ছেলেকে নিয়ে পাকিস্তান সফরে জাকির নায়েক
আগামী মাসে পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন বিশ্বখ্যাত ইসলামি বক্তা ড. জাকির নায়েক। তিনি সেখানে লাহোর, করাচি এবং ইসলামাবাদে লেকচার দেবেন।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ড. জাকির নায়েক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৫ অক্টোবর করাচি সফরের মধ্যে দিয়ে তার সফর শুরু করবেন এবং ২০ অক্টোবর ইসলামাবাদ সফরের মধ্য দিয়ে তার সফর শেষ করবেন। তার সঙ্গে সফরে থাকবেন তার ছেলে ড. ফারিক নায়েক। তিনিও একজন ইসলামি বক্তা।
ড. নায়েক আরও জানিয়েছেন, করাচির অনুষ্ঠানটি বাগে-ক্বাইদে অনুষ্ঠিত হবে, যা কায়েদে-আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমাধির বিপরীতে অবস্থিত।
৫ অক্টোবর করাচিতে তার লেকচারের বিষয় হবে ‘আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য’ এবং পরদিন ড. ফারিক নায়েক বক্তব্য দেবেন ‘কোরআন বুঝে পড়া কি জরুরি’ বিষয়ে।
ড. নায়েক লাহোর ও ইসলামাবাদের জন্য তার পাবলিক লেকচারের সূচি জানিয়েছেন, করাচিতে ৫ ও ৬ অক্টোবর, লাহোরে ১২ ও ১৩ অক্টোবর এবং ইসলামাবাদে ১৯ ও ২০ অক্টোবর।
ড. জাকির নায়েকের পাকিস্তানে আগমনের খবর তার অনুসারীদের মধ্যে প্রেরণার সৃষ্টি করেছে, অনেকেই সামাজিকমাধ্যমে তাদের আনন্দ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে ড. নায়েক মালয়েশিয়ায় বাস করছেন।
জাকির আবদুল করিম নায়েক। তিনি জাকির নায়েক নামে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও পরিচিত। একাধারে একজন ইসলামি বক্তা ও লেখক। পেশাগত জীবনে তিনি একজন ডাক্তার।
জাকির নায়েক ভারতের মুম্বাইয়ে ১৯৬৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষে কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। মেডিসিনের ওপর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড নাইর হসপিটালে ভর্তি হন। এরপর, তিনি ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯১ সাল থেকে জাকির নায়েক ইসলামের দায়ী বা ইসলাম-ধর্ম প্রচারক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন এবং আইআরএফ প্রতিষ্ঠা করেন। তার স্ত্রী ফরহাতও আইআরএফ এর নারীদের শাখায় কাজ করেন। ফারিক নায়েক, রুশদা নায়েক, জিকরা নায়েক নামে জাকির নায়েকের তিন সন্তান রয়েছে।
জাকির নায়েক ইসলাম বিষয়ক আলোচনার নতুন যেই ধারার মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন তা মূলত শুরু করেছিলেন তারই গুরু ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিক শায়খ আহমাদ দিদাত (১৯১৮-২০০৫)। ইসলামের এই প্রখ্যাত দায়ীর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা নিজেই এক বক্তৃতায় শিকার করেন জাকির নায়েক। ১৯৮৭ সালে আহমাদ দিদাতের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন তিনি।
জাকির নায়েক সবচে’ বেশি সফলতা পান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার মাধ্যমে; যেটি পিস টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকে বিভিন্ন ভাষায় অন্তত ১৫০টি দেশে। টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা ও তার ইসলাম প্রচারের কৌশল স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করেন সাধারণ মুসলমানদের অনেকে।
বর্তমানে সোশ্যাল মাধ্যমে ইসলামী জনপ্রিয় আলোচকদের তালিকায় অন্যতম জাকির নায়েক। মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয় হলেও জাকির নায়েক ২০১৬ সালে এক বক্তৃতার কারণে নিজ দেশ ভারতে তিনি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। বন্ধ করে দেওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ (আইআরএফ) ও পিস টিভি। সে বছরই ১ জুলাই ভারত ছেড়ে মালয়েশিয়ায় যান তিনি। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে বসবাস করে আসছেন।
সম্প্রতি, ড. নায়েক একটি পাকিস্তানি ইউটিউবারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কেন তিনি পাকিস্তানের পরিবর্তে মালয়েশিয়ায় বসবাসের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ পায়।
সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি কেন পাকিস্তানকে বেছে নেননি? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমার জন্য পাকিস্তানে যাওয়া সহজ হত। আমি আগে পাকিস্তান সফর করেছি এবং সেখানে আমার অনেক সমর্থক আছেন।
তিনি আরও বলেন, শরিয়া আমাদেরকে কম ক্ষতি গ্রহণ করতে শেখায়, যাতে বড় ক্ষতি এড়ানো যায়। যদি আমি পাকিস্তানে চলে যেতাম, ভারত আমাকে আইএসআই এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করত এবং মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার চেষ্টা করত, যা ইসলাম প্রচারের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করত।