হজযাত্রীদের সেবায় সৌদি ঐতিহ্য



রাহাফ জামবি
অতীতে হজযাত্রীরা দীর্ঘসময় নিয়ে জাহাজে করে আসতেন জেদ্দায়, ছবি: সংগৃহীত

অতীতে হজযাত্রীরা দীর্ঘসময় নিয়ে জাহাজে করে আসতেন জেদ্দায়, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ষাটের দশকে বেশিরভাগ মানুষ পবিত্র হজপালন করতে আসতেন জলপথে অর্থাৎ জাহাজে। কোনো হজযাত্রীর জেদ্দাবন্দরে পৌঁছাতে চার-পাঁচ মাস সময় লেগে যেত। জেদ্দায় আসার পরে চড়তে হতো মক্কার বাসে। এ সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের যাত্রার সঙ্গী হতেন একজন মুতাওয়িফ।

মুতাওয়িফ হলেন একজন গাইড, হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী। তিনি মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের নানাভাবে, নানাক্ষেত্রে সহায়তা করেন এবং তাদের যত্ন নেন, আবাসান ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। ঐতিহ্যগতভাবে একজন মুতাওয়িফ পারিবারিকভাবে দায়িত্বটি পালন করতেন এবং এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এভাবেই রীতিটি হস্তান্তরিত হতো। একসময় এই অতীত রীতি ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।

রিয়াদের বাসিন্দা হায়াত ইদ একজন সাবেক মুতাওয়িফ। তিনি অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, এ সময়টাতে তিনি তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে, বাড়িতে ধূপ জ্বালিয়ে দূর থেকে আসা হজযাত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতেন।

ইদের দাদা একসময় হজযাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতেন এবং সেগুলো নিজেই পরিষ্কার করতেন। তিনি হজযাত্রীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সুপারভাইজার এবং অনুবাদক নিয়োগ করতেন। পরে এ দায়িত্ব বর্তায় তার ছেলে ইদের বাবার হাতে।

হায়াত ইদের বাবা জামিল আবদুর রহমান ইদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হজযাত্রীদের ‘শায়খ’ (শায়খ একটি সম্মানসূচক পদবি। এটি সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। তবে সৌদি আরবে কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞদের পদবি হিসেবেও শায়খ ব্যবহৃত হয়।) ছিলেন বলে জানান তিনি। জনসাধারণের মাঝে মুতাওয়িফদের শায়খ হিসেবেই পরিচিতি ছিল।

ইদ পরিবার বংশ পরম্পরায় হাজিদের সেবা করে আসছেন, ছবি: সংগৃহীত

হায়াত ইদ বলেন, ‘আমার দাদার পাশাপাশি দাদীও মুতাওয়িফ ছিলেন। আমার দাদা ছিলেন ‘জাভার শায়খ’ অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করতেন তিনি। আমার দাদা-দাদি মারা যাওয়ার পর আমার বাবা মুতাওয়িফের পদ গ্রহণ করেন।’

যাট ও সত্তরের দশকের সেই দিনগুলোর কথা মনে করে ৫০ বছর বয়সী ইদ বলেন, হজযাত্রীরা তার পরিবারকে চিঠি পাঠাতেন যেন তাদের আবাসনের সুযোগ হয়। হজযাত্রীদের জন্য ঈদের সময় বাড়তি খাবারেরও প্রস্তুতি নিত তার পরিবার।

শায়খরা হজযাত্রীদের হজের আচার-অনুষ্ঠান এবং তাদের কী করা উচিত সেসব বুঝিয়ে দিতেন। তাদেরকে মক্কা এবং অন্যান্য স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে করে বাড়ি ফিরে আনার দায়িত্ব ছিল তাদের।

এ সময় তার ভাই আদেল ইদ বলেন, মুতাওয়িফের ভূমিকা অতীতে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান ছিল কিন্তু এখন এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকায় পরিণত হয়েছে।

হজযাত্রীদের খাবারের প্রস্তুতি, ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যেক মুতাওয়িফকে তাদের সামর্থ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক হজযাত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হত। কেউ মাত্র ১০০ জনের দায়িত্ব নিত, আবার অনেকে ১ হাজার জনেরও দায়িত্ব নিতে পারত। তবে তাদের অবশ্যই হজযাত্রীদের ভাষা বোঝার জন্য বা তাদের সঙ্গে কথা বলতে দোভাষী নিয়োগ দিতে হত।

তিনি বলেন, প্রত্যেক মুতাওয়িফ একাই হজযাত্রীদের সেবা করতে পারতেন। তারা নির্দিষ্ট এলাকার হজযাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে সেবা প্রদানের জন্য সেসব দেশে ভ্রমণ করতেন এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়গুলো শিখে আসতেন। তাদের খাদ্যাভ্যাস, রুচি, আচার-আচরণ ও ভাষা রপ্ত করাও ছিল একজন মুতাওয়িফের বিশেষ গুণ।

