রোহিঙ্গা গণহত্যা: আইসিজের আদেশ

  রোহিঙ্গা গণহত্যা: আইসিজের আদেশ
  • রকিবুল সুলভ,নিউজরুম এডিটর,বার্তা২৪.কম,ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আইসিজে তে গাম্বিয়ার মামলা/ ছবি: এপি

আইসিজে তে গাম্বিয়ার মামলা/ ছবি: এপি

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। দুপক্ষের শুনানি শেষে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে আদালত মিয়ানমারের প্রতি গণহত্যা রোধসহ চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারক প্যানেল গণহত্যা রোধে সম্মত হয়। এই প্যানেলে মোট ১৭ জন বিচারক ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। যদিও গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন মিয়ানমারের সর্বোচ্চ নেতা অং সান সু চি।

আদালত মিয়ানমার সরকারকে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে ঝুঁকিতে রয়েছেন সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম। তাদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তারা যাতে আর কোনো গণহত্যা না চালায়, তার নিশ্চয়তা দিতে আন্তর্জাতিক আদালত নির্দেশনা দেন। এছাড়া গাম্বিয়া যে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে, তার প্রমাণাদি সংরক্ষণ করতে হবে।

আদালতে সু চি গাম্বিয়ার আইমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন/ ছবি: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল

সবশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা থেকে সুরক্ষা দিতে যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তার প্রতিবেদন আগামী চারমাসের মধ্যে আদালতের কাছে দাখিল করতে হবে। এছাড়াও প্রতি ছয়মাস অন্তর অন্তর প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

আদালতের এসব নির্দেশনাকে গুরুত্বপুর্ণ মনে করছেন, গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। তবে এ বিষয়ে নিশ্চুপ ছিলেন মিয়ানমারের আইনজীবীরা।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী নৃশংস নির্যাতন চালায়। নৃশংসতা থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। বিগত তিন দশক ধরে মিয়ানমার এই জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।

এর সূত্র ধরে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া মিয়ানমারের এই হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করে। এবং এর বিচার চেয়ে গত ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) ‘গণহত্যা’র মামলা করে।

মামলার ৪৫ পৃষ্ঠার আবেদনে গাম্বিয়া উল্লেখ করে, মিয়ানমার গণহত্যা, ধর্ষণ এবং সম্প্রদায় ধ্বংসের মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে’ ‘গণহত্যা’ চালায়।

এ মামলায় প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর শুনানি করে গাম্বিয়া। ১১ ডিসেম্বর শুনানি করে মিয়ানমার। ১২ ডিসেম্বর উভয়পক্ষ একসঙ্গে শুনানিতে অংশ নেয়।

শুনানির তৃতীয় দিনে গাম্বিয়ার পক্ষের আইনজীবী পিয়েঁর দ্য আর্জেন বলেন ওআইসির সিদ্ধান্তে গাম্বিয়া মামলা করেছে—কথাটি ঠিক নয়। এর আগে মিয়ানমার পক্ষের আইনজীবী ক্রিস্টোফার স্টকার দাবি করেন, ওআইসির মদদে গাম্বিয়া গণহত্যার মামলা করেছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা/ ছবি: ইউএন

এসময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেন, আরাকানে কোনো গণহত্যা ঘটেনি, সেখানে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে সে দেশের সেনাবাহিনী।

তবে এ মামলার পক্ষে কথা বলছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। বিশেষ করে দেশটির বিদ্রোহী কারেন জনগোষ্ঠী গাম্বিয়ার এ মামলাকে স্বাগত জানিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না তা তদন্তের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)৷ তবে মিয়ানমার বলছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের এ উদ্যোগ কোনোভাবেই আইনসঙ্গত নয়৷ কারণ মিয়ানমার এখনও আইসিসি সনদে স্বাক্ষর করেনি, তাই দেশটি এ ট্রাইব্যুনালের সদস্যও নয়৷ কিন্তু আইসিসি বলছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশ সংস্থাটির সদস্য হওয়ায় এ তদন্তের এখতিয়ার তাদের রয়েছে৷

বাংলাদেশে আশ্রিত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।