আখেরি চাহার শোম্বা নিয়ে কিছু কথা
আরবি সফর মাসের আজ ২৭ তারিখ। এদিন পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা পালন করা হয়। আখেরি চাহার শোম্বা অর্থ শেষ বুধবার। আখেরি চাহার শোম্বা বলে সফর মাসের শেষ বুধবারকে বোঝানো হয়। কিছু অনির্ভরযোগ্য গ্রন্থে এদিনটির কিছু ফজিলতের বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামি শরিয়তে যার কোনোই ভিত্তি নেই।
এসব গ্রন্থে বলা হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ দিকে একবার এক ইহুদির জাদুর কারণে ভীষণ অসুস্থ হন। বলা হয়, এই দিনে একটু সুস্থতা বোধ করে গোসল করেন ও মসজিদে জামাতে শরিক হন। খুশি হয়ে হজরত উসমান (রা.) তার নিজ খামারের ৭০টি উট জবাই করে গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। খুশিতে আত্মহারা সাহাবিগণ রোজা রেখে ও নফল নামাজ আদায় করে আনন্দ প্রকাশ ও শোকরিয়া আদায় করেছিলেন। সুতরাং এটা মুসলমানদের খুশির দিন এবং তা উদযাপনের একটি দিবস।
তাই অনেকেই সফর মাসের আখেরি চাহার শোম্বা বা শেষ বুধবারকে শোকরিয়া দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। কিন্তু পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে এগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন। যেমন ভিত্তিহীন ওপরে উল্লিখিত ঘটনা। এর কয়েকটি কারণ হলো-
এক. রাসুলে কারিম (সা.)-এর ওপর এক ইহুদি জাদু করেছিল। এটা ছিল হুদাইবিয়ার সন্ধির পরে সপ্তম হিজরির মহররম মাসের প্রথম দিকের ঘটনা। এই জাদুর প্রভাব কত দিন ছিল, সে সম্পর্কে দুটি বর্ণনা রয়েছে। এক বর্ণনায় ছয় মাসের কথা এসেছে, অন্য বর্ণনায় এসেছে ৪০ দিনের কথা। তবে যাই হোক, সুস্থতার তারিখ কোনোভাবেই ১১ হিজরির সফর মাসের আখেরি চাহার শোম্বা বা শেষ বুধবার হতে পারে না।
দুই. এ তথ্যও সঠিক নয় যে, বুধবারের পর রাসুল (সা.) আর গোসল করেননি। কেননা এরপর এক রাতে এশার নামাজের আগে গোসল করার কথা সহিহ হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। আর এ কথাও ঠিক নয় যে বুধবারের পর সুস্থতায় কোনোরূপ উন্নতি হয়নি। বরং এরপর আরেক দিন সুস্থতাবোধ করেছিলেন এবং জোহরের নামাজে শরিক হয়েছিলেন। এমনকি সোমবার সকালেও সুস্থতাবোধ করেছিলেন। যার কারণে হজরত আবু বকর (রা.) অনুমতি নিয়ে নিজ ঘরে চলে গিয়েছিলেন।
তিন. রাসুলে কারিম (সা.)-এর সুস্থতার কারণে খুশি হওয়া কিংবা তার সুস্থতার সংবাদ পড়ে আনন্দিত হওয়া প্রত্যেক মুমিনের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এ কথা দাবি করা প্রমাণিত নয় যে, সাহাবায়ে কেরাম কিংবা পরবর্তী যুগের মনীষীরা সে খুশি প্রকাশের জন্য উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন কিংবা একে উদযাপনের দিবস ঘোষণা করেছেন। এ দাবির সপক্ষে দুর্বলতম কোনো দলিলও বিদ্যমান নেই।
চার. রাসুলে কারিম (সা.)-এর ওপর অনেক মুসিবত এসেছে। আল্লাহতায়ালা তাকে নাজাত দিয়েছেন। তায়েফ ও উহুদে আহত হয়েছেন, আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থ করেছেন। একবার ঘোড়া থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছেন, যার কারণে মসজিদে যেতে পারেননি, আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থ করেছেন। তার সুস্থতা লাভের এ সব আনন্দের স্মৃতিগুলোতে কি দিবস উদযাপনের কোনো নিয়ম আছে? তাহলে আখেরি চাহার শোম্বা যার কোনো ভিত্তি নেই, তা কীভাবে উদযাপনের বিষয় হতে পারে?
আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করার ক্ষমতা দান করুন এবং সব ধরনের রসম-রেওয়াজ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক