মুসলমানদের শক্তির উৎস ও ঐক্যের চাবিকাঠি

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মুসলমানদের শক্তির উৎস ও ঐক্যের চাবিকাঠি হলো- কোরআন-হাদিস মেনে চলা, ছবি: সংগৃহীত

মুসলমানদের শক্তির উৎস ও ঐক্যের চাবিকাঠি হলো- কোরআন-হাদিস মেনে চলা, ছবি: সংগৃহীত

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সম্মানিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আমি অবশ্যই মানব জাতিকে সম্মানিত করেছি এবং স্থলে ও সমুদ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’ -সূরা ইসরা: ৭০

কোরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি সে মহান সত্তা যিনি মানব জাতির কল্যাণে পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’ -সূরা বাকারা: ২৯

বিজ্ঞাপন

সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কাছে মানুষের এমন মর্যাদাই প্রমাণ করে মুমিনরা আল্লাহতায়ালার কাছে অত্যন্ত দামী। সেটা মুমিন নিজেও বুঝে না কিংবা তার মূল্য সম্পর্কে অবগত নয়।

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মুমিন বান্দা আল্লাহর নিকট সাধারণ ফেরেশতার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।’ -বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান: ১/১৭৪

বিজ্ঞাপন

হাদিসে ‘এক মুমিনকে আরেক মুমিনের আয়না ও ভাই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না ও ভাই।’ –সুনানে আবু দাউদ: ৪৯১৮

সাধারণত মানুষ আয়না দ্বারা চেহারা দেখে। চেহারায় কোনো ময়লা বা দোষ-ক্রটি দেখতে পেলে তা দূর করে, যাতে চেহারায় কোনো আঘাত না লাগে। তদ্রুপ এক মুমিন অন্য মুমিনের মধ্যে কোনো দোষ-ত্রুটি দেখতে পেলে নীরবে তা দূর করার চেষ্টা করে। অন্য কাউকে তা জানতে দেয় না।

ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না বলার অর্থ হলো, কোনো মুসলমান তার অন্য মুসলমান ভাইয়ের ভালো কিছু দেখলে শোকরিয়া আদায় করবে, মন্দ কিছু দেখলে কোমল ভাষায় গোপনে উপদেশ দেবে। সর্ব সাধারণের নিকট তা প্রকাশ করবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ -সূরা আল হুজরাত: ১০

যেহেতু এক মুমিন আরেক মুমিনের ভাই, সেহেতু তিনটি কাজ তাদের জন্য হারাম।

উপহাস করা: আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে।’ ইমাম কুরতুবি বলেন, উপহাস বলা হয় কোনো ব্যক্তিকে হেয় ও অপমান করার জন্যে তার কোনো দোষ এমনভাবে উল্লেখ করা, যাতে শ্রোতারা হাসতে থাকে। কোরআন-হাদিসের ভাষায় তা স্পষ্ট হারাম।

কাউকে দোষারোপ করা: আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের দোষ বের করো না।’ অর্থাৎ তোমরা অন্যদের দোষ বের করলে, তারাও তোমাদের দোষ বের করবে। কারণ, দোষ থেকে কোনো মানুষ মুক্ত নয়। জনৈক মনীষী বলেছেন, তোমার মধ্যেও দোষ আছে, আর মানুষেরও চক্ষু আছে। তারা কিন্তু তোমার দোষ দেখে। তুমি কারও দোষ বের করলে সেও তোমার দোষ বের করবে। অতএব, মুসলমান ভাইয়ের দুর্নাম করা নিজেরই দুর্নাম করার ন্যায়। -মাআরিফুল কোরআন

মন্দনামে ডাকা: আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।’ কাউকে মন্দ নামে ডাকা হারাম, মারাত্মাক গোনাহের কাজ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন গোনাহ দ্বারা লজ্জা দেয়, যা থেকে সে তওবা করেছে, তাকে সেই গোনাহে লিপ্ত করে ইহকালে ও পরকালে লাঞ্ছিত করার দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা গ্রহণ করেছেন।’ -কুরতুবি

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে যুদ্ধ করা কুফরি।’ -সহিহ বোখারি: ৬০৪৪

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার থেকে তিনটি বিষয়ে বায়াত (অঙ্গীকার) নিয়েছেন। ১. নামাজ কায়েম করা, ২. জাকাত প্রদান করা ও ৩. প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করা। -সহিহ বোখারি: ৫৫

এভাবে ভিন্ন হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।’ ‘ঈমানদারদের সঙ্গে অন্য ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সঙ্গে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট তেমনি অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে।’ ‘মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না, তাকে অপমানিত করে না এবং তাকে তুচ্ছজ্ঞান করে না।’ ‘আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দার সহযোগিতায় ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে।’ ‘তোমরা পারস্পরিক হিংসা করো না, পারস্পরিক শত্রুতা পোষণ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, কারও দোষ তালাশ করো না, একে অন্যের অগ্রবর্তী হবে না, ভাই-ভাই হিসেবে আল্লাহর বান্দা হও।’

বর্ণিত হাদিসগুলোই হলো- মুসলমানদের শক্তির উৎস, ঐক্যের চাবিকাঠি। এগুলো মেনে চললে, পরস্পরে সম্প্রীতি ও ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। সমাজ হবে শান্তি ও সুখের। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন।