ভোটাধিকার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্ব
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট দেওয়া স্বাক্ষ্য প্রদানের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনের সূরা আল মায়েদার ৬ থেকে ৯ আয়াতের আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয় থেকে জানা যায়, আরবি ‘শাহাদাত’ শব্দ থেকে বাংলায় স্বাক্ষ্য শব্দের উৎপত্তি। বাংলায় শব্দটি স্বাক্ষী বা স্বাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শাহাদাত কিংবা স্বাক্ষী সম্পর্কে জানা অতিব জরুরি ও অত্যাবশ্যক। আজকাল শাহাদাত তথা স্বাক্ষ্য দানের যে অর্থ সর্বসাধারণের মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ লাভ করেছে, তা শুধু মামলা-মোকাদ্দমায় কোনো বিচারকের সামনে স্বাক্ষ্য দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু কোরআনে কারিম ও সুন্নাহর সর্বপরি ইসলামের দৃষ্টিতে ‘শাহাদাত’ শব্দটি আরও ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়। এতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদিসহ প্রচলিত সব ধরনের নির্বাচনে ভোট দেওয়া এক ধরনের স্বাক্ষ্য। এতে ভোট দাতার পক্ষ থেকে স্বাক্ষ্য দেওয়া হয়, আমার জানামতে তিনি কিংবা অমুক লোক ব্যক্তিগত যোগ্যতা, সততা ও বিশ্বস্ততার দিক দিয়ে এ সমাজ কিংবা জাতির প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ্য রয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়াও।’ -সূরা আন নিসা: ১৩৫
বর্ণিত আয়াত নিয়ে ধীর মস্তিস্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায়, আমাদের দেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ক’জন এমন আছেন- যাদের ক্ষেত্রে এ স্বাক্ষ্য সত্য ও বিশুদ্ধ হতে পারে?
ইসলাম মনে করে, ভোট প্রদানের অর্থ হলো- দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে নিজের সমর্থন তথা স্বাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা দলকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনোনীত করা। তবে এক্ষেত্রে ইসলামের কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর জন্য সত্যের স্বাক্ষ্য প্রতিষ্ঠা করো।’ -সূরা আত তালাক: ২
ইসলামের আলোকে ভোট প্রদানকে চারটি বিষয়ের সমষ্টি বলা যায়। এক. দায়ত্ববদ্ধতা। দুই. স্বাক্ষ্য দেওয়া। তিন. সুপারিশ। চার. প্রতিনিধিত্বের অথরিটি প্রদান তথা সম্মিলিত অধিকার সম্পর্কে ওকালতি করা।
ইসলামি শরিয়তে উপরোক্ত চারটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, প্রতিটি মানুষ আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কোনো না কোনো বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত। প্রত্যেকেরই একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে। এ দায়বদ্ধতার বিষয়ে কিয়ামতের দিন প্রত্যেককেই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই কিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
অপরদিকে কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরির এবং রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য প্রতিনিধিত্বের সনদ দেওয়ার মানে হচ্ছে- প্রতিনিধিত্ব দানকারী ভোটার প্রার্থীর ভবিষ্যত সব কার্যকলাপের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিচ্ছেন। এমনিভাবে সুপারিশের বিষয়টিও প্রনিধানযোগ্য।
ভোট দেশের প্রতিটি নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট ব্যক্তির নিজস্ব মতামত কিংবা জনমত প্রতিফলনের একটি গণতান্ত্রিক মাধ্যম ও পদ্ধতিবিশেষ। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ভোটের প্রয়োজন হয়। রাজনীতিতে ভোট এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একজন প্রার্থী গণতান্ত্রিকপন্থায় সরকার ব্যবস্থার কোনো না কোনো পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
যারা ভোট প্রয়োগ করেন তাদেরকে ভোটার বলা হয়। সে হিসেবে বলা চলে, জনপ্রতিনিধিদের নিয়োগকর্তা ভোটাররা।
এ বিষয়ে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে দায়িত্বশীল মুসলিম জনপ্রতিনিধি, সে যদি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা এবং খেয়ানতকারী অবস্থায় মারা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা তার জান্নাতে প্রবেশ করা হরাম করে দেবেন।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম