প্রবাসের জেলখানার চিঠি-৩
‘স্ত্রীকে বলবেন আমার ছেলেকে যেন কষ্ট না দেয়’
৬ বছর আগে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি প্রিজন সেল থেকে একজন প্রবাসী শ্রমিক তার স্ত্রীকে চিঠি দেয়ার জন্য এক কুরিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে চিঠি লিখতেন। কুরিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডার, জহির সেসব চিঠি ইমেইলে পাঠাতেন। সেই বাংলাদেশি কয়েদি এখন সাজা শেষে মুক্ত। সকলের অনুমতি সাপেক্ষে নাম ও পরিচয় গোপন রেখে এই চিঠিগুলো প্রকাশ করা হলো:
প্রবাসে একজন শ্রমিকের আবেগ, ভালবাসা আর দেশে রেখা আসা স্ত্রী-সন্তানকে একবার দেখার আকুতি চিঠির প্রতিটি লাইনে।
প্রবাস থেকে জেলখানার তৃতীয় চিঠি:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করলাম। শ্রদ্ধেয় জহির ভাই পত্রে আমার সালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি।
যাক, পরসমাচার এই যে আপনার হাতের একটি চিঠি পেয়েছি। পাওয়ার পর আমার মন যে কত খুশি হয়েছে, এক আল্লাহ পাক জানেন।
যাক জহির ভাই, আপনি আমাকে দেখতে আসতে পারবেন। আমার পিয়েজ (জেলের গার্ড) জানিয়েছেন, আমার অফিসার (জেলের সিনিয়র কর্মকর্তা) বলেছেন, আপনি আমাকে দেখতে আসতে পারবেন।
আপনার বিবাহর সার্টিফিকেট লাগবে আর কিছু লাগবে না। (এই বাক্যটির অর্থ জহির ভাই, নিজেও বুঝতে পারেননি।) আপনি ভিজিটে আসার কোন সমস্যা নাই।
যাক জহির ভাই, আমার স্ত্রী জানতে চেয়েছে, কতদিন জেল হয়েছে আমার? জহির ভাই, এই কথা বলা যাবে না। কতদিন জেল হয়েছে, এই কথা চিঠির মাধ্যমে জানানো যাবে না। আমি চিঠিতে এই কথা লিখেছি, জেল কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে আমার অনেক সাজা দিবে। তার জন্য আমি বলতে পারবো না।
যাক জহির ভাই, আমার স্ত্রীকে বলবেন, আর বেশিদিন নাই, এসে পড়বে। আমার শরীর আল্লাহর রহমতে ভাল আছে। আমার স্ত্রীকে বলবেন, যেমন করে হোক আমার ছেলেকে যেন কষ্ট না দেয়। আর বলবেন, যত টাকা লাগে, যেন সে তার বাবার বাড়ি থেকে এনে দেয়্। আমি রুহুল বেঁচে থাকলে, তোমার বাবার বাড়ির টাকা জমি বিক্রি করে হলেও দিয়ে দিবো।
আরও পড়ুন- আমার ছেলে কত বড় হয়েছে!
যাক জহির ভাই, আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। এই কষ্টের প্রতিদানে আল্লাহ যেন আপনাকে হাজার হাজার টাকার মালিক বানিয়ে দেন। যাক জহির ভাই, আমাদের এপি সাহেবকে, কোয়ারবাদ সাহেবকে আমার সালাম দিবেন আর বলবেন আমার জন্য দোয়া করতে।
যাক জহির ভাই, আমার স্ত্রীকে বলবেন সবসময় নামাজ পড়তে এবং কোরআন শরীফ পড়তে। আর সবসময় আল্লাহর নাম স্মরণ করতে বলবেন।
যাক জহির ভাই, পৃথিবীতে জেলখানায় এত কষ্ট! কবরের যে কত কষ্ট এক আল্লাহ পাক জানেন। যাক জহির ভাই, আপনার কাছে অনুরোধ নামাজ পড়বেন। ভুল করবেন না। যাক জহির ভাই আমার লেখার মধ্যে ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। চিঠি পাওয়ার পর উত্তর দিবেন।
ইতি আপনার ছোট ভাই, রুহুল আমিন।
আরও পড়ুন- ‘আমার কতদিন জেল হয়েছে?’