বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত রণবিজয়পুর মসজিদ দেশের এক গম্বুজ মসজিদগুলোর সঙ্গে সর্ববৃহত্ এবং গম্বুজটিকে দেশের সর্ববৃহত্ গম্বুজ বলে ধারণা করা হয়। ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে এর দূরত্ব মাত্র এক দশমিক ৫০ কিলোমিটার।
মসজিদের অবকাঠামো ও নির্মাণ শৈলী থেকে অনুমান করা যায়, সুফিসাধক খানজাহান আলী (রহ.)-এর যুগে (১৪৫৯ খ্রি.) তা নির্মিত। মসজিদের আদি নাম ‘দরিয়া খাঁ মসজিদ’ এই অনুমানকে আরো দৃঢ় করে। দরিয়া খাঁ ছিলেন খান জাহান আলী (রহ.)-এর সহচর। মসজিদের পাশের দীঘির নামও দরিয়া খাঁ। অবশ্য মসজিদটি ফকিরবাড়ি মসজিদ নামেও পরিচিতি।
বিজ্ঞাপন
রণবিজয়পুর মসজিদ নির্মাণে পোড়া ইট ও পোড়ামাটির অলংকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রাচীন মসজিদের সঙ্গে এই মসজিদের ভিন্নতার একটি দিক হলো- দেয়ালের পুরত্ব। মসজিদের দেয়ালের পুরত্ব দুই দশমিক ৭৪ মিটার বা প্রায় নয় ফিট। পশ্চিম দিকের দেয়াল ছাড়া প্রতিটি দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রবেশ পথগুলোতে একের পর এক দুটি খিলান আছে এবং মধ্যবর্তী অংশ কিছুটা উঁচু। সামনের দিকের খিলানযুক্ত মধ্যবর্তী প্রবেশ পথের দুই দিকে খিলানযুক্ত কাঠামোসহ একটি কুঁড়েঘর সদৃশ চৌচালা ছিল। পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অন্য দুটির তুলনায় বড়। মূল মেহরাবের অভ্যন্তরভাগে ফুলের নকশা আছে। ছাদ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য চারদিকে দুটি করে মোট আটটি নালা আছে।
বাহির থেকে মসজিদের আয়তন ৫৬ বর্গফিট হলেও ভেতরের আয়তন মাত্র ৩৬ বর্গফিট। মসজিদের কার্নিশ সামান্য বাঁকানো এবং চার কোণের বাইরের বুরুজ কার্নিশের ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত। দেয়ালে আছে পোড়ামাটির অলংকার। যার বেশির ভাগই প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রবেশপথ, মেহরাব, কার্নিস বন্ধনী এবং কোণার বুরুজগুলোতে কিছুটা নকশার দেখা মেলে। বিভিন্ন ধরনের অলঙ্করণের মধ্যে গোলাপ নকশা, জালি নকশা, প্যাঁচানো ফুলের নকশা, হীরকাকার নকশা ও ঝুলন্ত নকশাগুলো উল্লেখযোগ্য।
মসজিদের বাইরের চার কোণার গুরুত্ববহনকারী মিনারগুলো খানজাহানি রীতির মতোই গোলাকার। এগুলোর নিম্নাংশে কিছুটা কারুকাজ দেখা গেলেও কিন্তু ওপরের অংশ একেবারেই সাদামাটা। মসজিদের প্রার্থনা কক্ষটি বর্গাকার এবং তাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে বড় গম্বুজটি এবং চারটি অর্ধগম্বুজাকৃতির স্কুইঞ্চ। এ মসজিদের গুম্বুজের ওপরে সংস্কারের আগে বৃত্তাকারে কিছু ইট স্থাপিত ছিল। সংস্কার কাজের সময় এসব ইট ফেলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মসজিদটির গুম্বুজের বহিরাবরণ মসৃণ।
রণবিজয়পুর মসজিদের কাঠামোগত দৃঢ়তা, বিশালতা এবং এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সুসামঞ্জস্যতা মুগ্ধ হওয়ার মতো। যাকে গৌড়ের দাখিল দরওয়াজার সঙ্গে তুলনা করা যায়। এটি খানজাহানি স্থাপত্যরীতির একটি সুন্দর উদাহরণ।
রণবিজয়পুর মসজিদকে ১৯৫৯ সালে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য একাধিকবার সংস্কার করা হয়। বাগেরহাট-খুলনা সড়ক থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় চড়ে রণবিজয়পুর মসজিদে যাওয়া যায়।
জুমার দিন একটি বিশেষ সময় আছে, বান্দা তখন যে দোয়া করবে; আল্লাহতায়ালা তাই কবুল করবেন। মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহতায়ালা তাই দান করবেন। অনেক হাদিসে এই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জুমার দিনের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন বলেছেন, এইদিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি ওই সময়ে নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করবেন।
(হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,) এরপর হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করেছেন যে, ওই মুহূর্তটা অতি অল্প সময়। -সহিহ বোখারি : ৯৩৫
মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় স্পষ্ট এসেছে, ওই মুহূর্তটি খুব সামান্য সময়। -সহিহ মুসলিম : ৮৫২
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনের বারো ভাগ। (এর মধ্যে একটি সময় আছে, যাতে) মুসলিম বান্দা আল্লাহতায়ালার কাছে যা প্রার্থনা করবে আল্লাহতায়ালা তাকে তাই দান করবেন। সুতরাং তোমরা সে সময়টি অনুসন্ধান করো আসরের পর দিনের শেষ অংশটিতে। -মুস্তাদরাকে হাকেম : ১০৩২
জুমার দিনের যে সময়টিতে দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে সেটা কোন্ সময়? ওপরের হাদিসটিতে আসরের পরের কথা বিবৃত হয়েছে। তবে অন্যান্য হাদিতস ও আছার থেকে আরও বিভিন্ন সময়ের কথা জানা যায়।
এ সব হাদিস ও আছারের ভিত্তিতে আলেমরা জুমার দিনের দোয়া কবুলের সময় সম্পর্কে অনেক মত বর্ণিত হয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) ৪৩টি মত উল্লেখ করেছেন। -ফতহুল বারী : ২/৪১৬-৪২১
সবগুলো মত উল্লেখ করার পর হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, এখানে হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) যা বলেছেন- এর সারমর্ম হলো- এই সব মতের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধতম মত দুইটি-
১. খতিব খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে ওঠার পর থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত। এ সময়ের কথা হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।
২. আসরের নামাজের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। এ সময়ের কথা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
মুহিব্বুদ্দীন আবুল আব্বাস তবারি (রহ.) বলেছেন, হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ আর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত মতটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। -ফতহুল বারী : ২/৪২১
সুতরাং উচিত হলো, জুমার দিন ওই দুই সময়েই দোয়ার গুরুত্ব দেওয়া।
ইমাম আবু উমর ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের উচিত, তার দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ের জন্য কবুলের আশা নিয়ে এই দুই সময়ে গুরুত্বের সঙ্গে দোয়া করা। তাহলে ইনশাআল্লাহ সে আশাহত হবে না। -আততামহিদ : ১৯/২৪
মাফুসি দ্বীপ মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। অল্প সময়ে যাওয়া যায় বিধায় দ্বীপটি অনেকেরই পছন্দের স্থান। এখানে রোমাঞ্চের স্বাদ মিলবে উইন্ড সার্ফিং, কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং ও প্যাডেল নৌকার মাধ্যমে। এর আছে হোয়াইট স্যান্ডি সৈকত ও স্পার্কলিং ওয়াটার। এই নির্জনতার স্বাদ পেতে তীরের অদূরে মাঝে মধ্যে চলে আসে তিমি ও হাঙর। স্পীড বোর্ড বা ফেরিতে দূর থেকে এই দ্বীপটিকে দেখতে অসাধারণ লাগে। যতই কাছাকাছি পৌঁছা যায় ততই যেন এর সৌন্দর্য বাড়তে থাকে।
তবে দ্বীপটির যে বিষয়টি সবার চোখ আটকায়, তা হচ্ছে- জলযান থেকে নামতেই চোখে পড়বে একটি সাইনবোর্ড। তাতে বড় করে ইংরেজিতে লেখা- ATTENTION, NO BIKINI। অর্থাৎ দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন তবে বিকিনি পরিধান করা যাবে না।
