ছবিটি মসজিদের নববির প্রবেশ পথগুলোর একটি। যেখানে দেখা যাচ্ছে থরে থরে সাজানো রয়েছে ইফতার, এমন আয়োজন মসজিদে নববিতে যাওয়ার রাস্তা, মসজিদের আঙিনা, মসজিদের চত্বর ও মূল মসজিদের ভেতরেও রয়েছে। মসজিদে নববির বরকতময় ইফতার আয়োজন।
রমজান আসলে চারদিকে যে আমেজ বিরাজ করে তা সত্যিই বিরল। মসজিদে নববিতে দৈনিক দুই লাখের বেশি মানুষকে ইফতার করানো হয়। এসব ইফতার বিভিন্ন মানুষের অংশগ্রহণে হয়ে থাকে। স্থানীয় সৌদিসহ সবাই চেষ্টা করে রোজাদারদের ইফতার করানোর সওয়াব হাসিল করতে।
বিজ্ঞাপন
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; তবে রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ -সুনানে সুনানে তিরমিজি : ৮০৭
মদিনার ইফতার আয়োজনের সব থেকে ভালো লাগার দৃশ্য হলো, যাবার পথে খুব বিনয়ের সঙ্গে ডেকে ডেকে বসানো। প্রত্যেকেই চায়, আমার দস্তরখানে কোনো রোজাদার মেহমান হোক। কেউ যদি বলে, সামনে আমাদের জন্য নির্ধারিত দস্তরখান আছে। তাহলেও বলবে, ‘এখানে খেয়ে পরে ওই দস্তরখানে যাবেন।’
বিজ্ঞাপন
বস্তুত রমজান মাস ত্যাগ ও সহমর্মিতার মাস। ত্যাগের মহিমা সারাবছর জিইয়ে থাকুক আমাদের মধ্যে।
খেলাফত আরবি শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রতিনিধিত্ব বা প্রতিনিধির পদ। অন্য অর্থে- ক. ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলনীতি ও খ. ইসলামি শাসন সংস্থা।
খেলাফত থেকেই খলিফা শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ খেলাফত সংগঠনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত নেতা বা আমিরুল মুমিনিন।
খোলাফায়ে রাশিদিন (হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.)-এই চার খলিফা) মোটামুটি এ নীতির ওপর নির্বাচিত ছিলেন।
চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর মৃত্যুর পর মুসলমানদের মধ্যে খেলাফত নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। হজরত মুয়াবিয়া (আ.) নিজের ছেলে ইয়াজিদকে তার উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করার মাধ্যমে কার্যত খেলাফতের অবসান ঘটান ও বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও পরবর্তী শাসকেরা নিজেদের খলিফা ও তাদের শাসনকে খেলাফত নামে অভিহিত করতেন।
১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্ক খলিফার পদও বিলুপ্ত করেন এবং উসমানীয় বংশের সব লোককেই নির্বাসনে পাঠান। এক বছর পর আরবে বাদশাহ হুসেন ইবনে আলী নিজেকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু ইবনে সৌদ তাকে তা ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এভাবে মুসলিম বিশ্বে খেলাফতের অবসান ঘটে।
হজরত মোয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত উমাইয়া বংশীয় খলিফারা দামেস্কে অধিষ্ঠিত ছিলেন। খারেজি ও শিয়ারা তাদের স্বীকৃতি দেননি। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয় বংশ খেলাফত অধিকার ও বাগদাদে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন। কিন্তু উমাইয়া বংশীয়দেরই একজন প্রথম আবদুর রহমান স্পেনে পালিয়ে গিয়ে ৭৮০ সালে কর্ডোভার একটি আমিরাত স্থাপন করেন, যা পরে কর্ডোভার খেলাফত বা পাশ্চাত্য খেলাফত নামে পরিচিতি লাভ করে। এটি ১০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
মুসলমানদেরই আরেকটি দল (শিয়া) ফাতিমীয় বংশ উত্তর আফ্রিকায়, বিশেষত মিসরে, ৯০৯-১১৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খেলাফত পরিচালনা করেন। হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলীয়রা বাগদাদে প্রবেশ করলে আব্বাসীয় শাসকেরা মিসরে পালিয়ে যান ও সেখানে নামমাত্র খেলাফত টিকিয়ে রাখেন। পরে ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয়-তুর্কি বংশ মিসর দখল করে এবং এই বংশের সুলতান প্রথম মুসলিম খলিফা পদবি গ্রহণ করেন।
সর্বশেষ উসমানীয় সুলতান ষষ্ঠ মোহাম্মদ (১৯১৮-২২) পর্যন্ত এই শাসকেরাই খলিফা উপাধি ধারণ করতেন।
