রাণী জুবাইদার বিস্ময়কর কীর্তি



উম্মে ইফফাত, অতিথি লেখক, ইসলাম
আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাদদেশে নহরে জুবাইদার অংশবিশেষ, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাদদেশে নহরে জুবাইদার অংশবিশেষ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লোকটি আজই প্রথম খলিফার প্রাসাদে এসেছেন। হেঁটে এসেছেন দজলার পাড় দিয়ে। প্রাসাদে ঢুকতে কোনো সমস্যা হয়নি, স্বয়ং রাণী তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। খাদেমরা তাকে মহলে বসিয়েছে যত্ন করেই। তিনি বসে আছেন। ওপাশের পর্দাটা মৃদু নড়ে উঠল। মৃদুস্বরে সালাম বিনিময় হলো। তারপর আলাপ-

সম্রাজ্ঞী : কেমন আছেন?
আগন্তুক : আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
সম্রাজ্ঞী : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। আপনার খবর বলুন।
আগন্তুক : কাজ সুন্দরভাবে এগোচ্ছে। ইতোমধ্যে ওয়াদি নোমান থেকে আরাফাত ময়দান পর্যন্ত খাল খনন করা হয়েছে। এখন আরেকটি শাখা হুনাইন থেকে মক্কা পর্যন্ত খনন করা হবে। সমস্যা হলো, এই এলাকায় কয়েকটি পাহাড় আছে। পাহাড় কেটেই নহরের কাজ করতে হবে। এতে প্রচুর খরচ হবে।
সম্রাজ্ঞী : আপনি কাজ চালিয়ে যান। খরচ আমি পাঠিয়ে দেব। যদি শ্রমিকদের হাঁতুড়ির প্রতিটি আঘাতের জন্য এক দিনার করে খরচ হয়, তবুও পরোয়া করবেন না। কাজ চালিয়ে যাবেন।
আগন্তুক : আপনি ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছেন না, ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লাখ দিনার খরচ হয়ে গেছে।
সম্রাজ্ঞী : আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আপনি কাজ চালিয়ে যান। আজ থেকে সব হিসাব বন্ধ। মহাহিসাবের দিনের জন্য আমি এই হিসাব ত্যাগ করলাম। সেই হিসাবের দিন আমি আল্লাহকে এই হিসাব দেবো।
এরপর আর কথা চলে না। আগন্তুক বিদায় নিলেন।

নহরে জুবাইদার অংশবিশেষ এখনও দেখা যায় মক্কায়, ছবি : সংগৃহীত

 

গল্পটি ‘নহরে জুবাইদা’ খননকালের। এটা খননে মোট ব্যয় হয়েছিল ১৭ লাখ দিনার। এতে হাজীদের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের পানির কষ্ট লাঘব হয়। আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা ও মিনার পাশ দিয়ে প্রবাহিত সেই নহরটি আজ প্রাণহীন। কিন্তু পড়ে আছে রাণী জুবাইদার মহান স্মৃতিচিহ্ন। আজও বিশ্ব মুসলিম শ্রদ্ধাভরে সেই স্মৃতি স্মরণ করেন।

রাণী জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। তিনি ১৪৯ হিজরিতে ইরাকের মসুলে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেন দাদা খলিফা আবু জাফর মানসুরের প্রাসাদে। দাদা আদর করে তাকে ডাকতেন ‘জুবাইদা’ নামে। পরে এই নামেই তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন। ১৬৫ হিজরিতে খলিফা হারুনুর রশীদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন নবী কারিম (সা.)-এর রক্তের ধারক।

বলা হয়, সম-সাময়িক দুনিয়ায় তার মতো বিদ্বান, ধর্মপরায়ণ, পরোপকারী এবং বুদ্ধিমতী নারী দ্বিতীয়জন ছিল না। কোরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস, ইতিহাস, ভূগোল, জ্যামিতি এবং ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে রাণীর পাণ্ডিত্যের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। রাণী জুবাইদা ছিলেন যেকোনো ভালো কাজে সর্বাধিক আগ্রহী এবং যেকোনো নেক ও পুণ্যের কাজে সবার চেয়ে অগ্রবর্তী।

