জেনে নিন শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জেনে নিন শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত

জেনে নিন শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত

  • Font increase
  • Font Decrease

 

আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তারই ইবাদতের জন্য। এ মর্মে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ -সুরা যারিয়াত : ৫৬

ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভে ধন্য হতে পারে। প্রতিটি নেক কাজেই রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। সুরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার ১০ গুণ সওয়াব পাবে।’ নেক ইবাদতের প্রতিদান প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যেকোনো নেক আমলই করবে, আমার কাছে তার ১০ গুণ সওয়াব প্রস্তুত আছে।’ -হাদিসে কুদসি

১০ গুণ সওয়াব দেওয়ার এই ওয়াদা দুনিয়ার কোনো মানুষের নয়, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই করা হয়েছে। আর এটিকে কোনো বিশেষ নেকির সঙ্গেও সীমাবদ্ধ করা হয়নি; বরং বলা হয়েছে যেকোনো ধরনের নেকি, হোক তা ফরজ কিংবা নফল। হোক একবার সুবহানাল্লাহ বলা কিংবা আলহামদুলিল্লাহ বলা। তার সওয়াব ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে।

মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা তার প্রত্যেক বান্দা তারই ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে। ইবাদত মূলত দুই প্রকার। ফরজ ইবাদত, যেমন- নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত, যেমন- নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি।

মানব জাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র তার উদ্দেশ্যে। সুখে-দুঃখে একমাত্র তার ইবাদত করবে, তাকেই ভালোবাসবে। তারই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সর্বদা ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে অধিক মনযোগী হবে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ রোজা এমন একটি ইবাদত যা জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দিয়ে থাকেন।

নবী কারিম (সা.)-এর বাণী: কল্যাণকামী মুসলমানরা যেন শুধু রমজানের রোজা রেখেই থেমে না যায়, বরং অল্প কিছু রোজা রেখে পুরো বছরের রোজা রাখার মর্যাদা লাভ করতে পারে তার এক মহাসুযোগ করে দিয়ে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ফরজ রোজা পালন করল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়দিন রোজা পালন করল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’ -সহিহ মুসলিম

অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যখন রমজান মাসের রোজা রেখে তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে এই রোজার কারণে মহান আল্লাহর দরবারে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সওয়াব পেয়ে গেল। অপর এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ -মুসনাদে আহমদ

বিশ্লেষণ: যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসের ৩০টি রোজা রাখে, তাহলে তার ১০ গুণ ৩০০ রাত হবে। আর শাওয়ালের ছয় রোজার ১০ গুণ ৬০ হবে। এমনিভাবে সব রোজার সওয়াব মিলে ৩৬০ দিন হয়ে গেল। আর আরবি দিনপঞ্জির হিসাবে ৩৬০ দিনেই তো বছর পূর্ণ হয়।

শিক্ষা: হাদিসদ্বয় থেকে আমরা যে শিক্ষা পেয়ে থাকি তা হলো- শাওয়ালের ছয়টি রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত অবগত হওয়া গেল। ক্ষুদ্র আমল কিন্তু অর্জন বিশাল। বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর সীমাহীন দয়ার বহিঃপ্রকাশ। অল্প আমলেই অধিক প্রতিদান প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতাস্বরূপ এই ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মোস্তাহাব, যাতে রোজাগুলো ছুটে না যায়। কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে। অর্থাৎ জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে রোজাদার কর্র্তৃক যে ভুলত্রুটি হয়, নফল রোজা তা দূর করতে সহায়তা করে।

ছয় রোজার উপকারিতা: এ রোজা ফরজ নামাজের পর সুন্নতে মোয়াক্কাদার মতো। যা ফরজ নামাজের অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণ করে। অনুরূপভাবে শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের ফরজ রোজার অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে এবং তাতে কোনো ত্রুটি থাকলে তা দূর করে।

