হজ পালন না করেও সেরা হাজি



মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, অতিথি লেখক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ আল্লাহতায়ালার খুব বড় একটি হুকুম। ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভের একটি। যার পক্ষে সম্ভব জীবনে একবার হজ করা ফরজ। এরপর নফল হজ আরও করা যায়। উমরা করা যায়। রমজানে উমরা করা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজ করার সমান। কিন্তু এ হজ ও উমরা সচেতনভাবে বুঝে শুনে ক’জন করতে পারে?

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, মানুষের ওপর আল্লাহর হক এই যে, তাদের মধ্যে যাদের পক্ষে সম্ভব তারা যেন আমার ঘরে আসে। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, কবুল হজ মানুষকে এমন করে দেয়, যেমন সে মায়ের পেট থেকে নিষ্পাপ হয়ে জন্মেছিল। তিনি আরও বলেন, এক উমরা থেকে আরেক উমরা এর মধ্যবর্তী গোনাহের কাফফারাস্বরূপ। অপর হাদিসে তিনি এও বলেছেন, সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হজ করল না, সে ইহুদি হয়ে মরুক বা নাসারা হয়ে মরুক (এ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই)।

নিষ্পাপ নবজাতকের মতো হওয়ার জন্য ইসলাম বহু পথ খোলা রেখেছে। সবসময় তওবা-ইস্তেগফার করা, এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী গোনাহের কাফফারাস্বরূপ, রমজানের রোজা ও তারাবি, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ইত্যাদিও গোনাহ মুক্তির পথ। একজন রোগী দেখতে গেলে দু’টি হজ, দু’টি উমরা ও একজন কৃতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাওয়া যায়। এটি হাদিস শরিফের কথা, সুবহানাল্লাহ।

ফরজ হজের পর নফল হজ ও উমরা যদিও সওয়াবের কাজ, কিন্তু এসবের তুলনায় আরও বেশি সওয়াবের কাজ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু নিয়ত যদি সহিহ না হয়, লোক দেখানো উদ্দেশ্য থাকে, যাকে শরিয়তে বলা হয় ‘রিয়া।’ এটি মহাপাপ। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, রিয়া হচ্ছে গোপন শিরক। নাউজুবিল্লাহ। আমাদের দেশে প্রচারের জন্য কিছু লোক নফল হজ-উমরা করে। নির্বাচনের জন্য করে। গল্প আছে, এক নেতা আলেমদের দাওয়াত করে বাসায় নিয়েছেন, নামাজের সময় হলে ঘরেই জামাত পড়ার ইচ্ছা করলেন আলেমরা। বললেন, একটি জায়নামাজ ও দু’টি পবিত্র বেডশিট হলেই চলবে। তখন নেতা বললেন, বেডশিট কেন? আমার বাসায় জায়নামাজই আছে। কাজের লোকেরা জায়নামাজ আনলে তিনি বলতে থাকেন, এটা তো তিন বছর আগের, গতবার যেগুলো আনলাম সেগুলো কই। এর আগের বারেরগুলো কই। আল্লাহর রহমতে এ পর্যন্ত ১১ বার হজ-উমরা করেছি। আলেমদের মতে, এটিও এক ধরনের প্রচার ও রিয়া। এখানে বলা হচ্ছে, হালাল উপার্জন দ্বারা নফল হজ উমরার কথা। হারাম টাকার কথা তো আলাদা। এর দ্বারা হজ-উমরা করে সওয়াবের আশা করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা কিতাবেই লেখা আছে। যেমন, সুদ ও হারাম টাকা দান করে সওয়াবের আশা করা ঈমান নষ্টের কারণ।


এক ধরনের অজ্ঞ-আবেগি লোক আছে, যারা টাকা হাতে এলেই নফল হজ ও উমরায় ছুটে যায়। তারা ভাবে না যে, সওয়াবের আশায় সেখানে গিয়ে তারা ফরজ হজ উমরাকারীদের কোটা নষ্ট করছে। টিকিট, থাকা, খাওয়া, ট্রান্সপোর্ট, হজ সম্পাদন ইত্যাদি সর্বত্র চাপ সৃষ্টি করছে। বাড়তি ভিড় তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। সহনীয় পর্যায়ে এমন নফল হজ ও উমরার অনুমোদন শরিয়তে রয়েছে বটে, তবে এমন বিত্তশালী মানুষের আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব এবং অধিক সওয়াব অর্জনের ব্যবস্থা আল্লাহ করে রেখেছেন।


