যুক্তরাষ্ট্রে আইটিভি ইউএসএ-এর সিরাত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যুক্তরাষ্ট্রে আইটিভি ইউএসএ-এর সিরাত কনফারেন্সের অতিথি ও আয়োজকবৃন্দ

যুক্তরাষ্ট্রে আইটিভি ইউএসএ-এর সিরাত কনফারেন্সের অতিথি ও আয়োজকবৃন্দ

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্লোবাল দাওয়াহ টেলিভিশন আইটিভি ইউএসএ-এর উদ্যোগে আড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে সিরাত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কুইন্সের ডিটমার্স বুলেভার্ডে অবস্থিত লাগোর্ডিয়া প্লাজা হোটেলে বিশাল এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।

কনফারেন্সে ছিল বিশ্বখ্যাত কারিদের কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, রাসুল (সা.)-এর জীবন নিয়ে আলোচনা, দোয়া-মাহফিল, ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী, সিরাত বইমেলা এবং অ্যাওয়ার্ড প্রদান।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বখ্যাত কারি শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী, শায়খ হাসান সালেহ, ইমাম শামসী আলী, শায়খ ওয়ালিদ, ড. জাকির আহমেদ, কারি নজরুল ইসলাম, কারি ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ডা. মো. ওয়াহিদুর রহমান, কণ্ঠশিল্পী ইকবাল হোসাইন জীবন এবং কারি আবদুল্লাহসহ আরও অনেকে।

নিউইয়র্ক সিটির বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও জমকালো এই কনফারেন্সে বিপুল পরিমাণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন কারি শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী ও অন্যান্য কারিরা। রাসুলের শানে নাত পরিবেশন করেন ইকবাল হোসাইন জীবন।

অনুষ্ঠানের আকর্ষণ ছিল কারিদের তেলাওয়াত

সিরাত নিয়ে আলোচনায় বক্তারা বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শুধু জানা নয়, তার জীবনকে আমাদের জীবনে এপ্লাই করার চেষ্টা করতে হবে। যে যেখানে যে অবস্থায় আছি, আমরা যেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অনুসরণ করি। আমরা সবসময় আল্লাহকে ভালোবাসার কথা বলি। আসলে আল্লাহকে ভালোবাসা মানেই হলো তার রাসুলকে অনুসরণ করা।

অনুষ্ঠানের দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত নিউইয়র্কের বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা থেকে আগত খুদে শিক্ষার্থীরা কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের মুসলিম অ্যাডভাইজারি বোর্ডের মেম্বার, আইটিভি ইউএসএ-এর পৃষ্ঠপোষক ডা. মো. ওয়াহিদুর রহমান ডিডিএস। তিনি মিডিয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনায় বলেন, আইটিভি গত ৮ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীজুড়ে যে দাওয়াতের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আইটিভির যে কনটেন্ট সেটা সাধারণ মুসলমানের জন্য বিরাট উপকারী। অন্যান্য সবার জন্য এই টেলিভিশন জ্ঞানার্জনের দ্বার উন্মোচন করেছে।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায়ে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ কারি, নিউজার্সির মসজিদ দারুল ইসলাহর পরিচালক এবং ইমাম ও খতিব শেখ ওয়ালিদ আল বারদাউইশ।

দ্বিতীয় পর্যায়ে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন তাজবিদের ওপর বিশেষজ্ঞ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ কারি শেখ নাদি। তিনি তাজবিদের বিভিন্ন স্টাইলসহ কোরআন তেলাওয়াত করে শোনান।

ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনী

অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব নিউইয়র্কের ইমাম ও খতিব, রাওদা ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ড. জাকির আহমেদ।

উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন আইটিভির পৃষ্টপোষক, হিলসাইড ইসলামিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ভুঁইয়া।

অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কারি শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। দীর্ঘ সময় ধরে অসাধারণ ভঙ্গিতে, বিভিন্ন পঠন পদ্ধতিতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। সবশেষে কোরআন তেলাওয়াত করেন আমেরিকার শীর্ষ কারি উসতাজুল কুররা শায়খ হাসান সালেহ।

অনুষ্ঠান শেষে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক ড. আবু জাফর মাহমুদ। বক্তব্যে তিনি প্রিয় নবীর আদর্শ অনুযায়ী দেশপ্রেম এবং আগামী দিনের নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সাইটেশন প্রদান করা হয়। এর পাশাপাশি আইটিভির পক্ষ থেকে সাইটেশন প্রদান করা হয় ড. আবু জাফর মাহমুদ এবং শায়খ আহমেদ বিন ইউসুফ আল আজহারীকে।

দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মসজিদ আত তাওহিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা কারি ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দ্বিতীয় পর্বে সিরাহ ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনীতে অংশ নেন অতিথিরা। কনফারেন্সের মধ্যে আয়োজিত বইমেলায় অংশ নেয় দারুল আহনাফ, ইলহাম ইনস্টিটিউট, মসজিদ তাওহিদ, পিপল এন টেক, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, দাওয়াহ ইউএসএ, আইটিভি ইউএসএসহ অন্যান্য স্টল।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি, দর্শক-শ্রোতা, স্পন্সরসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান আইটিভি ইউএসএ-এর সিইও মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

   

দোষীদের শাস্তি না হলে কওমি মাদ্রাসা ধ্বংস হয়ে যাবে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের জরুরি বৈঠক, ছবি : সংগৃহীত

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের জরুরি বৈঠক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে কাউকে বহিষ্কারের জন্য নৈতিক স্খলন, আর্থিক কেলেঙ্কারি ও যোগ্যতার অভাব থাকতে হয়। কিন্তু মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার অপরাধ কী? আমরা এখানে মাওলানা ওবায়দুল্লাহর পক্ষে কথা বলতে আসিনি, আমি মজলুমের পক্ষে এসেছি। দোষীদের শাস্তি না হলে কওমি মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে। পটিয়া মাদ্রাসার ঘটনা কোনো মতানৈক্য নয়, এটা হিংসুকদের হিংসা; এটা মেনে নেওয়া যায় না।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মিয়াখান নগরস্থ জামিয়া মোজাহেরুল উলুমে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর সাধারণ পরিষদ, মজলিসে শূরা ও পরীক্ষা কমিটির এক জরুরি যৌথ-অধিবেশনে পটিয়া মাদ্রাসার মজলিসে শূরার সদস্য ও আল্লামা সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.)-এর সাহেবজাদা মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী এসব কথা বলেন।

বোর্ড সভাপতি, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার পৃষ্ঠপোষক ও মজলিসে শূরার সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক নদভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন মাদ্রাসার তিন শতাধিক প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মজলিসে শূরার সদস্য ও দেশের শীর্ষ আলেমরা উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা সুলতান যওক নদভী বলেন, আমি পটিয়ার সন্তান, মুরব্বিদের সান্নিধ্য পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা ইত্তেহাদের মহাসচিব ও পটিয়া মাদ্রাসার বৈধ মুহতামিম।

সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত ২৮ অক্টোবর পটিয়া মাদ্রাসায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা নজিরবিহীন, এ ঘটনা মাদ্রাসার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ভূলণ্ঠিত করেছে। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার বিরুদ্ধে অন্যায় হয়েছে, এর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণে তাকে সহযোগিতা এবং মাদ্রাসার হেফাজতে সকলে কাজ করুন।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মাওলানা সগির আহমদ চৌধুরী কর্তৃক পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। বোর্ড মহাসচিবের নির্দেশক্রমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের জরুরি যৌথ-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অধিবেশনে পটিয়া মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা, দোষীদের তদন্তপূর্বক শাস্তি এবং মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

সভায় জামিয়া সিলোনিয়া ফেনীর নায়েবে মুহতামিম মুফতি আহমদুল্লাহ কাসেমী বলেন, কওমি মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটা দুষ্কৃতিকারী মহল উস্তাদদের সঙ্গে বেয়াদবি করে নিজেদের বিপ্লবী বলে জাহের করছে। তাদেরকে এখনই রুখে না দিলে কওমি মাদ্রাসাসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে। পটিয়ার ঘটনায় উস্তাদদের সঙ্গে বেয়াদবির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে, যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ইন্দন যুগিয়েছে তারা যত বড়োই হোক না কেন তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

জরুরি অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ২৮ অক্টোবর পটিয়া মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী হামলা ও মহাপরিচালককে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করা হয় এবং ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে গত ৩ নভেম্বর পটিয়ার ডাক বাংলোয় অনুষ্ঠিত মাদ্রাসার মজলিসে শূরার সিদ্ধান্তসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়, চট্টগ্রাম শহরে অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ইত্তেহাদের যাবতীয় কার্যক্রম চলবে, যথানিয়মে বোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং অস্থায়ী কার্যালয় নির্ধারণ ও পরীক্ষা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যনির্বাহী পরিষদকে ক্ষমতা দেওয়া হয়।

বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হওয়া অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন জামিয়া মোজাহের উলুমের মহাপরিচালক মাওলানা লোকমান হাকিম, ইত্তেহাদের সহ-সভাপতি ও জামিয়া পটিয়ার মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ শফীক, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আল-মোবারক, ফেনী সিলোনিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুদ্দীন ও জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী ও মাওলানা হাসান মুরাদাবাদী প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন ইত্তেহাদের সহ-সভাপতি মাওলানা ফুরকান উল্লাহ খলীল, মাওলানা হাফেজ সালাহুল ইসলাম, মাওলানা মুসলিম উদ্দীন, মাওলানা আফসার উদ্দীন চৌধুরী, মাওলানা মুফতি এনামুল হক, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুহসিন শরীফ ও মাওলানা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

;

সম্পর্ক রক্ষা না করার পরিণাম ভয়াবহ



মুফতি আতিকুর রহমান
মানুষে মানুষে যে রক্তের বন্ধন ও আত্মার সংযোগ তা ছিন্ন করলে পরাক্রমশালী আল্লাহর অভিসম্পাত অবধারিত, ছবি : প্রতীকী

মানুষে মানুষে যে রক্তের বন্ধন ও আত্মার সংযোগ তা ছিন্ন করলে পরাক্রমশালী আল্লাহর অভিসম্পাত অবধারিত, ছবি : প্রতীকী

  • Font increase
  • Font Decrease

সমাজে সম্পর্কহীনতা বাড়ছে। বাড়ছে বিচ্ছিন্নতা। মানুষ সংযোগহীন হয়ে পড়ছে আপন মানুষ থেকে। পরস্পর মুখ দেখা হয় না। কথা বন্ধ দীর্ঘদিন। ঝগড়া-কলহ ও বিবাদ-বিরাগে বিদ্বেষপ্রসূত কার্যক্রম মানুষকে শুধু মানুষ থেকেই বিচ্ছিন্ন করছে না, বিচ্ছিন্ন করছে মহান আল্লাহ থেকেও।

সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা মানুষের মাঝে নানাভাবে বন্ধন স্থাপন করেছেন। তিনি মানুষের মাঝে স্থাপিত বন্ধনকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘(হে বন্ধন!) যে ব্যক্তি তোমাকে সংযুক্ত রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব। আর যে ব্যক্তি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করব।’ -সহিহ বোখারি

অনেক সময় সামান্য মান-অভিমানে পরস্পরে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায়শই দেখা যায়- ভাই ভাইয়ের সঙ্গে, বোন ভাইয়ের সঙ্গে, সন্তান পিতা-মাতার সঙ্গে, বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে কিংবা সহকর্মী সহকর্মীর সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। শরিয়তে গ্রহণীয় কারণ ছাড়া কোনো মুসলমানের জন্য অন্য মুসলমানের সঙ্গে এভাবে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা বৈধ নয়। এতে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় এবং উভয় জগতে বয়ে আনে ভয়াবহ পরিণাম।

শরিয়ত মান্যতা দেয়, এমন কারণ থাকলে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা যাবে। উদাহরণস্বরূপ- কোনো ব্যক্তি লাগাতার কবিরা গোনাহে লিপ্ত হলো কিংবা একেবারেই নামাজ, রোজা বা ইসলামের মৌলিক কোনো বিষয় পরিত্যাগ করল, তাহলে এমন ব্যক্তিকে শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী বুঝাতে হবে। যদি সে এই বিষয়ে নিজেকে সংশোধন না করে তাহলে সংশ্লিষ্ট কারণে তার সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা বৈধ। এমন কারণ ব্যতিত তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বন্ধ রাখা বৈধ নয়।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলমানের জন্য তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের অধিক কথাবার্তা বন্ধ রাখা বৈধ নয়।’ -সহিহ মুসলিম

পরস্পর সম্পর্ক নষ্ট করার মাধ্যমে মানুষ কেবল নিজের ক্ষতিই করে। নিজের আখেরাত কলঙ্কিত করে। এতে আল্লাহর সঙ্গে যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয় তাতে পরকালের প্রাপ্তির খাতা থাকে সওয়াবশূন্য। কেননা সম্পর্ক ছিন্নকারীর নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ কোনো নেক আমলই মহান আল্লাহ গ্রহণ করেন না। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে আল্লাহর নিকট উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না।’ -সহিহ বোখারি

