যে স্বপ্ন সত্য হয়
মানবজীবনের একটি বড় অংশ ঘুমে অতিবাহিত হয়। স্বপ্ন ঘুমন্ত জীবনের অপরিহার্য অংশ। কাজেই স্বপ্ন দেখা মানুষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঘুমন্ত অবস্থায় ইন্দ্রিয় স্থিমিত হলেও পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয় না। তখন নানারূপ কল্পনাশ্রয়ী চিন্তা ও দৃশ্য উদিত হয়। এসব দৃশ্য দেখাকে স্বপ্ন বলা হয়।
স্বপ্নের প্রকারভেদ
স্বপ্ন সাধারণত তিন প্রকার। এক. ভালো স্বপ্ন, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। দুই. ভীতিপ্রদ স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে প্ররোচনামূলকভাবে দেখানো হয়। তিন. মানুষের চিন্তা-চেতনার কল্পচিত্র, যা স্বপ্নের আকারে প্রকাশ পায়। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘স্বপ্ন তিন প্রকার। এক. ভালো স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। দুই. ভীতিপ্রদ স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তিন. যা মানুষ চিন্তা-ভাবনা ও ধারণা অনুযায়ী দেখে থাকে।’ –সুনানে আবু দাউদ : ৫০২১
যাদের স্বপ্ন সত্য হয়
নবী-রাসুলদের স্বপ্ন সত্য হয়। স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে অহি অবতরণের অন্যতম পদ্ধতি। স্বপ্নের মাধ্যমেও মহান আল্লাহ তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন- হজরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করার বিষয়টি ইবরাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে জানানো হয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছেন। -সুরা সাফফাত : ১০২-১০৫
নবী-রাসুল ছাড়া যে যত সত্যবাদী হয় তার স্বপ্নও তত সত্য হয়। এর কারণ প্রথমত, প্রকৃত সত্যবাদী মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণায় সত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ফলে তারা কল্পনাপ্রসূত অবান্তর স্বপ্ন দেখে না। দ্বিতীয়ত, শয়তান সত্যবাদী মানুষ থেকে দূরে থাকে। ফলে শয়তানের পক্ষ থেকে আসা উদ্ভট স্বপ্নও তারা দেখে না। তাই সত্যবাদী মানুষের স্বপ্ন সত্য হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে যত সত্যবাদী, তার স্বপ্ন তত সত্য হবে।’ –সুনানে আবু দাউদ : ৫০২১
যে স্বপ্ন সত্য হয়
স্বপ্নে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখা যায়। সুন্নাহর অনুসরণের মাধ্যমে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা গভীর হলে এবং বেশি বেশি দরুদ-সালাম পাঠ করলে মহান আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখাতে পারেন। স্বপ্নে রাসুল (সা.)-কে দেখার অর্থ প্রকৃতই তাকে দেখা। কারণ শয়তান নবী করিম (সা.)-এর আকৃতি ধারণ করতে পারে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার নামে নাম রেখো। তবে আমার উপনামে নাম রেখো না। আর যে স্বপ্নে আমাকে দেখে সে আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। আর যে আমার ওপর মিথ্যা অপবাদ দেয় সে জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ –সহিহ বোখারি : ৫৮৪৪
ভালো স্বপ্ন দেখলে যা করতে হয়
এক. আল্লাহর প্রশংসা করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে। দুই. প্রিয়জনদের সুসংবাদ হিসেবে জানাবে। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা তার ভালো লাগে, তাহলে সে বুঝে নেবে যে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সে এ স্বপ্নের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করবে আর অন্যকে এ ব্যাপারে জানাবে।’ –সহিহ বোখারি : ৬৫৮৪
খারাপ স্বপ্ন দেখলে যা করতে হয়
এক. তিনবার বাম দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে। দুই. স্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে তিনবার ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রজিম’ বলবে। তিন. পার্শ্বপরিবর্তন করে ঘুমাবে। চার. অন্যের কাছে বলবে না এবং নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবে না। পাঁচ. স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভেঙে গেলে উঠে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে, তিনবার শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং যে পাশে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে।’ –সহিহ মুসলিম : ৬০৪১
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘...যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তাহলে উঠে নামাজ পড়বে এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা করবে না।’ -সহিহ মুসলিম : ৬০৪২
তবে স্বপ্ন ইসলামি শরিয়তের কোনো দলিল নয়। কিন্তু সত্যবাদী মুমিনের ভালো স্বপ্ন সুসংবাদ হয়ে থাকে। ভীতিকর স্বপ্ন দেখলে ভয় না পেয়ে মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। স্বপ্নের মনগড়া ব্যাখ্যা বানিয়ে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে পবিত্র অবস্থায় দোয়া-কালাম পড়ে ঘুমালে এবং অসময়ের ঘুম পরিহার করলে দুঃস্বপ্ন থেকে বেঁচে থাকা যায়।