দরিদ্র আত্মীয়দের সাহায্য করা, মরণব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য, গরিবদের বিয়েতে সাহায্য, অসহায় পরিবারের কাউকে বিদেশ প্রেরণ, অসচ্ছল ব্যক্তিকে উপার্জনের পথ বের করে দেওয়াসহ বহু ফরজ-ওয়াজিব দানের দুয়ার খোলা আছে। যেসব না করলে প্রকৃত মুমিন হওয়াও সম্ভব নয়। এসব বাদ দিয়ে শুধু ঘনঘন নফল হজ-উমরা অনেকের মাথায় ঢুকে গেছে। এসবই সমন্বিত ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব। ইতিহাসে এ বিষয়ে একটি ঘটনা স্মরণযোগ্য।

একবার বাগদাদের এক দরিদ্র ব্যবসায়ী বহু কষ্টে হজে যাওয়ার অর্থ জোগাড় করল। সে ছিল একজন বড় শায়খের ভক্ত ও মুরিদ। শায়খের সঙ্গে যারা সে বছর হজে যাবে, তাদের মাঝে তার নামও ছিল। রওয়ানার দিন লোকটি কাফেলার সঙ্গে যেতে পারেনি। তাকে রেখেই শায়খের কাফেলা হজে চলে যায়। লোকটির না যাওয়ার কারণটি ছিল বড়ই অদ্ভুত। হজের রওয়ানার পূর্ব মুহূর্তে সে যখন খানা খেতে বসল তখন শুকনো রুটি ও আচার ছাড়া তার ঘরে কিছু ছিল না। পাশের বাড়ি থেকে তখন গোশত রান্নার ঘ্রাণ আসছিল। লোকটি তার স্ত্রীকে বলে পাঠাল, আমার স্বামী হজে রওয়ানা হচ্ছেন। ঘরে খাবার তেমন কিছু নেই। তোমরা যদি আমাদের সামান্য তরকারি দিতে। তখন প্রতিবেশী গৃহিণী কেঁদে ফেলল। বলল, এ তারকারি ভাইকে দেওয়া যাবে না। লোকটির স্ত্রী জানতে চাইল, কেন? গৃহিণী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, সেটাও বলা যাবে না। তখন অনেক পীড়াপীড়ি করে যা জানা গেল, তা ছিল খুবই দুঃখজনক। গৃহিণী বলল, আমি ও আমার এতিম বাচ্চারা গত তিন দিন ধরে উপোস করছি। আজ অপারগ হয়ে ছেলেরা ভাগাড় থেকে মৃত পশুর কিছু গোশত এনে জীবন রক্ষার্থে একটু তরকারি পাকাচ্ছে। এটি কোনোরকম ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য আমাদের বেলায় জায়েজ হতে পারে। কিন্তু তোমাদের জন্য বিশেষ করে ভাইয়ের জন্য এ তরকারি হালাল নয়। শত ইচ্ছা থাকলেও আমরা তাকে তা দিতে পারি না।

ব্যবসায়ীর স্ত্রী খালি হাতে ঘরে ফিরে এলে স্বামী তার কাছ থেকে প্রতিবেশীর পূর্ণ অবস্থা জেনে যায়। নিজে আলেম বা মুফতি না হওয়া সত্ত্বেও সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, এবার সে হজে যাবে না। প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে হজের টাকা থেকে তাদের চলার মতো অর্থ দান করে দেয়। ছেলেদের নিজের ব্যবসায় লাগিয়ে দেয়। ছোটদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে। দীর্ঘ দিনের আশা ও কষ্ট করে জমানো অর্থ অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ায় এবং হজ করতে না পারায় তার মনে দুঃখ ছিল বটে, তবে সে মনে মনে বিশাল স্বস্তিও অনুভব করছিল। এভাবেই হজ শেষ হলো।