জানা গেছে, শুধু মাফুসি দ্বীপেই নয়, মালদ্বীপের অধিকাংশ দ্বীপেই বড় বড় সাইনবোর্ডে লেখা, সাঁতারের ড্রেসে লোকাল এরিয়ায় চলাফেরা নিষেধ, অথবা নো বিকিনি বা আপত্তিকর আচরণ নিষেধ। তবে শুধুমাত্র প্রাইভেট রিসোর্টের প্রাইভেট বীচ এবং কয়েকটি হাতেগোনা কয়েকটি সৈকতে গেলেই বিকিনি পরার অনুমতি মেলে। এখানেও বীচ থেকে উঠে এই পোশাকে লোকাল এরিয়ায় চলাফেরা করা যাবে না। দেশটির সরকারের এমন নির্দেশনা সাবলীলভাবেই মেনে চলে পর্যটকরা। যাদের অধিকাংশই ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ স্বল্প কাপড় পরিধান করা দেশ থেকে আসেন। তারা মালদ্বীপে এসে শতভাগ মুসলিম অধ্যূষিত এলাকার নিয়মকানুন মেনেই দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
নানাবিধ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ মোকাবেলা করেই পর্যটনকে এগিয়ে নিচ্ছে মালদ্বীপ সরকার। স্বচ্ছ সবুজ পানিতে সাঁতার, বালুময় সৈকতে সূর্যস্নান, প্রবালদ্বীপের বিলাসবহুল রিসোর্টে ছুটিযাপন, স্নোরকেলিং ও স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো নানা রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড বলা যায় পর্যটকদের চাহিদা পূরণে সমস্ত সম্ভার নিয়ে বসে আছে মালদ্বীপ। তাই তো রোমাঞ্চপ্রিয় ও নিরিবিলি আয়েশি অবকাশযাপন সন্ধানী ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও পছন্দের এক গন্তব্য ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটির সহজ ভিসানীতি, নিরাপত্তা আর নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মালদ্বীপে সহস্রাধিক দ্বীপ আছে, এই দ্বীপগুলোকে দুই নামে ডাকা হয়- লোকাল আইল্যান্ড আর রিসোর্ট আইল্যান্ড। লোকাল আইল্যান্ডে স্থানীয় জনগণ থাকে, তবে পর্যটকদের থাকারও ব্যবস্থা আছে। আর রিসোর্ট আইল্যান্ডে শুধুই রিসোর্ট। ১৯৭২ সালে এমনই একটি দ্বীপে দুটি রিসোর্ট নিয়ে পর্যটনশিল্পের গোড়াপত্তন করে মালদ্বীপ। বর্তমানে দেশটিতে রিসোর্টের সংখ্যা ১৮০। এ ছাড়া আছে হোটেল, গেস্টহাউস ও সাফারি জাহাজসহ নানা কিছু।
মালদ্বীপের পর্যটনের সঙ্গে অনেক দেশেরই কোনো তুলনা চলে না। একসময় মালদ্বীপের মানুষের মূল আয় ছিল মাছ ধরা। সেখান থেকে তারা আজ কোন পর্যায়ে এসেছে সেটা দৃশ্যমান। বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করে তারা নিজেদের পর্যটন অবকাঠামো তৈরি করেছে। বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে তারা এ পর্যায়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের একটি বড় মিল রয়েছে, দুই দেশই মুসলিম অধ্যুষিত। তবে এই ধর্ম পরিচয় তাদের উন্নয়নের পথে বাধা হয়নি। তারা রক্ষণশীলতা পাশে রেখেই পর্যটনকে এগিয়ে নিয়েছে। তাদের পর্যটন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এখন ৯৫ ভাগ। যারা বিনিয়োগ করেছে তারাই এর প্রচার করছে। সরকার কখনোই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। তারা পুরো বিষয়টি পেশাদারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে।
মালদ্বীপে মূলত এককেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। সেটি সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন। তারা (মালদ্বীপ) এগিয়ে আছে বিদেশি পর্যটকের কারণে। শতভাগ মুসলিম অধ্যূষিত হবার পরও বেশ কিছু ধর্মীয় বিধি নিষেধ থাকার পরও সেখানে পর্যটকরা আসেন। তবে লোকাল এরিয়ার বাইরে তারা বিদেশীদের জন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। বিশেষ করে বীচ এলাকায় নির্বিঘ্নে পর্যটকরা তাদের সময় ব্যয় করতে পারেন। সেগুলোতে স্থানীয়দের সেভাবে যেতেও দেখা যায় না।
