হজ ও উমরায় কেন সাদা ইহরাম পরতে হয়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ পড়ছেন উমরাকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে নামাজ পড়ছেন উমরাকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

ইসলামে পবিত্র হজ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। হজের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে- ইহরাম পরিধান। ইহরাম হচ্ছে সাদা রঙের দুইটি কাপড়, যা মিকাত (নির্ধারিত সীমারেখা) থেকে পরিধান করতে হয়। তবে আগেও পরিধান করা যায়, কিন্তু হজ বা উমরার নিয়ত করতে হয় মিকাত অতিক্রম করার আগে। মিকাত বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণকারী হজযাত্রীদের জন্য পূর্বনির্ধারিত।

আর্থিক অবস্থা, বর্ণ, উৎপত্তি দেশ এবং ভাষা নির্বিশেষে সব মুসলমানের জন্য সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড়ের পোশাক একই। অর্থাৎ চাদরের মতো দুই টুকরা কাপড়ের একটি নীচে পরবে, দ্বিতীয়টি গায়ে দেবে। হজের পাশাপাশি উমরা পালনের সময়ও ইহরামের গুরুত্ব অনেক।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি, জীবনের অনেকক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, পেশা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমতা দেখানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ড্রেসকোড বা ইউনিফর্ম প্রয়োজন হয়। যেমনটি বিভিন্ন হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, এয়ারলাইন্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে এমন ইউনিফর্ম দেখা যায়। তাই ইহরামের বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা বেশ বোধগম্য।

ইসলামের সবচেয়ে বড় সমাবেশে সারা বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম সাদা পোশাকে সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য অনুরূপ ইবাদত সম্পাদন করেন।

বিজ্ঞাপন

ইহরামের তাৎপর্য
ইহরামের তাৎপর্য অনেক। প্রথমত, সাদা রঙ পবিত্রতা, ধার্মিকতা এবং পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। ইসলাম বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা ও সরলতার বাণী প্রচার করে। এ অর্থে হজের ড্রেসকোড সত্যিকার অর্থে ইসলামের চেতনাকে চিত্রিত করে।

ইহরামের গুরুত্ব বোঝা যায় এভাবে যে, ইহরামের পোশাক ময়লা হয়ে গেলে বা তাতে তরল সুগন্ধি ব্যবহার করা হলে হজের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য ওই পোশাক পরিবর্তন করে নতুন ইহরাম বাঁধতে হয়। এই সাদা রঙ মনোযোগ পেতে এবং একটি সাধারণ পুরুষ বা নারীর মতো চেহারা এড়াতে সাহায্য করে।

ইহরামের ব্যবস্থা না থাকলে লোকেরা বিভিন্ন ধরণের কাপড় এবং রঙ পরিধান করত। এতে বিভিন্ন রঙ ইবাদতকারীদের মনোযোগ বিঘ্নিত করত। এটি তাদের অনেককে বিশিষ্ট বা লক্ষণীয় করে তুলত, যেমন যদি তারা তাদের সংস্কৃতি, দেশ এবং জাতি ইত্যাদি অনুসারে বিভিন্ন ধরণের পোশাক পরত।

ইহরামের আরেকটি সুবিধা হলো, এটি হজ পালনকারী ব্যক্তিদের আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন করার সুযোগ দেয় না। ধনী বা গরীব, রাজপুত্র বা কেরানি, কোটিপতি বা ছোট ব্যবসায়ী, সবাই একই পোশাক পরে। এভাবে, লোকেরা কোনো হীনমন্যতা বা শ্রেষ্ঠত্বের জটিলতা ছাড়াই অন্যদের মধ্যে আরও স্বাচ্ছন্দ্য এবং সমানবোধ করে ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারে।

ইহরাম এটাও বুঝায় যে, আল্লাহতায়ালা মুসলিমদেরকে সম্পদের মূল্য দিয়ে মূল্যায়ন করেন না। মহান আল্লাহর কাছে সবাই সমান, তবে তারাই তার কাছে বেশি সন্মানিত যারা ধার্মিকতায় উৎকৃষ্ট এবং সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করে।

পবিত্র কোরআনেও এই সত্যটি বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে- ধর্ম, বর্ণ, অর্থ ইত্যাদি মুসলিমদের যোগ্যতা নয়, যোগ্যতা হচ্ছে ইমান ও আমল।

উপসংহার
একইস্থানে লক্ষাধিক লোকের সঙ্গে সমবেত হওয়া এবং একই কাজ করা, একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন আমল সম্পাদন করা, একইভাবে দোয়া করা এবং একসঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চাওয়ার সারমর্ম হলো- মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য, শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগানো।

যখন বহু মানুষ একই পোশাকে বহুদিন একত্রে অবস্থান করে এবং প্রার্থনা করে, তখন তা তাদের মধ্যে সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। একই পোশাক কোড এবং ইবাদতের ধরণ যেভাবে মুসলিমরা অনুসরণ করে তা যে মহান শৃঙ্খলা প্রদর্শন করে, তা সবসময় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়।