নীল আকাশ বলে দিচ্ছে, ভারত কতটা দূষণমুক্ত
করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সপ্তাহখানেক আগে ভারত সরকার রাষ্ট্রজুড়ে লকডাউন আরোপ করে। এতে দেশটির নাগরিকদের ঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়। আর এতেই জনবহুল এ দেশটিতে দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। কয়েকমাস আগেও যেখানে বাতাস ধূসর হয়েছিল, আকাশ ঘোলাটে দেখাচ্ছিল, লকডাউন শুরুর পর থেকে সে আকাশ নীল হতে থাকে।
ভারতে আরোপিত এ লকডাউনে কারখানা, বিপণীবিতান, গণপরিবহনসহ সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। সকল প্রকার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায়ের চর্চা শুরু হয় দেশটিতে। সবশেষ খবর অনুযায়ী ভারতে ১ হাজার ৩০০ এর বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন প্রায় ৩৫ জন।
তথ্য-উপাত্ত বলেছে, ইতিমধ্যে ভারতের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে যানবাহন ও কারখানা নির্গত ক্ষতিকর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) এবং নাইট্রোজেন ডাই- অক্সাইড রেকর্ড পরিমাণে কমেছে।
২.৫ মাইক্রোমিটার বা তার চেয়ে কম ব্যাসের অতিক্ষুদ্র এসব বস্তুকণা ফুসফুস হয়ে রক্তে প্রবেশ করে এবং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
২০১৯ সালে বিশ্ব বায়ুমান প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত ৩০ শহরের ২১টিই ভারতে। কিন্তু এখন নীল আকাশ অনেকটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে দূষণ নাটকীয়ভাবে কমতে শুরু করেছে।
রাজধানী দিল্লিতে সরকারি উপাত্ত অনুযায়ী লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাতাসে ক্ষতিকর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) পরিমাণ ৭১ শতাংশ কমে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী পিএম ২.৫ এর পরিমাণ ২৫ এর বেশি হলে তা অনিরাপদ।
দেশটির অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সংস্থা বলছে, বাতাসে নাইট্রোজেন এর ঘনত্ব প্রতি কিউবিক মিটারে ৫২ থেকে ১৫ তে নেমে এসেছে। এই কমে যাওয়ার পরিমাণ ৭১ শতাংশ। পাশাপাশি মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা এবং বাঙ্গালরেও বাতাসে দূষণকারী এ পদার্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
ভারতীয় পরিবেশ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জয়তি পাণ্ডে লাভাকার সিএনএকে বলেন, গত ১০ বছরে দিল্লির আকাশ এরকম নীল আমি আগে দেখিনি।
ভারতের বায়ুমান এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানী গুফরান বেগ বলেন, ২৫ মার্চ শুরু হওয়া রাষ্ট্রব্যাপী লকডাউনে গণপরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। ওই মাসে প্রথম তিন সপ্তাহের চেয়ে লকডাউনের সময়ে মুম্বাই, পুনে এবং আহমেদাবাদে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমেছে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ।
তিনি বলেন, যানবাহনে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জালানি থেকে নিঃসৃত দূষক কণা কমতে শুরু করেছে।
এরকমটা শুধু ভারতে দেখা গেছে তা নয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোতেও দূষণ অনেকটা কমে এসেছে। করোনায় পুরো বিশ্ব যখন স্থবির ঠিক তখন পৃথিবী তার হারানো পরিবেশের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে আবারো শুরু হবে যান চলাচল, ঘুরবে কারখানার চাকা।