১৯২২ সালে কামাল আতাতুর্ক ষষ্ঠ মোহাম্মদকে ক্ষমতাচ্যুত, সুলতানের পদ বিলুপ্ত ও তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। ষষ্ঠ মোহাম্মদ পালিয়ে যান ও নির্বাসনে তার মৃত্যু হয়। দেশত্যাগের পর তাকে খলিফার পদ থেকে অপসারণ করা হয়। তার জ্ঞাতি ভাই আবদুল মজিদ খলিফার পদবিতে তার স্থলাভিষিক্ত হন।
১৯২৪ সালে কামাল আতাতুর্ক খলিফার পদও বিলুপ্ত করেন এবং উসমানীয় বংশের সব লোককেই নির্বাসনে পাঠান। এক বছর পর আরবে বাদশাহ হুসেন ইবনে আলী নিজেকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু ইবনে সৌদ তাকে তা ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এভাবে মুসলিম বিশ্বে খেলাফতের অবসান ঘটে।
পৃথিবীর ইতিহাস, ঐহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক উপাখ্যানের রাজধানী সিরিয়ার দামেস্ক। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিল্প ও সাহিত্যের কেন্দ্র প্রাচীন এই শহর। উমাইয়া খেলাফত এবং বিভিন্ন সভ্যতার কেন্দ্র ছিল দামেস্ক।
দামেস্ক শহরটি দক্ষিণ সিরিয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৯০ মিটার উপরে একটি মালভূমিতে অবস্থিত। দামেস্কের প্রশাসনিক এরিয়া ২৬ হাজার বর্গ মাইলজুড়ে। মূল শহরের আয়তন ১০৫ বর্গ কিলোমিটার। শহরটি উত্তর ও পশ্চিমে কালামউন পর্বতমালা এবং পূর্বে লেবানন পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এর দক্ষিণ ও পূর্বে হাওরান এবং গোলানের আগ্নেয়গিরির উচ্চভূমি রয়েছে। মাঝখানে বারাদা নদী পুরাতন দামেস্ককে আধুনিক দামেস্ক থেকে পৃথক করেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শহরটি ট্রানজিট পয়েন্ট ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি নাকবা এবং ১৯৭৬ সালের যুদ্ধের পরে।
দামেস্ক শহরের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, দামাস্কাস অ্যাসিরীয় উৎসের একটি শব্দ, যার অর্থ একটি সমৃদ্ধ বা সমৃদ্ধ দেশ।
কেউ বলেন, শাম বিন নূহ (আ.)-এর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল শাম। এছাড়াও শাম বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- যাত আল ইমাদ, ইরামাজাতুল ইমাদ, হারব, নূরাম, দুররাতুশ-শারক, শামাতুদ দুনইয়া, শাম শারিফ, দামেস্কা, দিমাস্ক ও জেসমিনের শহর ইত্যাদি নামে পরিচিত।
খ্রিস্টপূর্ব ৯ হাজার বছরের পুরোনো ঐহিত্যবাহী শহর দামেস্ক। এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, তুফানের পর হজরত নূহ (আ.) যখন জাহাজ থেকে অবতরণ করে হিসমা পর্বত থেকে নিচের দিকে তাকালেন, তখন তার দৃষ্টি জালাব ও দিসান নামক দুটি নদীর মাঝখানে অবস্থিত পাহাড়ে পড়ে। তখন তিনি একে শহর হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দামেস্ক শহরকে গড়ে তোলেন।
শহরটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভত্যার রাজধানী ছিল। ৬৪ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে রোমান নেতা পম্পি দ্য গ্রেট সিরিয়ার পশ্চিম অংশ দখল করেন। এরপর রোমানরা দামেস্ক শহরটি দখল করে। এ সময় শহরটি প্রচুর সমৃদ্ধি অর্জন করে। এই শহরে দেশটির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ থেকে আসা পালমিরা এবং পেট্রা, সিল্ক রোড। এছাড়া এর বাণিজ্যিক রুটগুলো চীনের সঙ্গে সংযুক্ত। শহরটিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর রয়েছে।
উমাইয়া খলিফারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এটি উমাইয়া খেলাফতের রাজধানী ছিল। উমাইয়া শাসনের অবসান, আব্বাসীয়দের হাতে দামেস্কের পতনের আগ পর্যন্ত শহরটি ইসলামি খেলাফতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