কখন এবং কীভাবে: শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা যাবে মাসের শুরু-শেষ-মাঝামাঝি সব সময়। ধারাবাহিকভাবে কিংবা বিরতি দিয়ে যেভাবেই করা হোক, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, শাওয়ালের ছয় রোজার সঙ্গে রমজানের কাজা রোজা আদায় হবে না। উভয় রোজাই আলাদা আলাদা রাখতে হবে। প্রথমে রমজানের কাজা রোজা রাখতে হবে, তারপর ছয় রোজা রাখবে। যদি পুরো মাসই কাজা রোজায় শেষ হয়ে যায় এবং নফল রোজা রাখার সুযোগ না পাওয়া যায়, তবুও মহান আল্লাহ বান্দার মনের আকাক্সক্ষার কারণে তাকে ওই ছয় রোজার সওয়াব দেবেন বলে আমরা আশা করি। মা-বোনদের এ দিকটি খেয়াল রাখা উচিত যে, প্রাকৃতিক কারণে প্রতি রমজানে তাদের যে রোজাগুলো কাজা হয়ে যায়, উচিত হবে প্রথমে সেই কাজা রোজাগুলো আদায় করা। এরপর শরীর সুস্থ ও সুযোগ থাকলে পূর্ববর্তী বছরের কাজা রোজা আদায় করা। যদি কোনো কাজা রোজা না থাকে, তাহলে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখাই হবে উত্তম। কারণ নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে রমজানের রোজা রাখবে সে যেন পুরোপুরি রাখে। যার ওপর কাজা রয়ে গেছে, তার রোজাগুলো পূর্ণ হয়েছে বলে গণ্য করা হবে না, কেননা সে তার কাজা আদায় করেনি।’ -মুগনি

উল্লেখ্য, শাওয়ালের রোজা হচ্ছে নফল আর রমজানের রোজা হচ্ছে ফরজ। আর রমজানের কাজা রোজা আদায় করাও ফরজ।

শেষ কথা: প্রত্যেক সুস্থ-সবল ব্যক্তির উচিত শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব হাসিল করে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভে ধন্য হওয়া। কোনো মুমিন নারী-পুরুষ যদি তার অপর কোনো ভাই-বোনকে এই রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং সে যদি তার পরামর্শে রোজা রাখেন, তবে উদ্বুদ্ধকারীও সওয়াব পাবেন। উল্লেখ্য, কেউ নফল রোজা রেখে ভেঙে ফেললে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব।

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;

মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারির সময় মৃতদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।

করোনা মহামারির সময় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

বুধবার (২৪ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপ দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। যদিও করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করাকে নিরাপদ বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।

করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সেসময় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে হবে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানরা মুসলিমদের লাশকে কেবলার দিকে মুখ করে দাফন করে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মরদেহ হিন্দুদের মতো সাধারণত দাহ করা হয়।

শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এই ঘটনার আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

;

ব্রিটিশ রাজনীতিতে মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথমবারের মতো দেশটির মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী। শাবানা মাহমুদ নামের ওই মন্ত্রী পবিত্র কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন।

এ ছাড়া আরও দুই মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। তিনি গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হয়েছেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ।

মুসলিম নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে ২০১৯ সালে ১৯ জন এমপি ছিলেন। এবারের নির্বাচনে ২৫ জন মুসলিম নির্বাচিত হয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম এমপি এবারই নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচিতদের মধ্যে ১৮ জন লেবার পার্টির, চারজন স্বতন্ত্র, দুজন কনজারভেটিভ পার্টির এবং একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের।

মুসলিম নেটওয়ার্কের দাবি, গাজার প্রতি মুসলিম ভোটারদের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। ফলে চারজন মুসলিমসহ পাঁচটি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

তারা মোট ৬৫০ এমপির প্রায় ৪ শতাংশ। তবে মুসলিমরা যেহেতু ব্রিটেনের জনসংখ্যার ৬.৫ শতাংশ, তাই হাউস অফ কমন্সে মুসলিমদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরও ১৭ জন এমপি দরকার।

নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ইসলামি মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মাসুদ শাজারেহ বলেছেন, ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলমানরা প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ব্রিটেনে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয় প্রায় এক শতাব্দী আগে। বর্তমানে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

মাসুদ শাজারেহ সম্প্রতি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা কার্যকর শক্তিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানরা। এটাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহারের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে মুসলমানদের অসন্তোষের কারণে ব্রিটিশ লেবার পার্টি কয়েকটি আসন হারিয়েছে। এই প্রভাব ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের মতো আরও সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি মুসলমানদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তা মানুষের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করে।

গত ৪ জুলাই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে লেবার পার্টি পাঁচ বছরের জন্য সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তবে গাজায় নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপারে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল মুসলমানেরা। তারা নির্বাচনে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

ব্রিটিশ জনগণ দেশটির খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দখলদার ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সরকারের সমর্থনের প্রতিবাদে ভোট দিয়েছে। এর অর্থ হলো, লেবার পার্টি বিজয় পেলেও সেটা তার নিজের নীতির কারণে পায়নি বরং বিরোধী দলের অপছন্দনীয় কিছু কাজ ও নীতির কারণে মানুষ বিদ্যমান বিকল্প ধারাটিকে বেছে নিয়েছে।

;