যে অন্যের ক্ষতি করে আল্লাহ তার ক্ষতি করেন

  • মুফতি মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যে অন্যের ক্ষতি করে আল্লাহ তার ক্ষতি করেন, ছবি: সংগৃহীত

যে অন্যের ক্ষতি করে আল্লাহ তার ক্ষতি করেন, ছবি: সংগৃহীত

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাযিয়াল্লাহুর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহ্যও করা যাবে না। যে অন্যের ক্ষতি করল আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন।’ -সুনানে দারাকুতনি: ৩০৭৯

আলোচ্য হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা বুঝা যায়, ‘ক্ষতি’ প্রতিহত করা ইসলামের মূলনীতি। সে নিজেকে যেমন ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে, তেমনি অন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে। হাদিসের ব্যাখ্যাকার মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন, ‘এই কথা স্পষ্ট যে, শারীরিক, আর্থিক, পার্থিব ও পরকালীন সব ধরনের ক্ষতি এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।’ -মিরকাতুল মাফাতিহ: ৮/৩১৫৬

এই হাদিসকে মূলনীতি ধরে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ক্ষতিকর ও হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে নিজেকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেওয়া হারাম। অন্যের ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। জীবন, সম্পদ, পরিবার ও সম্ভ্রমসহ সব ধরনের ক্ষতিকর বিষয় পরিহারযোগ্য।

বিজ্ঞাপন

ইসলামি শরিয়তের সাধারণ বিধান হলো- ক্ষতিকর বিষয় নিষিদ্ধ। ক্ষতি হওয়ার আগে প্রতিহত করা এবং ক্ষতি হয়ে গেলে তা দূর করা। ইসলাম স্পষ্টভাবে নিজের ও অন্যের ক্ষতি করতে নিষেধ করেছে। যারা অন্যদের ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয় হাদিসে তাদের অভিশপ্ত বলা হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে বা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত।’ -সুনানে তিরমিজি: ১৯৪১

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘যে অন্যের ক্ষতি করে আল্লাহ তার ক্ষতি করেন এবং যে অন্যের শত্রুতা করে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেন।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৩৬৩৫
সুতরাং মুমিনের উচিত নিজেকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা এবং অন্যকেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা।

বিজ্ঞাপন

ক্ষতি ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও আমাদের সমাজের মানুষের অন্যায্য অনৈতিক ব্যবহারে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে অন্য মানুষ। বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। দিন দিন মানুষের মানসিক বিকৃতি বাড়ছে। হতাশা কিংবা অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ জীবনে, বেঁচে থাকার প্রতিটি ধাপে। মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষ পাশবিক হয়ে উঠছে, সামান্য স্বার্থের কারণে।

অফিসে, পরিবারে, সমাজে, রাজনীতিতে, দলে ও সভা-সমিতিসহ নানা কাজে নিজেকে জাহির করা, নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, কিছু বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য মানুষ মিথ্যাচার, অপবাদ, নিন্দা, ষড়যন্ত্র, চাকুরিচ্যুত থেকে শুরু করে হত্যার মতো জঘন্য কাজ করছে। নিজের জিদের লাগাম টানতে পারছে না মানুষ। একে অপরের ক্ষতিসাধন করা একেবারে মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অপরের অনিষ্ট তথা ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকাকে সদকা বা দান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাহাবি হজরত আবু মূসা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের দান-খয়রাত করা ওয়াজিব। সাহাবিরা বলেন, সে যদি তা করতে সক্ষম না হয় বা তা করতে না পারে? তিনি (নবী করিম সা.) বলেন, তাহলে সে স্বহস্তে কাজ করে নিজেকে লাভবান করবে এবং দান-খয়রাত করবে। সাহাবিগণ বলেন, যদি তার সে সামর্থ্য না থাকে বা সে তা না করতে পারে? তিনি বলেন, তাহলে সে দুস্থ-বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। সাহাবিগণ বলেন, সে যদি তাও না করতে পারে? তিনি বলেন, তাহলে সে সৎ কাজের আদেশ দেবে। তারা বলেন, যদি সে তাও না করতে পারে? তিনি বলেন, তাহলে সে অপরের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকবে। এটাই তার জন্য দানস্বরূপ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

অন্য আরেক হাদিসে এসেছে, সাহাবি হজরত আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) কে বলা হলো, সর্বোত্তম আমল কী? তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তার পথে জিহাদ। বলা হলো, আজাদ করার জন্য সর্বোত্তম গোলাম কে? তিনি বলেন, যার মূল্য সর্বাধিক এবং যে নিজ মনিব পরিবারের অধিক প্রিয়। প্রশ্নকারী বলল, আপনার কী মত, আমি যদি কোনো কোনো কাজ করতে সক্ষম না হই? তিনি বলেন, তাহলে কোনো কারিগরের কাজে সাহায্য করো অথবা অনভিজ্ঞ লোকের কাজ করে দাও। সে বলল, আপনি কি মনে করেন, যদি তা করতে আমি অপারগ হই? তিনি বলেন, তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে নিরাপদ থাকতে দাও। কেননা তাও সদকা যা তোমার নিজের জন্য করতে পারো। -আদাবুল মুফরাদ: ২২৫

তাই আসুন, আমরা সাধ্যানুযায়ী মানুষের উপকার করি। একান্ত উপকার করতে না পারলে অন্যের অনিষ্ট করা থেকে নিজেকে বিরত রাখি।