কম্বোডিয়ায় ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে ইমামরা

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কম্বোডিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল প্রদেশ কান্দালের একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমাম আবেদ কাইয়ুম হুচা, ছবি: সংগৃহীত

কম্বোডিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল প্রদেশ কান্দালের একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমাম আবেদ কাইয়ুম হুচা, ছবি: সংগৃহীত

কম্বোডিয়া বললেই রহস্যপূর্ণ বৌদ্ধ মঠের কথা মনে হয়, কিন্তু খুব কম মানুষেরই জানা রয়েছে যে কম্বোডিয়ায় ইসলামের পদচিহ্ন রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘দ্য কিংডম অব কম্বোডিয়া।’ দেশটির উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে থাইল্যান্ড, উত্তরে লাওস, পূর্বে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে থাই উপসাগর। নমপেন কম্বোডিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর ও রাজধানী। দেশটির মোট আয়তন এক লাখ ৪১ হাজার ৩৫ বর্গকিলোমিটার।

২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মোট জনসংখ্যা এক কোটি ৬৭ লাখ ১৩ হাজার ১৫ জন। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী, ২ শতাংশ মুসলমান। তবে স্থানীয় মুসলিম সূত্রগুলোর দাবি, মুসলমানদের প্রকৃত সংখ্যা ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। মুসলিমরা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী এবং তাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কম্বোডিয়ায় বসবাসকারী বেশির ভাগ মুসলিম চ্যাম ও মালয় বংশোদ্ভূত এবং তারা সুন্নি মতাদর্শ ও শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারী। তবে জাতিগত কম্বোডিয়ানদের ক্ষুদ্র একটি অংশও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। কম্বোডিয়ায় ইসলামের প্রচার-প্রসারে দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। চ্যাম জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা কম্বোডিয়া ছাড়াও ভিয়েতনাম ও লাওসে বসবাস করে।

খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে চ্যাম জনগোষ্ঠী দক্ষিণ ভিয়েতনামের উপকূলজুড়ে চম্পা রাজ্য গঠন করে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের দাবি, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শ্বশুর ও হজরত জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-এর বাবা জাহাশ (রা.)-এর মাধ্যমে চ্যামরা ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। তিনি একদল সাহাবি নিয়ে ৬১৭ খ্রিস্টাব্দে ইন্দো-চীন অঞ্চলে সফর করেন। খ্রিস্টীয় নবম শতকে চ্যাম সমাজে ইসলাম জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে একজন চ্যাম রাজা ইসলাম গ্রহণ করলে চ্যাম জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।

বিজ্ঞাপন

১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনাম চম্পা রাজ্য দখল করলে মুসলিম চ্যামরা কম্বোডিয়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে। চ্যামদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। চ্যাম জনগোষ্ঠীর আরেক ধারা, যাদের চেভিয়া বলা হয় তারাও মুসলিম ও সুন্নি মতাদর্শের অনুসারী। তারা খমের ভাষায় কথা বলে এবং ইন্দোনেশিয়ার জাভা থেকে তাদের উৎপত্তি। চ্যামদের একটি বিশেষ ধারা ‘জাহিদ।’ যারা চম্পা রাজ্যের শাসক ও অভিজাতদের উত্তরসূরি বলে দাবি করে। রাজ্যছাড়া হওয়ার পর তাদের পূর্বসূরিরা উদংয়ের আশপাশে বসতি স্থাপন করে। তবে অন্যদের তুলনায় তারা ধর্ম পালনে খানিকটা পিছিয়ে।

চ্যামরা সাধারণত নিজস্ব গ্রামে বসবাস করে। শহরাঞ্চলেও তারা নিজস্ব পাড়ায় বসবাস করে। চ্যাম মুসলিমরা সাধারণত ইসলামী পোশাক পরিধান করে। যেমন- নারীরা লম্বা চুল রাখে এবং স্কার্ফ পরে এবং ছেলেরা টুপি পরে ও দাড়ি রাখে। চ্যামদের ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন সে দেশের ইমামরা, যাদের হাকিম বলা হয় এবং দেশটির মোয়াজ্জিনদের বিলাল (হজরত বিলাল রা.-এর প্রতি সম্মান দেখিয়ে) বলে সম্বোধন করা হয়। কম্বোডিয়ার কোরআনি মক্তবগুলো মসজিদভিত্তিক। কম্বোডিয়ায় চ্যাম মুসলিমরা ধর্মপালনে মোটামুটি স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে, তবে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খেমাররুজ শাসনের সময় ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়। ধারণা করা হয়, এ সময় কম্বোডিয়ার ৩৬ শতাংশ চ্যাম মুসলিম মারা যায়।

‘দ্য হাইয়েস্ট কাউন্সিল ফর ইসলামিক লিজিয়াস অ্যাফিয়ারস কম্বোডিয়া’ (এইসিআইআরএসি) কম্বোডিয়ান মুসলিমদের সর্বোচ্চ সংস্থা, যা দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। একজন ইমাম, একজন সহকারী ও কয়েকজন সহকারীর মাধ্যমে সংস্থাটি গঠন করা হয়। সংস্থাটি চ্যাম সমাজের ইমাম নিয়োগ, মুসলমানদের সামাজিক সমস্যার সমাধান ও রাষ্ট্রীয় কাজে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। এ ছাড়া দ্য সেন্ট্রাল ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অব কম্বোডিয়া’ এবং ‘কম্বোডিয়া ইসলামিক ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন’ নামে আরো দুটি সামাজিক সংগঠন কম্বোডিয়ান মুসলমানদের উন্নয়নে কাজ করছে। রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।

কম্বোডিয়ার বেশিরভাগ মুসলমান শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে। তারা খুব সামান্য লেখাপড়া জানেন, বেশিরভাগই কোরআন পড়তে পারেন না। গ্রামের মসজিদসংলগ্ন মক্তবে অল্প অঙ্ক, হিসাব ও খানিক লিখতে শেখেন তারা। কাজকর্মে এখনও পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন।