চাই হিংসা এবং প্রতারণামুক্ত জীবন
মুমিন জীবনের মূল সফলতা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি, আর জান্নাত লাভ। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের ৫০টি সূরার ৭৮ স্থানে জন্নাতের বর্ণনা করেছেন। মুমিন-মুসলমানরা জাহান্নাম থেকে বাঁচতে ও জান্নাত লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি নানাবিধ আমল করে থাকেন। যদিও আমাদের আমল সামান্য এবং অজানা। তার পরও আমরা আমল শিখি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস, জীবনী এবং সাহাবাদের জীবনী থেকে।
সাহাবারা নবী করিম (সা.) কে কাছ থেকে দেখে আমল শিখেছেন ও করেছেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবদ্দশায় অনেক সাহাবিকে জান্নাতি বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে, ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ শব্দটি বেশ পরিচিত। অর্থ ১০ জন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি। তবে সিরাত পাঠ করলে ১০ জন সাহাবি ছাড়াও অনেক সাহাবি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত বলে জানা যায়।
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন একবার আমরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বসা ছিলাম। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এখন তোমারে সামনে এক ব্যক্তি আগমন করবে, সে জান্নাতি। এমন সময় আনসার গোত্রের এক ব্যক্তি বামহাতে জুতো এবং ডানহাতে অজুতে ভেজা দাড়ি নাড়তে নাড়তে আগমন করলেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পরেরদিন এবং তার পরের দিন একই কথা বললেন। ওই আনসারি সাহাবির হালতও পূর্বের অনুরুপ ছিল। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) চলে গেলেন। তারপর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) আনসারি সাহাবির বাড়ি গেলেন। বাহানা করে তাকে বললেন, আমি পিতার সঙ্গে রাগ করে এসেছি। তোমার বাড়িতে থাকতে চাই। উদ্দেশ্য তিনি দিন-রাত কি আমল করেন, তা দেখা। আনসারি সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ (রা.) কে থাকার অনুমতি দিলেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) তিন দিন সেখানে থাকলেন। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো আমল করতে দেখলেন না। তবে যখনই ঘুম ভেঙে যেত, জিকির এবং তাকবির বলে পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন। তারপর ফজরের নামাজের জন্য উঠতেন। সর্বদা কল্যাণের কথা বলতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, আমি তখন বললাম, আমি আমার পিতার সঙ্গে কোনো ঝগড়া-বিবাদ করে আপনার এখানে আসিনি। আমি আপনার সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) পরপর তিনদিন জান্নাতের সুসংবাদ দিতে শুনেছি। তাই আপনার আমল দেখার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু তেমন কোনো আমল আমি দেখিনি। আমি জানি না হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কি কারণে আপনার সম্পর্কে এমন সুসংবাদ বলেছেন? আনসারি সাহাবি বললেন, আপনি যা দেখেছেন এর থেকে বেশি কোনো আমল আমি করি না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) ফিরতে মনস্থ করলেন। কিছুদূর আসার পর আনসারি সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) কে ডেকে বললেন, আপনি যা দেখেছেন এর চেয়ে বেশি আমল আমি করি না। তবে আমি দু’টি কাজ করি। ১. আমি কোনো মুসলিমের সঙ্গে অবিশ্বাসী, প্রতারণামূলক কাজ করি না, ২. আল্লাহতায়ালা কাউকে কোনো কল্যাণ দান করলে তার প্রতি আমি কখনও হিংসা করি না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বললেন, হ্যাঁ; এ কারণেই রাসূল (সা.) আপনাকে জান্নাতি বলেছেন।
সূরা হাশরের ৯ নম্বর আয়াতের তাফসির, তাফসিরে ইবনে কাসিরে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) আল বেদায়া ওয়ান নেহায়ায় একত্রে তিনটি গুণের কথা বলেছেন। ১. সর্বদা কল্যাণের কথা বলতেন, ২. কারও সঙ্গে প্রতারণা করতেন না, ৩. আল্লাহতায়ালা কাউকে কোনো নেয়ামত, কল্যাণ দান করলে হিংসা করতেন না। মুমিন হিসেবে আমরা সকলেই জান্নাতে যেতে চাই। সর্বদা আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি এবং করবো। তবে উল্লেখিত গুণগুলো আমাদের অর্জন করতে হবে।
প্রতরাণা, হিংসা এগুলো অন্তরের রোগ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে প্রতারণা করলো সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয়।’
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই হিংসা নেক আমলগুলো নষ্ট করে দেয় যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়।’ একজন সাহাবি যদি ফরজ আমল করার পর এ গুণ অর্জন করে জান্নাতি হতে পারে, তবে আশা রাখি আল্লাহ আমাদেরও জান্নাত দান করবেন। প্রয়োজন শুধু গুণগুলো অর্জন করার। আল্লাহ আমাদের হিংসা এবং প্রতারণামুক্ত জীবন দান করেন।
উল্লেখ্য, হাদিসের কিতাব থেকে জানা যায়, ওই সাহাবি ছিলেন হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) তবে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এখানে নাম উল্লেখ করেননি।
মাওলানা হাসান মুরাদ: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম, বুজরকগড়গড়ী, চুয়াডাঙ্গা