উমাইয়াদের অধীনে আসার পর থেকে শহরটি আব্বাসীয়, ফাতেমি, সেলজুক এবং আইয়ুবি শাসনের কেন্দ্র ছিল। খেলাফতের অধীনে থাকা অন্যান্য অঞ্চলকে তারা এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী দামেস্ক থেকে তার বিজয়ের যাত্রার সূচনা করেন। যা মিসর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আইয়ুবী ও মামলুক শাসনামলে শহরটি সমৃদ্ধি লাভ করে। তবে উসমানীয় শাসনামলে কিছুটা জৌলুস হারায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) মিত্র তুরস্ক এবং জার্মানি দামেস্ক শহরকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯১৮ সালে সিরিয়ান আরব বিদ্রোহী বাহিনী ব্রিটিশদের সহায়তায় এটি দখল করে। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে দামেস্ক শহরকে স্বাধীন আরব সরকারের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। তবে একই বছরের জুলাই মাসে ফরাসি বাহিনীর দখল করে শহরটি। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত এখানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল।
২০১১ সালে সিরিয়ার রাজধানীতে প্রভাব পড়ে আরব বসন্তের। ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে স্বৈরাচার বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ দমনে আসাদ বাহিনী সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালায়। এরপর ১৩ বছরে কয়েক দফায় দামেস্কে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ দমনের চিত্র দেখা গেছে। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর ২০২৪-এ হায়াত আল শামের যোদ্ধাদের হাতে পতন ঘটে দীর্ঘ দিনের স্বৈরাচার আসাদ সরকারের শাসনের।
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত একটি আরব দেশ। এটি পশ্চিম এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রতিবেশী দেশগুলো হলো- উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরাক, দক্ষিণে জর্দান, পশ্চিমে লেবানন ও ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ইসরায়েল (জোলান মালভূমি)।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক (Damascus) বিশ্বের প্রাচীনতম অব্যাহতভাবে বসবাসকৃত শহরগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির মোট আয়তন এক লাখ ৮৫ হাজার ১৮০ বর্গকিলোমিটার (৭১,৪৯৮ বর্গমাইল)। এটি বিশ্বব্যাপী আয়তনের দিক থেকে মাঝারি আয়তনের একটি দেশ।
সিরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস অনুসারে ২০১১ সাল থেকে যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। ১৩ বছর যুদ্ধে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।
আর জাতিসংঘের হিসাবে যুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে নারী, শিশুসহ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। তবে সংস্থাটি বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের হিসাবে, সিরিয়া যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
সিরিয়ায় খ্রিস্টান, ইহুদি ছাড়াও সুন্নি, কুর্দি, শিয়া, শিয়া ইসমাইলিসহ বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় বসবাস করেন।
সিরিয়ায় মুসলমানদের বিজয় পতাকা উড়েছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সময়কালে।
হাদিসে মুলকে শামের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আর সিরিয়া শামের একটি অংশ। সিরিয়া শামের প্রাচীন অংশ হওয়ায় ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়ভাবে এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। ইসলামে একে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শাম শব্দটি আরবি ভাষায় একটি বিস্তৃত অঞ্চলকে বোঝায়, যা প্রাচীনকালে লেভান্ট (Levant) নামে পরিচিত ছিল। এটি বর্তমানের বেশ কয়েকটি দেশ নিয়ে গঠিত। সিরিয়া, লেবানন, জর্দান, ফিলিস্তিন (যার মধ্যে রয়েছে বর্তমান ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর)।
মুলকে শাম পবিত্র ও বরকতময় ভূমি, যা ইসলামের ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই অঞ্চলের প্রতি ভালোবাসা এবং এর শান্তিময় হওয়ায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসগুলোতে পাওয়া যায়। তিনি এসব অঞ্চলের জন্য দোয়া করেছেন। পবিত্র মক্কা-মদিনার পর যা অন্যকোনো দেশের ব্যাপারে বলা হয়নি। অনেক নবী-রাসুল, সাহাবায়ে কিরাম ও বুজুর্গদের ভূখণ্ড হিসেবে প্রসিদ্ধ এই দেশ।
