ইহুদিদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা বহাল আল আকসায়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইহুদিদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা বহাল আল আকসায়

ইহুদিদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা বহাল আল আকসায়

জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনার নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া নিম্ন আদালতের বিতর্কিত রায় বাতিল করেছে ইসরাইলের একটি উচ্চতর আদালত। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, গত মঙ্গলবার আদালত ইহুদিদের প্রার্থনায় অনুমতি দিলে ফিলিস্তিন ও মুসলিম বিশ্ব প্রতিবাদ জানায়।

মাস খানেক আগে আরেহ লিপ্পো নামের এক ইসরাইলি রাব্বি ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থানে প্রার্থনা করতে গেলে পুলিশ বাধা দিলে তিনি আদালতে যান। এর প্রেক্ষিতে নিম্ন আদালত ইহুদিদের নিরব প্রার্থনার অনুমতি দেয়।

বিজ্ঞাপন

এতদিন ইহুদিরা আল আকসা পরিদর্শন করতে পারলেও প্রার্থনা বা কোনো ধরনের ধর্মীয় আচার পালন করেতে পারতো না। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি আদালতের রায়ের প্রতিবাদ জানায় ফিলিস্তিনিরা। কারণ চুক্তি অনুসারে ইহুদিরা শুধু কাছের পশ্চিম দেওয়ালে প্রার্থনা করতে পারবে।

ইসরাইলি পুলিশ মঙ্গলবার নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে। এরপর শুক্রবার জেরুজালেম জেলা আদালতের বিচারক আরেহ রোমানফ আগের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তারা যথার্থ কাজ করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি জর্ডান, মিসর ও সৌদি আরবের কর্মকর্তারা নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছিল।

অবশ্য ইসরাইলের কোনো আইনই আল আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদিদের প্রার্থনায় নিষেধ করে না। কিন্তু ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ উত্তেজনা রোধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।

শুক্রবার পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে এক বিবৃতিতে ইসরাইলি জননিরাপত্তা মন্ত্রী ওমর বার-লেভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, স্থিতাবস্থায় পরিবর্তন জনসাধারণের শান্তি বিপন্ন করবে।

১৯৪৮ সাল থেকে জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদ আল আকসার দেখভাল করছে জর্ডান। ১৯৯৪ সালে আম্মান ও তেল আবিবের মধ্য এ বিষয়ে শান্তি চুক্তি হয়।

এর আগে ইসরাইলি নিম্ন আদালতের রায়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল জর্ডান সরকার পরিচালিত জেরুজালেম ইসলামিক ওয়াকফ। তারা বলেছিল, আল আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক ও আইনি মর্যাদার গুরুতর লঙ্ঘন এটি।

তখন বলা হয়, ইসরাইলে বিচার বিভাগের এ রায়ে মুসলমানদের পবিত্রতম স্থানটিতে ইহুদি অধিগ্রহণের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ইহুদিদের আল আকসায় প্রবেশের কারণে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছে। ফিলিস্তিনিরা ইহুদিদের প্রবেশকে উসকানি হিসেবে দেখে। যাকে চুক্তি লঙ্ঘনের পরিকল্পিত চেষ্টা বলা হয়।

জেরুজালেমের প্রাচীর ঘেরা পুরোনো শহর ও এ অঞ্চলের অনেকটা অংশ ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে দখল করে নেয় ইসরাইল। এরপর ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেমে দখল সম্প্রসারিত করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনও এর স্বীকৃতি দেয়নি।

জেরুজালেমের মসজিদে আকসা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির পরই এই মসজিদকে মুসলমানরা মর্যাদা দেন।

অপরদিকে আল আকসায় অবস্থিত ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে পরিচিত স্থাপনাটি ইহুদিদের কাছে পবিত্র। এখানে ইহুদিরা তাদের প্রধান ধর্মীয় উপসনালয় থাকার দাবি করেন।

১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর জেরুজালেম শহরের পশ্চিম অংশ দখল করে নেয় ইসরাইল। পরে ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর মসজিদে আকসাসহ পূর্ব জেরুজালেম ইসরাইল দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক আইনে অধিকৃত ভূমি হিসেবে বিবেচিত হলেও ইসরাইল শহরটিকে একীভূত করে নেয় এবং অখণ্ড জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। বিভিন্ন সময় শহরটিতে থাকা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুদিদের আবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে ইসরাইল কর্তৃপক্ষ।