শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান, আল্লাহ খুশি হবেন

  • মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শীতের দিনে গরম কাপড়ের বদলে অনেকের ভরসা আগুনের উত্তাপ, ছবি: সংগৃহীত

শীতের দিনে গরম কাপড়ের বদলে অনেকের ভরসা আগুনের উত্তাপ, ছবি: সংগৃহীত

শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় সারাদেশে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই তীব্র শীত অনেকের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের অভাবী ও গরিব মানুষ। শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগও বর্ণনাতীত।

শীতে অভাবী মানুষের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে শীতবস্ত্রের। করোনার কালো থাবা আর অভাবে কারণে অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য।

বিজ্ঞাপন

জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়েছে দিনমজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিকসহ সাধারণ কর্মজীবী এবং ছিন্নমূল মানুষের। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাজে যোগ দিতে দুর্ভোগে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে চরের হতদরিদ্রদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা। এর পাশাপাশি বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগব্যাধি। কোভিডের বিপদ ছাড়াও বাড়ছে সর্দি-কাশি, হাঁপানিসহ ফুসফুসজনিত বিভিন্ন রোগ।

তাই সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষদের দূর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন, তা না হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা যায়।

বিজ্ঞাপন

দরিদ্র মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবসেবা। এটা সওয়াবের কাজও বটে। বদর যুদ্ধের বন্দী হজরত আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। হজরদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মুদার গোত্র হতে গলায় চামড়ার আবা পরিহিত বস্ত্রহীন কিছু লোক আগমন করল। তাদের করুণ অবস্থা দেখে তার চেহারা বিষণ্ন হয়ে যায়। তিনি নামাজ শেষে সাহাবাদের লক্ষ্য করে দান-সদকার জন্য উৎসাহমূলক খুতবা প্রদান করেন। ফলে সাহাবারা এত অধিক পরিমাণ দান করলেন যে, খাদ্য ও পোশাকের দু’টি স্তুপ হয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত হলেন, তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

অভাবীকে বস্ত্র দানের গুরুত্ব প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ

এই হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব। এ বিষয়ে হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তার সব বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন।’ -সহিহ মুসলিম

প্রতি বছর শীত এলে অভাবীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা উচ্চারিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ব্যতিক্রম যেটা হয়েছে, সেটা সাধারণভাবে চোখে পড়ার মতো নয়। ব্যতিক্রমটি হলো, প্রতি বছর সমাজের সামর্থ্যবান জনদরদি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার ইত্যাদি গ্রামে গ্রামে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। তরুণ যুবকরা মহল্লায় মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো কাপড় সংগ্রহ করে এবং তা গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে। শীত এলে এসব ছিল চিরচেনা সামাজিক কর্মকাণ্ড। এবার সেই উৎসাহ-উদ্দীপনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এর অন্তর্নিহিত কারণটি হয়তো কোনো সমাজতাত্ত্বিক বলতে পারবেন।

কিন্তু আমাদের সাধারণ বিচার-বিবেচনায় সামান্য সমাজ অধ্যয়নে যেটি মনে হয়, সেটি হলো- জাতি, রাষ্ট্র, সমাজ এসব ধারণার সঙ্গে মানুষের একাত্মতার বোধ শিথিল হয়ে পড়েছে। তাই শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষের কষ্ট লাঘবে আগের মতো সবার এগিয়ে না আসার পেছনে এটিই কারণ বলে আমাদের ধারণা। তবু বসে থাকলে চলবে না, দরিদ্র, অভাবী ও বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষকে সাধ্যানুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে।

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক।