হজ যেন শেষ না হয়

  • মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কা থেকে বিদায়ের আগে এক হাজি এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন, ছবি: সংগৃহীত

মক্কা থেকে বিদায়ের আগে এক হাজি এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজ পালন শেষে হাজিরা নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন। হজযাত্রীরা হজ আদায়ের সময় আল্লাহর মেহমান ছিলেন। হজ শেষ করে যখন নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন, তখন আল্লাহর প্রতিনিধিরূপে ফিরেছেন। নিজ নিজ আবাসভূমিতে তারা ফিরে এসেছেন হজের প্রভূত বরকত নিয়ে। হারামাইন শরিফাইন, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে সাড়ে চৌদ্দশ বছর যাবৎ নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুৎবার যে পুনরাবৃত্তি হয়ে আসছে, সেই শিক্ষাকে নতুনভাবে স্মরণ করে করে তারা ফিরেছেন স্বজাতির জন্য পুরস্কার ও সতর্কতার বার্তা নিয়ে।

হাজিদের অভ্যর্থনা জানানো একটি উত্তম কাজ বরং সুন্নত আমল। খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহিন এই আমলটির ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। মুসনাদে আহমদের এক হাদিসে (হাদিস ৫৩৭১) বলা হয়েছে, ‘তুমি যখন হজ সমাপনকারীর সাক্ষাৎ লাভ করবে তখন তাকে সালাম দেবে, তার সঙ্গে মোসাফাহা করবে এবং তার নিকট ইস্তিগফারের দোয়া করবে তার ঘরে প্রবেশের পূর্বেই। কেননা সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করেছে।’

বিজ্ঞাপন

মনে রাখতে হবে, হজের কার্যাদি সমাপ্ত হয়েছে; কিন্তু হজ শেষ হয়নি। যা বাকি থাকবে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। মানুষ সারা জীবন নামাজ পড়লে নামাজি হয়। জীবনের প্রতি রমজানে রোজা রাখলে রোজা দায়িত্ব পালিত হয়। কিন্তু মানুষ যখন একবার হজ করে তো গোটা জীবনের জন্য হজের দায়িত্ব আদায় হয়। তাহলে এই এক হজ তার গোটা জীবনব্যাপী পরিব্যপ্ত। এই হজই তার গোটা জীবনের আমল। হজের নির্ধারিত কার্যাবলি যদিও সেই নির্ধারিত স্থানগুলোতে সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু হজের শিক্ষাগুলো অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার প্রেম ও দাসত্বের প্রেরণা, সতর্কতা ও পরহেজগারী, অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকা, গোনাহের কাজকর্ম ও ঝগড়া বিবাদ থেকে বেঁচে থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলো তো গোটা জীবনেই পরিব্যাপ্ত। এগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করা হজের সৌভাগ্য লাভকারীদের অবশ্য কর্তব্য।

বলা বাহুল্য, এই প্রচেষ্টার আত্মনিয়োগ করতে পারাই হলো হজ কবুল হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত এবং একথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, জান্নাতের ওয়াদা যে কোনো ধরনের হজের ওপরে নয়, মকবুল হজের ওপরই করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব যে পায়ে বায়তুল্লাহর পানে চলেছি, যে হাতে বায়তুল্লাহ স্পর্শ করেছি এবং যে ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেছি তা যেন আল্লাহর মর্জি-বিরুদ্ধ কোনো কাজে ব্যবহৃত না হয়- এই প্রচেষ্টা অবশ্যই জারি রাখতে হবে। প্রিয়তম নবীর পাকভূমির জিয়ারত-সৌভাগ্য লাভ হলো এবং তাকে সরাসরি সালাম জানানোও নসিব হলো, তো এবার তার সুন্নতবিরুদ্ধ কোনো কাজ যেন আমরা না করি।

বিজ্ঞাপন

শেষ কথা হলো, আমাদের প্রত্যেকের এই মানসিকতা হওয়া উচিত যে, হজ সারাজীবন সংরক্ষণ করব কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও হাজি উপাধির প্রয়োজন যেন বোধ না করি।

হজরত মাওলানা সাইয়েদ আহমদ শহিদ বেরেলভি (রহ.) যখন ১২৩৭ হিজরিতে তার বিশাল কাফেলা নিয়ে হজ করলেন, তখন আরাফাতের ময়দানে তার একটি দোয়া এই ছিল যে, ইলাহি, এই কাফেলার কেউ যেন হাজি উপাধিতে প্রসিদ্ধ না হয়, যাদের আপনি নিজ অনুগ্রহে হজের সৌভাগ্য দান করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তার এই দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করেছেন। সেই হজের পর বিশ বছরের কিছু অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু সেই কাফেলার কেউ হাজি উপাধিতে প্রসিদ্ধ হননি।

মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) বলেছেন, ‘সম্ভবত সাইয়েদ সাহেব (রহ.) অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই দোয়া এ জন্য করেছিলেন যে, হজ দ্বীনের একটি রোকন ও ফরজ আমল। অন্যান্য ফরজ আমল যথা নামাজ আদায়কারীকে যেমন নামাজি নামে, জাকাত আদায়কারীকে জাকাতি নামে এবং রোজা আদায়কারীকে রোজাদার উপাধিতে প্রসিদ্ধ হতে হয় না, তখন হজের ফরজ আমল আদায়কারীকে হাজি নামে কেন প্রসিদ্ধ হতে হবে? -সিরাতে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ : ১/৩৬৭