস্কপি ও মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।

রয়্যাল কোর্ট আরও জানিয়েছে, চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাদশার অসুখ খুঁজে বের করতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এছাড়া তার শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখা হবে। গত মাসেও একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ।

সেসময় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাদশাহ সালমান তার হার্টের পেসমেকারের ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের জন্য রাজধানী রিয়াদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগে ২০২০ সালে গলব্ল্যাডার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করেছিলেন তিনি। সেই সময় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন ধরেনের জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।

;

ইয়েমেন উপকূলে তেল ট্যাঙ্কারে হামলা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ইয়েমেন উপকূলে গ্রীকের একটি তেল ট্যাঙ্কার লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে জাহাজটির সামান্য ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হয়নি। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড এ কথা জানিয়েছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় সেন্টকম বলেছে, ১৮ মে রাত ১টার (সানা সময়) দিকে ইরান-সমর্থিত হুতিরা লোহিত সাগরে গ্রীক মালিকানাধীন একটি তেল ট্যাঙ্কার লক্ষ্য করে জাহাজ বিধ্বংসী একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জাহাজটি পানামা পতাকাবাহী ছিল।

সেন্টকমের বার্তায় বলা হয়, জাহাজটি সম্প্রতি রাশিয়ায় নোঙর করে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।পরে জাহাজটি ফের যাত্রা শুরু করে।

এরআগে মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে এ হামলার কথা জানিয়ে বলেছিল, ইয়েমেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মোখা নগরী উপকূলে জাহাজটিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

;

নেতানিয়াহুকে গ্যান্টজের হুমকি



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসরােয়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধর্মান্ধের পথ ছেড়ে জাতির স্বার্থ রক্ষার কথা বলেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ। তিনি গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা না থাকলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।

শনিবার (১৮ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজার জন্য ৮ জুনের মধ্যে ছয়টি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনার দাবি করেছেন গ্যান্টজ।

গ্যান্টজের এ ধরনের মন্তব্য ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ও নেতানিয়ানহু সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলের চিত্র তুলে ধরেছে। গ্যান্টজ গাজায় ৬ টি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৮ জুনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা করার ওপরও জোর দেন । যার মধ্যে আছে গাজায় হামাস শাসনের অবসান এবং অঞ্চলটিতে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, ‘‌নেতানিয়াহু যদি জাতীয় বিষয়কে ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপর স্থান দেন, তাহলে এ সংগ্রামে আমাদের পাশে পাবেন। কিন্তু তিনি যদি ধর্মান্ধের পথ বেছে নেন এবং পুরো জাতিকে অতল গহ্বরে নিয়ে যান, তাহলে আমরা এ সরকার ছাড়তে বাধ্য হব। ’

অবশ্য নেতানিয়াহু তার এই মন্তব্যকে ফালতু কথা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এর অর্ধ ইসরায়েলের পরাজয়।

এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন গাজায় বেসামরিক ও সামরকি শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসরায়েলের যে কোনো পরিকল্পনা নেই তা যেন নেতানিয়ানহু জনসম্মুখে বলেন।

;

‘একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক’ রোধে কানাডায় প্রশাসনিক চাপ 



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় সব মহাসাগরে প্লাস্টিকের পরিমাণের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন দেশে নেওয়া হচ্ছে আইনি বা বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পণ্যের উৎপাদনের পদক্ষেপ।

সম্প্রতি কানাডার পার্লামেন্টে প্লাস্টিক দূষণ রোধের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কনজারভেটিভ দল থেকে আবারও দাবি তোলা হয়। এর আগে ২০২০ সালে প্রথম দাবিটি তোলা হয়েছিল। দেশটির সংবাদমাধ্যম সিবিসির প্রতিবেদনে সে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক হল ডিসপোজেবল প্লাস্টিক যা একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের পানীয়ের বোতল ও বোতলের ক্যাপ, খাবারের মোড়ক, প্লাস্টিকের প্যাকেট, প্লাস্টিকের মোড়ক, স্ট্র, স্টিরার্স, স্টাইরোফোমের কাপ বা প্লেট, এয়ারবাড, প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট-চামচ-গ্লাস-ছুরি, ট্রে, মিষ্টির বাক্স বাঁধার রিবন, থার্মোকল, স্টিয়ারার, সিগারেটের প্যাকেট, আইসক্রিম ও ক্যান্ডি স্টিক ইত্যাদি হল একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক।

সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়,  টরন্টো ইউনিভার্সিটি অব আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মরিয়ম ডায়মন্ড বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি  প্লাস্টিক উৎপাদন করেছি যা শেষ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে পরিবেশকে দূষিত করছে এবং এতে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।’

ডায়মন্ড বলেছেন, বৃহত্তর পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্লাস্টিকের এমন অধিক ব্যবহার দেখে  তিনি উদ্বিগ্ন। 

ডায়মন্ড সায়েন্টিস্ট কোয়ালিশন ফর অ্যান ইফেক্টিভ প্লাস্টিক ট্রিটির সদস্য এবং রাসায়নিক দূষণের আন্তর্জাতিক প্যানেলেরও ভাইস-চেয়ার। তার পরামর্শ হল- তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক স্ট্র পরিহার করতে হবে। যাদের  শারীরিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারা ছাড়া বাকিদের স্ট্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেন তিনি।  প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করার কোনো দরকার নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কনজারভেটিভ দলের এমপি কোরি টোচর গত মাসে হাউস অফ কমন্সে সি-৩৮০ বিল নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কানাডিয়ান এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্টের অধীনে বিষাক্ত পদার্থ হিসেবে উৎপাদিত প্লাস্টিক আইটেমগুলোকে তালিকাভুক্ত করে সেসব নিধনের পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি। 

অবশ্য এমন একটি তালিকা এরই মধ্যে করা হয়েছে যার অন্যতম উপাদান এই একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। এই তালিকাটি ছিল ফেডারেল সরকারের একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যা বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপ।

হাউসে টোচরের বিল নিয়ে বিতর্ক হওয়ার পাঁচ দিন পরে, কনজারভেটিভ এমপি ব্র্যান্ডেন লেসলি একটি আট মিনিটের ভিডিও পোস্টে বলেন, পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার বাড়াতে হবে। কেনাকাটা, খাওয়া, সমুদ্রে ভ্রমণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্লাস্টিক এড়িয়ে এর বিকল্প ব্যবহারে ঝুঁকতে হবে।

ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্স এবং পরিবেশগত গবেষণার স্কুলের অধ্যাপক টনি ওয়াকার বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।’ 

উল্লেখ্য, কানাডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী,, ২০১৬ সালে কানাডার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার টন। ২০১৯ সালে সেই প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৪০ টনে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার অংশ হিসেবেই ২০২০ সালে দেশটিতে সি-৩৮০ বিল উত্থাপন করা হয়। সেই ফেডারেল মূল্যায়নে বলা হয়, যেহেতু প্লাস্টিক খুব ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং পরিবেশে স্থায়ী অবস্থান নেয়, তাই প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে বাড়তেই থাকবে। প্লাস্টিক দূষণের ফলে পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাতে উদ্বেগ বাড়ছে। এর সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।’

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) অনুসারে, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক ধীরে ধীরে এবং ধীরে ধীরে প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরোতে ভেঙে যায় যা মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত। এসব প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কারণ এটি অ-বায়োডিগ্রেডেবল এবং পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হতে কয়েক বছর সময় নেয়। প্লাস্টিকের ব্যাগগু পঁচতে হাজার হাজার বছর সময় লাগতে পারে, এতে মাটি এবং জল দূষিত হয়। প্লাস্টিক তৈরি করতে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিকগুলো প্রাণীর টিস্যুতে স্থানান্তরিত হয় এবং অবশেষে, মানব খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে।

কোনো প্লাস্টিকই বায়োডিগ্রেডেবল নয়। তবে কোনো প্লাস্টিক ১০০ মাইক্রনের থেকে পাতলা হলে, তার চরিত্র বেশি ভঙ্গুর হয়। অর্থাৎ, অল্পসময়ের মধ্যেই ছোটো ছোটো টুকরোতে ভেঙে যায় এই ধরনের প্লাস্টিক। যা আমাদের কাছে পরিচিত মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে। সাধারণ প্লাস্টিক পণ্যের থেকেও আণুবীক্ষণিক এই প্লাস্টিক কণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এই সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে শুরু করে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ-সর্বত্রই হদিশ মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের। বাস্ততন্ত্রের ক্ষতিসাধন তো বটেই, খাদ্য এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের দেহেও অবাধে প্রবেশ করছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।

;