রাজপ্রাসাদে তিনি ১০০ জন নারী হাফেজ রেখেছিলেন। তারা একজনের পর একজন কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করতে থাকতেন। ২৪ ঘণ্টা তার প্রাসাদে কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ শোনা যেত। তিনি প্রচুর দান করতেন।

মরুময় মক্কায় জমজম ছাড়া পানির তেমন উৎস ছিলো না। ফলে সেকালে হাজীরা খুব কষ্ট পেতেন। খলিফা হারুনুর রশিদের সময়ে পানির অভাব এতই তীব্র হয়েছিল যে, এক বালতি পানি ২০ দিরহামে বিক্রি করা হতো। খলিফা কর্তৃক পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনাও হাজীদেরকে পানির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি।

নহরে জুবাইদা এভাবেই পাথর কেটে বানানো হয়, ছবি : সংগৃহীত

 

১৯৩ হিজরিতে খলিফার মৃত্যুর পর রাণী জুবাইদা হজপালনে যান। নিজ চোখে পানির সমস্যা দেখে তিনি এতটাই ব্যথিত হন যে, পানির সমস্যা সমাধানে একটি খাল খননের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন। এ নহরের মাধ্যমে পানি সরবরাহের মধ্য দিয়ে হাজী ও মক্কা এলাকার খাবার পানির সমস্যা মুক্ত হয়।

আরব অঞ্চল কঙ্করময়, অনুর্বর, শুষ্ক এবং আবহাওয়া উষ্ণ। ভূপৃষ্ঠে খালের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন। তাই ভূগর্ভস্থ টানেল খনন করা হয়। জনগণ যেন খাল থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারে, এ জন্য কিছু দূর অন্তর অন্তর ভূপৃষ্ঠে পানির স্টেশন স্থাপন করা হয়। খেয়াল করুন, তখন সালটি ছিল ৮০৯। ‘নহরে জুবাইদা’ একটি প্রসিদ্ধ বাক্য। একে জুবাইদার নহরও বলা হয়। আরবি নহর অর্থ সরু, স্রোতস্বিনী, জলধারা, খাল, নালা ইত্যাদি। খালটি এমন সময়ে খনন করা হয়েছিল, যখন আধুনিক প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ছিলো না। হাজার বছরব্যাপী এ খালটি জনমানুষের সেবা করেছে।

নহরের এক শাখা ওয়াদি নোমান থেকে আরাফাত ময়দান ও অপর শাখা হুনাইন থেকে মক্কা পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। পানি যাতে সুপেয় হয়, তাই সমুদ্র বাদ দিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ি ঝর্ণা ও প্রাকৃতিক উৎস স্থায়ীভাবে ক্রয় করে সেই পানি নহরে প্রবাহিত করা হয়ে। এতে হাজী ও কৃষকদের কষ্ট স্থায়ীভাবে দূর হয়েছিল।

সেকালে মরুভূমিতে যাতায়াত ছিল দুঃসাধ্য। আধুনিক প্রকৌশল বিদ্যা ছাড়াই রাণী জুবাইদা কুফা থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত মরুভূমির ওপর ১৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেন। মানব কল্যাণে তিনি অগণিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বর্ণিত নহরটি ছাড়া তিনি মক্কায় আরও ৫টি জলাধার ও অনেক অজুখানা নির্মাণ করেছিলেন।

দাদার দেওয়া আদুরে ডাকনাম ‘জুবাইদা’ নিয়েই তিনি ইতিহাসে স্থান করে নেন। এতটাই খ্যাতি অর্জন করেন যে, অনেকে ভুলেই যান যে, তিনি হারুনুর রশিদের স্ত্রী। তার খ্যাতির সামনে হারুনুর রশিদও ম্লান। আজও অনেক মুসলিম দম্পতি শখ করে তাদের মেয়ের নাম জুবাইদা রাখেন।