ইদ পরিবার ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা হজযাত্রীদের সহায়তা করত। তাই তারা মালয় ভাষা এবং তাদের মেহমানদের পছন্দের মশলা এবং খাবার সম্পর্কে শিখেছিলেন, যেন তারা হজযাত্রীদের যতটা সম্ভব মক্কাকে নিজের বাড়ি অনুভব করাতে পারেন।

একইভাবে ৪৬ বছর বয়সী উইজদান আবদুর রাজ্জাক লুলু বুকাস উত্তরাধিকারসূত্রে মুতাওয়িফের পেশা পেয়েছেন। তিনি মালয় ভাষায় সাবলীল ছিলেন। তার বাবা এবং দাদার কাছ থেকে মালয় ভাষা রপ্ত করেন তিনি।

১৯৯৩ সালে হজযাত্রীদের সঙ্গে আবদুর রাজ্জাক লুলু বুকাস, ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, কিছু জাতীয়তা বা দেশের ভাষা অন্যদের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে আমরা সে দেশের অনুবাদক নিয়োগ দিই। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হজযাত্রীদের সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলি। কিন্তু চীনা ভাষা কঠিন, তাই আমরা চীনা যাত্রীদের জন্য একজন দক্ষ অনুবাদক নিয়োগ দিয়েছি।

বুকাস বলেন, কিছু হজযাত্রী ঈদুল আজহায় মুতাওয়িফকে উপহার দেওয়ার জন্য উপহার হিসেবে সোনা বা মুক্তা নিয়ে আসতেন। তার বাবা, আবদুল হান্নান লুলু বুকাস হজযাত্রীদের কাছ থেকে অনেক উপহার পেয়েছেন বলে তার নামের সঙ্গে লুলু যোগ করেছেন যার অর্থ মনিমুক্তা।

মুতাওয়িফ থাকা অবস্থায় ঘটা এক অবিস্মরণীয় পরিস্থিতির বর্ণনা করেন বুকাস। তিনি একজন গর্ভবতী নারী হজযাত্রীর কথা বলেন, যিনি হজে এসে বাচ্চা জন্ম দিয়েছিলেন। তিনিই তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং ওই নারী নিরাপদে সন্তান জন্ম দেন।

বুকাস বলেন, তিনি বছরের পর বছর ধরে হজের বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তবে বর্তমান সময়ে বেশ ভালোই পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, অতীতে এবং আধুনিক সময়ের হজের মধ্যে পার্থক্য হলো- যাতায়াত ও আবাসনের অসুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগে কয়েক মাস সময় লেগে যেত। যা এখন মাত্র ঘণ্টায় সমাধান হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সৌদি সরকারের প্রশাসনিক সুবিধার বিষয়টির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আরব নিউজ থেকে অনুবাদ আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম

হিজাবের জন্য অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাদ ফরাসি নারী দৌড়বিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ফরাসি নারী দৌড়বিদ সোনকাম্বা সিলা, ছবি: সংগৃহীত

ফরাসি নারী দৌড়বিদ সোনকাম্বা সিলা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফরাসি নারী দৌড়বিদ সোনকাম্বা সিলাকে হিজাব পরার কারণে প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) শুরু হওয়া প্যারিস অলিম্পিকে উড়বে ২০৬টি দেশের পতাকা। ৩২টি খেলার ৩২৯টি ইভেন্টে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবেন ১০ হাজার ৫০০ জন অ্যাথলেট। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোনকাম্বা সিলাকে যোগ দিত না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে অলিম্পিক কমিটি।

ফরাসি মুসলিম দৌড়বিদ সোনকাম্বা সিলা জানিয়েছেন, ‘হিজাব পরার কারণে তাকে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। ২৬ বছর বয়সী এই দৌড়বিদ অলিম্পিকে ৪০০ মিটার ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়ার পর ইনস্টাগ্রামে এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘মনে করুন আপনি আপনার দেশে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু আপনি উপস্থিত থাকার কোনো অধিকার পাবেন না।’

আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মুসলিম এই নারী অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে নামেন হিজাব নিয়েই। বাকিদের সঙ্গে তার স্যুটেও আছে পার্থক্য।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ফরাসি অলিম্পিক কমিটির প্রধান ডেভিড ল্যাপার্টিয়ান এর আগে বলেছিলেন, ফ্রান্সের নারী ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিকে হিজাব পরার অধিকার নেই। যদিও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের মুখপাত্র মার্তা হুরতাদো গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা সত্য নয় বলে জানিয়েছিলেন।

অলিম্পিক কমিটি তখন বলেছিল, ‘অলিম্পিক ভিলেজে শুধু অলিম্পিক কমিটির নিয়মই চলবে। আর আমরা হিজাবসহ প্রত্যেক ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

হিজাব পরেই মুসলিম নারী খেলোয়াড়রা বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া আসর অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবেন বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি।

ইউরোপে ফ্রান্সেই সংখ্যালঘু হিসেবে সর্বোচ্চ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস। যদিও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানা আইন জারি করে চলেছে।

ফ্রান্সে ইসলামি মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ইতোপূর্বে মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন মাখোঁ। এ ছাড়াও মাঁখোর আমলে মহানবী (সা.) কে নিয়ে সাময়িকীতে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশ ও ইসলাম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদ ও পণ্য বর্জনের ঘটনা ঘটেছিল।

এদিকে ফরাসি অলিম্পিক কমিটি দাবি করেছে যে, তারা হিজাব নিয়ে চলমান সমস্যার সমাধানের জন্য একটি পথ খুঁজছেন।

;

অন্যের জন্য দোয়া করার লাভ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইসলামের শিক্ষা হলো, ব্যাপকভাবে সবার জন্য দোয়া করা, ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের শিক্ষা হলো, ব্যাপকভাবে সবার জন্য দোয়া করা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেসবুক স্ক্রল করছেন, হঠাৎ দেখলেন আপনার কোনো বেকার বন্ধু ভালো একটি চাকরি পেয়ে গেছে। আপনি মনে মনে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহুম্মা বারিক! হে আল্লাহ, তার আয়-রোজগারে বরকত দিন এবং কর্মজীবনে অনেক উন্নতির তওফিক দান করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

কোনো বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার পর মন থেকে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! তার দাম্পত্য জীবন সুখ-শান্তিতে পরিপূর্ণ করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

পার্কে বা রাস্তায় হাঁটছেন, দেখলেন ফুটফুটে একটি বাচ্চা খেলা করছে। আপনি বাচ্চাটির উদ্দেশ্যে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! শিশুটিকে সুস্থ-সবল রেখে নেক হায়াত দান করুন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

বাসায় ফেরার সময় দেখলেন এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। আপনি তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার পর তার জন্য দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি লোকটিকে সুস্থতা দান করুন এবং তার জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিন।’ সঙ্গে সঙ্গে আপনার পাশে থাকা ফেরেশতা বলে উঠলো, আমিন, তোমার জন্যও এমনটাই হোক।

এগুলো কোনো কাল্পনিক কথা নয়, আমাদের সঙ্গে ঠিক এমনটাই করা হয়। এই মর্মে একটি হাদিস আছে, হজরত সাফওয়ান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা তার দোয়ার সময় আমিন বলতে থাকেন। যখনই সে তার কল্যাণ কামনা করে দোয়া করে, তখন ফেরেশতা বলেন, আমিন, তোমার জন্যও অনুরূপ কল্যাণ।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯৫

অপরের জন্য দোয়া করার মধ্যে শুধু ওই ব্যক্তিরই কল্যাণ নয়, বরং যে তার জন্য দোয়া করছেন তাকেও আল্লাহ সে রকম দান করবেন। বরং তার দোয়াটা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। কেননা সে যখন অপরের জন্য দোয়া করবে তখন একজন ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করবে। আর ফেরেশতার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আমাদের পূর্বসূরি পীর-বুজুর্গরা নিজেদের কোনো প্রয়োজন হলে তখন কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য সেই দোয়া করতেন এই আশায় যে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও এই আমল পাওয়া যায়।

কোরআন মাজিদের এই আয়াত থেকেও বোঝা যায় যে, অপরের জন্য দোয়া করার গুরুত্ব। জীবিত মৃত সবার জন্য দোয়া করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, ক্ষমা করো আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু।’ -সুরা হাশর : ১০

এ জন্য বুদ্ধিমানরা নিজের একান্ত কোনো প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হলে ওই জিনিস অন্যের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকে। তখন আল্লাহ তার সেই প্রয়োজন পূরণ করে দেন।

দেখুন, বর্তমান সমাজ হিংসা-বিদ্বেষে ভরে গেছে। আমরা অন্যের ভালো সহ্য করতে পারি না। কারও ভালো দেখলে দোয়া করা তো দূরের কথা বরং অনেকে অন্যের সুখ নষ্ট করার জন্য নানা পন্থা এমনকি জাদু-টোনার আশ্রয়ও নেয় কেউ কেউ। অথচ আল্লাহর দেওয়া বিধান কতই না চমৎকার! অন্যের ভালো চাইলে, অন্যের জন্য ভালো দোয়া করলে, তাতে বরং নিজেরই উপকার হয়। কেননা, ফেরেশতাদের দোয়া কখনও বিফল হয় না।

আরেকটি কথা, আমাদের কাছে নানা সময় নানা ব্যক্তি দোয়া চেয়ে থাকেন। বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে একান্ত দোয়ার জন্য আবেদন করে অনেকে। তাত্ক্ষণিক অনেকে তার জন্য কিছু দোয়া করে দেয়। কিন্তু নীরবে নিভৃতে যখন আমরা আল্লাহর কাছে হাত তুলি, ব্যাপকভাবে আমরা সবার জন্য দোয়া করি সাধারণত; কারও জন্য বিশেষভাবে তার প্রয়োজনের জন্য দোয়া করার প্রবণতা, আমাদের খুব কমই রয়েছে।

আমরা শুধু নিজের জন্যই আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করি। অথচ একজন মুসলমানের অনন্যতা এখানেই যে, সে অন্যের জন্য ওই জিনিস পছন্দ করবে যারা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা পছন্দ করো, তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। আরও বর্ণনায় আছে, প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করবে।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৪

;

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;