হাদিসের অপর বর্ণনায় এসেছে, ‘এমন লোকদের আমলসমূহকে অপেক্ষমান রাখা হয়। যদি তারা পারস্পরিক সম্পর্ক সংশোধন করে নেয় তাহলে তা গ্রহণ করা হয়।’ উদাহরণস্বরূপ- কারো সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ রাখা কিংবা সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপ্তি যদি পঁচিশ বছর দীর্ঘ হয় তাহলে এই পঁচিশ বছরে আদায়কৃত কোনো ইবাদতই মহান আল্লাহর কাছে কবুল হয়নি। যদি পঁচিশ বছর পর তাদের সম্পর্ক সংশোধন করে মিলমিশ হয়ে যায় তাহলে আল্লাহতায়ালা পঁচিশ বছরের সব ইবাদত কবুল করে নেবেন।

সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি সম্পর্কে মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা দুটি অপরাধের শাস্তি দুনিয়াতেই দেবেন। উপরন্তু আখেরাতের শাস্তি তো থাকবেই। অপরাধ দুটি হলো- অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা।’

মানুষে মানুষে যে রক্তের বন্ধন ও আত্মার সংযোগ তা ছিন্ন করলে পরাক্রমশালী আল্লাহর অভিসম্পাত অবধারিত। বধিরতা ও দৃষ্টিহীনতা এ অপরাধের ঘোষিত দণ্ড। আর পরকালে থাকবে অগ্নিকুণ্ডে অঙ্গার হওয়ার যন্ত্রণা।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত দুনিয়াতে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ তাদেরকেই করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন।’ -সুরা মুহাম্মদ : ২২-২৩

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ আবাস (জাহান্নাম)।’ -সুরা রাদ : ২৫

আল্লাহতায়ালার অভিসম্পাত থেকে বাঁচতে, দুনিয়ার ইবাদত-বন্দেগিকে ফলপ্রসূ করতে এবং পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে আত্মীয়তার বন্ধন ও পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। কেউ যদি সম্পর্ক রক্ষা না করে তবুও তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সালাম দেওয়ার মাধ্যমে হলেও তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো।’ -সহিহ বোখারি

তাই পরস্পর দেখা হলে কমপক্ষে সালাম প্রদান করে কুশল বিনিময় করতে হবে। তাহলে এমন ব্যক্তি সম্পর্ক রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে। অপর ব্যক্তি সালামের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকলে এবং কুশল বিনিময়ে সাড়া না দিলে তার ইহকালের বন্দেগি বৃথা যাবে। পরকাল পণ্ড হবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি সম্পর্ক রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে না, যার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা হলে সেও সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং ওই ব্যক্তি সম্পর্ক রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে, যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে সম্পর্ক রক্ষা করে।’ -সহিহ বোখারি

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রিজিকের প্রশস্ততা ও আয়ূ বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ -সহিহ বোখারি

অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘একজন ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না, ভালোভাবে নামাজ আদায় করো, জাকাত দাও এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো।’ -সহিহ বোখারি

নিকটতম ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সামান্য অভিমানের কারণে যে নীরব দূরত্ব তৈরি হয়, তা দ্রুত দূর করতে না পারলে দিন দিন দূরত্বের পরিধি আরও বাড়ে। এক সময়ের সামান্য অভিমান বেড়ে হয়ে যায় ক্ষোভের পাহাড়। পরকাল বিবেচনায় এটা ভীষণ ভারী। মানুষ এই ভারী পাহাড় নিয়ে দুনিয়াতে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। একটুও কম্পিত হয় না। অথচ পাহাড়সম এই ক্ষোভ মানুষকে পরকালে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবে! নিকটাত্মীয়দের দূরত্ব যদি কারো মনে ভাঙচুর না ঘটায়, সম্পর্ক সংশোধন করতে না ভাবায়- তাহলে এমন মানসিকতা মানুষকে পরকালে গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে।

দূরত্বের দুটো কাজ। দূরত্ব হয়তো সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষাকে তীব্র করে অথবা আরো দূরে ঠেলে দেয়। আমাদের নিকটাত্মীয়দের দূরত্ব যেন পরস্পর সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষাকে তীব্র করে। যেন পরস্পর খোঁজ-খবর রাখা যায়। তবে তা দুনিয়ার জীবনে প্রশস্ততা আনবে এবং পরকালে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে সহায়ক হবে।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

;