এই মহীয়সী সম্রাজ্ঞী ২৬ জমাদিউল উলা ২১৬ হিজরি মোতাবেক ১০ জুলাই ৮৩১ সালে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে উচুঁ মাকাম দান করুন। আমিন।

   

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

রবের প্রিয় বান্দা হওয়ার সহজ উপায়

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্লাহর তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার মাধ্যম হলো তার মহান হুকমগুলো পালন করা। তার হুকুমগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম হুকুম হলো নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নফল নামাজ বান্দাকে আল্লাহর এতটা প্রিয় করে তোলে যে, সে যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই তখন মহান আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। বরং তার চাওয়াকে পাওয়াতে রুপান্তরিত করে দেন ।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।

আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।

আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চাই, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই।

আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

তাই যেকোনো সংকটপূর্ণ অবস্থায় কিংবা যেকোনো প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের জন্য উচিত হলো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারই কাছে ফেরা। তাতে মহান রবের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ ।

খুব গুরুত্ব সহকারে ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ আদায় করা। আর নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ (নফল) নামাজ আদায় করাকে সর্বোত্তম আমল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু হুবশী আল-খাস’আমী রা. সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর হুকুমগুলো আদায়ের মাধ্যমে, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।

;

হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের হজ ফ্লাইট আগামী ৯ মে থেকে শুরু হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইট শিডিউল।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এতথ্য জানান।

তিনি বলেন, আগামী ৯ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। দ্রুতই যাত্রীদের ফ্লাইট শিডিউল জানানো হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ৩৩৫ হজ ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার। এবারও এই তিন এয়ারলাইনস হজযাত্রীদের বহন করবে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

এদিকে, পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

;

দারিদ্র্য বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

দারিদ্রতা বা অভাব দূর করার পরীক্ষিত আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন: তোমার কি ঐ তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা এবং মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়। যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবীহ ১০০ বার পাঠ কর:

তাসবিহটি হলো : সুবহানাল্লাহি অ-বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযিম, অ-বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

যদি তুমি এই তাসবিহটি ১০০ বার পড়, তাহলে দুনিয়া তোমার নিকট অপমানিত হয়ে আসবে। ঐ সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে, আরজ করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দুনিয়া আমার নিকট এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় যাব, কোথায় রাখব! (সূত্র: আল খাছায়িছুল কুবরা, ২য় খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা)

এই তাসবিহটি যথাসম্ভব সুবহে সাদিক (শুরু) হওয়ার সাথে সাথে পাঠ করা নতুবা ফজরের, জামাআত যদি শুরু হয়ে যায় তবে জামাআতে শরীক হয়ে যাবে এবং পরে সংখ্যা পূর্ণ করে নিবে। আর যদি নামাযের পূর্বে কোনো কারনে তা পাঠ করতে না পারে বা পাঠ করতে ভুলে যায়,তাহলে সূর্য উদিত হওয়ার আগে আগেই তা পাঠ করে নিতে হবে। (সুত্র: মলফুজাতে আ’লা হযরত, ১২৮ পৃষ্ঠা)

উক্ত তাসবীহ পাঠ করার সাথে সাথে সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই আয়াতটিও পাঠ করতে পারেন।

উচ্চারণ: ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোন না কোন পথ বের করে দিবেন। এবং তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয় আল্লাহ তায়াল প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন। (সূরা-ত্বালাক, আয়াত - ১, ২)

দারিদ্রতা দূর করার আরো একটি আমলের কথা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।([বাইহাকি : শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

তবে একটি বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা বোকামি।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দারিদ্রতা বা অভাব দূর করে, সচ্ছলতাকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে দিন আমিন।

;

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;