কোরআন হোক জীবন চলার সহায়ক
মানুষ যখন আল্লাহতায়ালার কথা ভুলে ভিন্ন কোনো ব্যবস্থার অধীন হয়ে পড়ে, তখন সমাজে দেখা দেয় বিচিত্র সামাজিক বিচ্যুতি ও অবক্ষয়। আর একটি অবক্ষয়িত সমাজ কখনও নিরাপদ নয়, ওই সমাজের কেউ সুস্থ থাকতে পারে না। তখন পুরো সমাজ হুমকি গ্রস্থ হয়ে যায়। সামাজিক এ হুমকি থেকে বেঁচে থাকার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও ইসলামের বিধি-বিধান চালুর জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মানুষকে মনে রাখতে হবে, সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ করার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সামাজিক শৃঙ্ক্ষলা ও মূল্যবোধ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
সমাজের লোকজন যদি একে-অপরকে শৃঙ্ক্ষলাবিধি মেনে চলার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে, ভালো কাজের আদেশ দেয়, মন্দ কাজ করতে নিষেধ করে- তখন ধীরে ধীরে ওই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কল্যাণের বিস্তার ঘটে। আর এই কল্যাণের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সমাজের প্রতিটি মানুষের অন্তরাত্মায়। সমাজ তখন হয়ে ওঠে আদর্শস্থানীয়। এমন আদর্শ সমাজ গঠন করতে কোরআন-হাদিসের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হচ্ছে, সামাজিক অবক্ষয়রোধের লক্ষ্যে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এটা ভুলে থাকার কোনো অবকাশ নেই। ঈমানি এই দায়িত্ব পালনের সময় সবাইকে পরস্পরের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও পবিত্র সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে প্রচুর আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সূরা আল ইমরানের ১০৪ নম্বর আয়াতে হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা নেকি ও সৎকর্মশীলতার দিকে মানুষকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে।’
প্রশ্ন উঠতে পারে, সৎ কাজ আর অসৎ কাজ কোনগুলো? কোরআনে কারিমে এর উত্তর রয়েছে। সৎ কাজের আদেশ করার জন্য যে কাজগুলোর কথা কোরআনে বলা হয়েছে, সেগুলো হলো- আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান আনা, ন্যায়বিচার, ধৈর্যশীলতা, আল্লাহর জিকির ও কাজের প্রতি আন্তরিক হওয়া ইত্যাদি।
আর যেসব কাজ করতে নিষেধ করার কথা বলা হয়েছে, সেসব কাজের মধ্যে রয়েছে- জুলুম-অত্যাচার, খোদাদ্রোহিতা, পাপাচার, খেয়ানত বা আমানত রক্ষা না করা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ইত্যাদি।
সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ করা সওয়াবের কাজ হলেও এটা অনেকেই ভালো চোখে দেখেন না। এটাকে সমালোচনা মনে করেন। বস্তুত কারো ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেকটা তিক্ত ওষুধের মতো। খেতে খুব তিতা হলেও রোগ সারিয়ে তোলে। সুতরাং মুসলিম সমাজে এক মুমিন অপর মুমিনকে এই ওষুধ দিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশিত।
সমাজে যারা অবক্ষয় সৃষ্টির জন্য দায়ী, তাদেরকে যে করেই হোক বোঝাতে হবে। এই বোঝানোর কাজটাই হলো- সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ। মানুষের মাঝে এই বোধটা জাগ্রত হবে কোরআন মেনে চললে, কোরআনের পথে চললে। বস্তুত কোরআনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী মুসলমানের জীবন পরিচালনা গুরত্বপূর্ণ বিষয়। তবে কঠিন নয়। মানুষ যদি আল্লাহ কোরআনে বর্ণিত পথে জীবনকে সাজায়, তাহলে কোরআন হয়ে উঠবে তার জীবনের সহায়ক।