ট্রল, কুধারণা ও অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো পাপ

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামে পরনিন্দা, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এবং কারো দোষ অন্বেষণে লেগে থাকা নিষিদ্ধ, ছবি: সংগৃহীত

ইসলামে পরনিন্দা, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এবং কারো দোষ অন্বেষণে লেগে থাকা নিষিদ্ধ, ছবি: সংগৃহীত

কারো সম্মানহানি হয়, এমন কাজ করতে আল্লাহতায়ালা নিষেধ করেছেন। এই সূত্র ধরে ইসলামে পরনিন্দা, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এবং কারো দোষ অন্বেষণে লেগে থাকা নিষিদ্ধ।

কাউকে নিয়ে অকারণে ট্রল বা উপহাস করা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কোনো সুশিক্ষিত ও ভদ্র মানুষের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের কাজকে মূর্খদের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তার গোত্রকে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি গাভি জবাই করবে। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছ? সে বলল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই।’ -সুরা বাকারা : ৬৭

সমাজে প্রায়ই কারো নাম নিয়ে ট্রল করতে দেখা যায়, বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বন্ধুমহলে একে অন্যকে নাম বিকৃত করে ডাকতে দেখা যায়। নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করার এই প্রবণতা দিন দিন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

ইসলামি শরিয়ত এভাবে মানুষের নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করাকে মারাত্মক গুনাহ ও গর্হিত কাজ বলে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদাররা! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো জালেম।’ -সুরা হুজুরাত : ১১

ইসলামে কারো ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ে হাসি-তামাশা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কটূক্তি বা সম্মানহানিকর কোনো কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহকে ছেড়ে তারা যাদের আরাধনা করে, তোমরা তাদের মন্দ বলো না। তাহলে তারা ধৃষ্টতা দেখাতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালমন্দ করবে। এভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের পালনকর্তার কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন, যা কিছু তারা করত।’ -সুরা আনআম : ১০৮

ঠাট্টা-বিদ্রুপ এত নিকৃষ্ট কাজ যে মহানবী (সা.) এই কাজকে ‘দূষণ সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো একসময় মহানবী (সা.)-কে আমি একজন ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। -জামে তিরমিজি : ২৫০২

কাউকে নিয়ে ট্রল করলে সেই ট্রলের শিকার দুনিয়ায় আপনিও হতে পারেন। কারো বিপদ দেখে মশকরা করলে আপনিও সেই বিপদে পড়তে পারেন। হজরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার কোনো ভাইয়ের বিপদে তুমি আনন্দ প্রকাশ করো না, অন্যথায় আল্লাহতায়ালা তাকে দয়া করবেন এবং তোমাকে সেই বিপদে নিক্ষিপ্ত করবেন।’ -জামে তিরমিজি : ২৫০৬