তার শায়খ ফিরে এলেন। তিনি মদিনা শরিফে থাকতেই স্বপ্নে দেখেছিলেন, কেউ যেন তার এই ব্যবসায়ী ব্যক্তিটিকে দেখিয়ে তাকে বলছে, এবার এই ব্যক্তিটির কারণেই সব হজযাত্রীর হজ কবুল হয়েছে। শায়খ খুব খুশি হয়ে অন্যদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের এই ব্যবসায়ী বন্ধুটিকে কি কেউ কোথাও দেখেছ? আমাদের কাফেলায় তো আসেনি। বাগদাদে ফিরে শায়খ লোকটির খোঁজ নিলেন। তার সঙ্গে দেখা করে তাকে এই মোবারক স্বপ্নের কথা বললেন এবং তাকে অভিনন্দন জানালেন। শায়খের কথা শুনে লোকটি কাঁদতে লাগল। বলল, হুজুর আমি তো এবার হজেই যাইনি। শায়খের কাছে সে না যাওয়ার কারণটিও খুলে বলল। শায়খও তখন কাঁদতে লাগলেন। বললেন, সত্যিই তুমি হজের চেয়েও বড় দায়িত্ব পালন করেছ। হাদিসে আছে, সে মুমিন নয়, যার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে আর সে নিজে পেট পুরে খায়। এতিম বিধবা প্রতিবেশীকে এ অবস্থায় রেখে তুমি হজে গেলে আল্লাহ তা পছন্দ করতেন না। হয়তো তোমার হজও কবুল হতো না। কিন্তু ঈমানের দাবি পূরণ করায়, মানবতার অমোঘ আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় হজ না করেও তুমি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হজপালনের মর্তবা লাভ করেছ। আধ্যাত্মিক জগতে তোমাকে হাজি হিসাবেই আল্লাহ স্থান দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তোমার নিয়ত নিষ্ঠা ত্যাগ ও মানবতার পরাকাষ্ঠায় তোমার উসিলায় এবারকার সব হাজির হজই কবুল করে নিয়েছেন।

লোকটি ছিল একজন সাধারণ চর্মকার। চামড়াজাত দ্রব্য প্রস্তুত ও বিক্রয়কারী। শায়খ তখন তাকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে দ্রুতই সশরীরে হজে যাওয়ার তওফিক দেবেন। আমার কাছেও তোমার মর্যাদা এখন থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের স্পষ্ট বার্তা গ্রহণ করতে হবে। আমরা কি ঐচ্ছিক হজ ও উমরায় বেশি বাড়াবাড়ি করছি কি না। আমাদের চারপাশ, দেশ-সমাজ, পরিজন, প্রতিবেশী কেমন আছে, কী খাচ্ছে, কীসব সমস্যায় ভুগছে, কতরকম চাহিদা ও অভাবে ধুকছে। এসব আমাদের জানা ফরজ, ওয়াজিব থেকে কম নয়। এসব না জানলে, এসবের দাবি পূরণ না করলে আমরা ঈমানদারই হতে পারব না। হজ ওমরা কবুল হওয়া তো দূরের কথা। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।

   

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;

হজযাত্রী কমেছে ৩৭ হাজারের বেশি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

হজ ক্যাম্পে প্রবেশ করছেন হাজিরা, ছবি: নূর এ আলম, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজের খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৮ হাজার কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন বাংলাদেশি হজপালনে যান। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজরে কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের। গত বছর হজ কোটার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কম ছিল নিবন্ধন সংখ্যা। যদিও সরকারি-বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার প্রাক-নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

কিন্তু হজ প্যাকেজের মূল্য বৃদ্ধির দরুণ কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও এবার নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। অবশেষ ৮৩ হাজার ২০৯ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেন। তন্মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৩১৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন হজপালন করবেন। আর ব্যবস্থাপনাসহ এবার হজে যাচ্ছেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার সারাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন।

যদিও এখন পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৭৭১ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন যাত্রী হজের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করে রেখেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় এবার হজের মূল খরচ বেড়েছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে মানুষদের মধ্যে। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় কমেছে হজযাত্রীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন : বদলি হজ কখন করাবেন

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের (হাব) কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজে যাওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, হজ কোটা পূরণ না হওয়ার প্রভাব তাদের ব্যবসায় পড়বে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চলতি বছর একজন বাংলাদেশিকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে গড়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হবে, যা অনেক আগ্রহীকে হজ পালনে নিরুৎসাহিত করেছে। বিমানভাড়া, সৌদি আরবে বাসাভাড়া, মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত ব্যয়সহ মোয়াাল্লিম ফি অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে মূল হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

হাব নেতাদের মতে, আগে মোয়াল্লিমের জন্য নির্ধারিত ফি ছিল এক হাজার থেকে ১২ শ রিয়াল, বর্তমানে তা করা হয়েছে পাঁচ হাজার রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিমানভাড়া করা হয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম।

তাদের মতে, হজের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের করার কিছু নেই। তবে বিমানভাড়া নির্ধারণ বা ভাড়া কম রাখার বিষয়টি সরকার হস্তক্ষেপ করে হজের খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে পারত।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা কমে দাড়ায় ৬০ হাজার ১৪৬ জনে।

জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন।

;

বদলি হজ কখন করাবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে হারামের প্রবেশ পথ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-

হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি

অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার

যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য

বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক

টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক

হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ

;