জনগণকে ‘নিরব প্রতিবাদের’ আহ্বান



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের তালিমি মজলিস, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের তালিমি মজলিস, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জনমত উপেক্ষা করে নির্বাচন আয়োজন করায় আমরা তা প্রত্যাখান করেছি, দেশের আপামর জনতাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানাচ্ছি। ক্ষমতার জোরে নির্বাচনের আয়োজন করলেও জনগণ যদি ভোট দিতে না যায়, নির্বাচনের এই নাটক আলোর মুখ দেখবে না। এমতাবস্থায় জনগণকে ভোটে অংশগ্রহণ না করার মাধ্যমে ‘নিরব প্রতিবাদের’ আহ্বান জানান বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের অগ্রসর সংগঠনদের নিয়ে আয়োজিত তালিমি মজলিসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে যুব মজলিসের সভাপতি পরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী বলেন, মাওলানা মামুনুল হককে জেলে নিয়ে সরকার ভুল করেছে। মাওলানা মামুনুল হক কোনো আপস করেননি। আগামীতেও করবেন না। তার সংগঠনও জেল-জুলুমের তোয়াক্কা করে না।

যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিভাগের সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলামের পরিচালনায় তালিমি মজলিসে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হুসাইন মিয়াজী, যুব মজলিসের সংগঠন বিভাগের সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক মাওলানা রাকীবুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ বিভাগের সম্পাদক মাওলানা শরীফ হুসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা নূর মোহাম্মাদ আজিজী ও যুব মজলিস ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান।

;

মালয়েশিয়া থেকে সাইকেলে হজযাত্রা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র হজ পালনে সাইকেলে করে মক্কার উদ্দেশে বের হয়েছেন মালয়েয়িশার চার মুসলিম। ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র হজ পালনে সাইকেলে করে মক্কার উদ্দেশে বের হয়েছেন মালয়েয়িশার চার মুসলিম। ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন পবিত্র হজ পালন করতে সাইকেলে করে সৌদি আরবের মক্কায় উদ্দেশে বের হয়েছেন মালয়েয়িশার চার মুসলিম। স্থলপথে তাদের সময় লাগবে প্রায় সাত মাস। আগামী বছরের মে মাসে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তারা সৌদি আরবের মক্কায় পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময় তারা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, আমিরাতসহ ছয় দেশ পাড়ি দেবেন।

মালয়েশিয়াভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দি সান সূত্রে জানা যায়, সাইকেলে হজযাত্রা শুরু করা এ দলে রয়েছেন দেশটির সংবাদ সংস্থার সাবেক সাংবাদিক চে সাদ নরদিন (৭৩)। অন্যরা হলেন- আহমেদ মোহাম্মদ ইসা (৩৫), নোরাদিলাহ মোহাম্মদ সাপি (৩৬) ও বন গবেষণা কর্মী আবদুল হালিম তালহা (৫৬)।

তারা তাদের সাইক্লিং মিশনের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেসবুক পেজ কেমবারা মেমবুরু হিকমাহ (কেএমএইচ) জানাচ্ছেন।

সাদ নরদিন বলেন, মূলত ২০১৯ সাল থেকে সাইকেলে করে আমাদের পবিত্র হজ পালন করার পরিকল্পনা ছিল। তবে পরবর্তীতে কোভিড-১৯ সংকটের কারণে কয়েকবার এ পরিকল্পনা বিলম্ব করতে হয়।

সাইকেল ভ্রমণের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মসহ সবাইকে আমি একটি বার্তা দিতে চাই। তা হলো- একজন মালয়েশিয়ান হিসেবে আমি আমার এ বয়সেও বিভিন্ন দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে ভ্রমণ করার মতো সুস্বাস্থ্য দিয়েছেন। মক্কা যাওয়ার পুরো ভ্রমণ আমি উপভোগ করতে চাই।

তিনি আরো জানান, গত আগস্ট থেকে অন্য তিন বন্ধুসহ তারা দীর্ঘ ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ জন্য তারা বীমা ও ভিসা নেওয়ার পাশাপাশি সাইকেল চালানোর অনুশীলন এবং শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তা ছাড়া ভ্রমণকালে তাদের সবাইকে সাইকেলে করে প্রাথমিক চিকিৎসার কিট, ক্যাম্পিং সরঞ্জাম, সোয়েটার, ক্যামেরা ও সাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশসহ আনুমানিক ৬০ কেজি বহন করতে হয়েছে।

সাইকেলে হজযাত্রার একমাত্র নারী সদস্য নোরাদিলা জানান, ২০১৬ সালে তার স্বামীর সঙ্গে তিনিও সাইকেল চালিয়ে ওমরাহ করতে মক্কায় গিয়েছিলেন। তবে আগের তুলনায় এবারের সাইকেল যাত্রা পুরোপুরি ভিন্ন।

কারণ এবার আমরা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজ পালন করব। ভ্রমণকালে যেসব অতিক্রম করবে সেখানে আমরা একসঙ্গে হানিমুনেও যেতে পারি। তবে তা দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে হবে।

;