শেষ যুগে শামকে ইসলামের পুনর্জাগরণ ও সংঘর্ষের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ওই ফেতনার সময় নবী কারিম (সা.) শামে অবস্থান করার কথা বলেছেন।
হজরত সালিম ইবনে আবদুল্লাহ তার পিতা আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের আগে হাজরামাওত (কিংবা হাজরামাওতের সমুদ্রের দিক থেকে) থেকে অবশ্যই একটি আগুন বের হবে এবং লোকদের একত্র করবে। সাহাবিরা বলেন, তখন আমাদের কি করার নির্দেশ দেন, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তখন তোমরা শাম অঞ্চলকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো। -জামে তিরমিজি : ২২১৭
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, শামে যদি দুর্যোগ হয়- তাহলে এটি পুরো বিশ্ববাসীর জন্য অশনিসংকেত এবং শামে সর্বদা আল্লাহতায়ালার একটি দল সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। হজরত মোয়াবিয়া ইবনে কুররা তার পিতা কুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শামবাসীরা যখন খারাপ হয়ে যাবে তখন আর তোমাদের কোনো মঙ্গল নেই। আমার উম্মতের মধ্যে একদল সব সময় বিজয়ী থাকবে, তাদের যারা লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করবে তারা কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। -জামে তিরমিজি : ২১৯২
আমাদের উচিত শামের বরকত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করা। শামের জন্য দোয়া করা, কারণ এটি একটি পবিত্র স্থান। শামের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা এবং তাদের সাহায্য করা।
সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বিজয় ভাষণে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি (এখন প্রকৃত নাম আহমেদ আল-শারা ব্যবহার করছেন) দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদ থেকে বক্তব্য দেন। তিনি সিরিয়ার জনগণকে বলেন, নতুন দেশ গড়তে হবে ‘কঠোর পরিশ্রমে।’
সিরিয়ার স্বাধীনতাকামী প্রধান সংগঠন হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) এর নেতা আল-জোলানি বলেন, বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সিরিয়ার জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক এবং এ বিজয়ের মাধ্যমে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নতুন ইতিহাস লেখা হয়েছে।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দামেস্ক দখলের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছে আল-জোলানি ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে বিজয় ভাষণ দেন। উমাইয়া মসজিদে তার ভাষণের আগে স্থানীয় জনতা তাকে মুক্তির প্রতীক হিসেবে স্বাগত জানায়।
যুদ্ধের আবহে ভোরে যখন সূর্যের আলো ফুটে উঠল, তখন সিরিয়ার জনগণ একটি নাটকীয় পরিবর্তিত দেশে ঘুম থেকে জাগে। মুক্তিকামী বাহিনী দ্রুত আক্রমণের মাধ্যমে দামেস্কে প্রবেশ করে এবং দুই যুগের বেশি সময় ধরে জগদ্দল পাথর হয়ে সিরিয়ার মসনদে বসে থাকা স্বৈরাচারী বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দেয়। আসাদ ভোরের প্রথম প্রহরে সিরিয়া ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যায় বলে রাশিয়ান মিডিয়ার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
উমাইয়া মসজিদে জড়ো হওয়া জনতার উদ্দেশে আল-জোলানি বলেন, ‘আসাদ অন্যায়ভাবে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে কারাগারে আটকে রেখেছে। আমরা সিরিয়ার জনগণ এই দেশের প্রকৃত মালিক। আমরা লড়াই করেছি, আজ আমরা এই বিজয়ের পুরস্কার পেয়েছি। সিরিয়ার কত মানুষ বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে? কত মানুষ তাঁবুতে বসবাস করেছে? কত মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে? তার হিসাব নেই। আমার ভাইয়েরা! এই মহান বিজয়ের পর পুরো অঞ্চলে একটি নতুন ইতিহাস রচিত হচ্ছে। একটি নতুন সিরিয়া গড়তে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে যা মুসলিম উম্মাহর জন্য আলোর বাতিঘর হবে।’
তিনি প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই বিজয়ের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। দয়াময় আল্লাহ আপনাদের ব্যর্থ করবেন না। এই বিজয় সব সিরিয়ানের, সবাই এই বিজয়ের অংশীদার।’
বক্তব্যে আল-জোলানি ঐক্যের ওপর জোর দেন। উমাইয়া মসজিদে দেওয়া ভাষণের ছত্রে ছত্রে এটা প্রতিফলিত হয়েছে।
লেবানন-সিরিয়া সীমান্ত থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জেইন বাসরাভি বলেন, এইচটিএস নেতার ভাষণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। তিনি এই ধারণার ওপর জোর দিয়েছেন যে, প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়। সিরিয়া সব সিরিয়ানের জন্য হওয়া উচিত, এটাই জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত।
রবিবার দামেস্কে পৌঁছে আল-জোলানি প্রথমে নামাজ আদায় করেন। পরে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পাঠ করা এক বিবৃতিতে আল-জোলানি বলেন, ‘আমরা বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় সংকল্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ২০১১ সালে শুরু করা পথ সম্পন্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সিরিয়ার জনগণের সমস্ত অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই বন্ধ করব না। ভবিষ্যৎ আমাদের এবং আমরা বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
রবিবারের এই জয় ১৩ বছরের নৃশংস যুদ্ধের পর আসে, যা আল-আসাদ পরিবারের অর্ধ শতাব্দীর শাসনেরও অবসান ঘটায়।
সিরিয়ার যুদ্ধ ২০১১ সালের মার্চ মাসে আল-আসাদের বিরুদ্ধে একটি মূলত নিরস্ত্র বিদ্রোহ হিসাবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হয়। এতে বিদেশি শক্তিগুলোর জড়িত হওয়া, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং শরণার্থী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এটা মোটেও আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, তিনি তার বার্তা প্রদানের জন্য দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদকে বেছে নেন। কোনো টিভি স্টুডিও বা সদ্য খালি হওয়া প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ নয়, বরং এক মহিমান্বিত ধর্মীয় স্থান। ১৩০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদ বিশ্বের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি এবং ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
তার ভাষণে সদ্য মুক্ত হওয়া সিরিয়ান জনগণের জন্যও একটি প্রতীকী বার্তা বহন করে। যাতে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা! এই বিজয় এসেছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কৃপায় এবং শহীদ, বিধবা ও এতিমদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। যারা কারাগারে দুর্বিষহ দিন কাটিয়েছে, তাদের কষ্টের মধ্য দিয়ে আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি।’
উমাইয়া মসজিদ থেকে আল-জোলানি একটি শক্তিশালী এবং সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি একজন সুন্নি মুসলিম, যারা সিরিয়ার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। কিন্তু সিরিয়ার এই মাটি খ্রিস্টান, দ্রুজ, শিয়াসহ ইসমাইলি সম্প্রদায়েরও আবাসস্থল। সবাই এই বিজয়ের অংশীদার
তবে এই ভাষণ শুধুমাত্র সিরিয়ানদের জন্য নয়, এটি ছিল আন্তর্জাতিক মহলের জন্যও। এটি এমন একটি বার্তা, যা ইরায়েলের তেলআবিব এবং ওয়াশিংটনে পৌঁছাবে। যেখানে জোলানি এখনও একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা হিসেবে চিহ্নিত এবং যার মাথার দাম ১০ মিলিয়ন ডলার।