মালদ্বীপ শতভাগ মুসলিম একটি দেশ। এখানে স্থানীয় অধিবাসীরা যেসব দ্বীপে বাস করেন সেখানে ধর্মীয় বিষয়গুলোতে তারা বেশ সচেতন। এরপরেও তারা ধর্মীয় শ্রদ্ধার জায়গাটিকে অটুট রেখেই পর্যটন খাতকে উন্নত করেছে। রিসোর্ট আইল্যান্ডগুলোতে আপনি বিনোদনের জন্য সব করতে পারেন, কিন্তু স্থানীয় দ্বীপগুলোতে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। এ জন্য এখানে লাখ লাখ পর্যটক আসছেন। বিশ্বসেরা যত হোটেল রিসোর্ট ব্র্যান্ড আছে, তাদের প্রত্যেকেরই রিসোর্ট এখানে আছে। প্রত্যেকটি রিসোর্টেই নিজেদের মতো করে পর্যটন ব্যবস্থাপনা রাখার অধিকার রয়েছে। সেখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করে না।
মালদ্বীপের সৌন্দর্যে সবাই মুগ্ধ। আর এ কারণে তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই মালদ্বীপ ভ্রমণে ভিড় করেন। বর্তমানে মালদ্বীপ সবারই স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সারা বছরই এ দেশে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। তবে অত্যন্ত সুন্দর এই স্থানে গিয়েও কিন্তু মানতে হবে কিছু নিয়ম-কানুন। না হলে আপনি বিপদে পড়তে পারে। তাই মালদ্বীপে যাওয়ার কথা পরিকল্পনা করলে প্রথমেই জেনে নিন সেখানে ঘোরাঘুরির সময় কোন কাজগুলো করলে বিপদে পড়বেন। মালদ্বীপের রাস্তায় এমন কাজ করা নিষেধ, যা মানুষকে বিব্রত করবে। এমনকি রাস্তায় হাঁটার সময় গালে চুম্বন করাকেও সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মুসলিম দেশ হওয়ায় মালদ্বীপে প্রকাশ্যে মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। যদি কোনো দ্বীপের হোটেল বা রিসোর্টে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। মুসলিম দেশ হওয়ায় মালদ্বীপ গিয়ে জনসমক্ষে বিকিনি বা অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক পরার সুযোগ একেবারেই কম।
শতভাগ মুসলমানের এই দেশের মনেপ্রাণে ধর্মপালন করেন। রাজধানী মালেসহ পাশের বিলিকিলি, হুনহুমালে বা আরেকটু দূরের মাফুশি দ্বীপে গেলেই দেখা মেলে মাথায় স্কার্ফ কিংবা হিজাব পরা মালদ্বীপের মেয়েদের। ভারতীয় মহাসাগরের এই দেশে প্রায় ৯৬ ভাগ নারীই হিজাব পরে রাস্তায় বের হন। মালদ্বীপের নারীদের মধ্যে কেউ পুরো শরীর কালো বোরকায় ঢাকা। কেউ শরীরের ওপরের অংশ ঢেকে রাখেন। কেউবা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা পোশাকের সঙ্গে শুধু মাথায় স্কার্ফ পরেন। শুধু নারীরাই নয়, মালদ্বীপের পুরুষরাও ব্যাপকহারে মসজিদমুখী। মালেতে নামাজের সময় হলেই সব দোকানপাঠ বন্ধ রাখা হয়। আজান হলেই দোকানি দরজার সামনে ‘ক্লোজড’ (বন্ধ) প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে মসজিদে চলে যান।
মালে শহরে কিছু নারী আধুনিক পোশাক পরলেও দ্বীপগুলোতে হিজাব ছাড়া কোনো নারী তেমন দেখা যায় না। মালদ্বীপের মেয়ে বা মায়েরা সমুদ্র বিচে নামলেও বোরকা পরেই নামেন। পশ্চিমা দেশের পর্যটকরা এই দেশে এসে স্বল্প পোশাক পরেই নেমে পড়েন সাগরে। তবে মালেতে এই স্বল্প পোশাক পরে কেউ বিচে যেতে পারবে না। বিশেষ করে নারীরা। বিচের পাশে লেখা সাইনবোর্ডে- ‘নো বিকিনি’।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগির জন্য মালদ্বীপে রয়েছে ছোট বড় অনেক মসজিদ। তবে রাজধানি মালেতে মসজিদের সংখ্যা বেশি। ২০১৮ সালে মালেতে উদ্বোধন করা হয় মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় মসজিদ কিং সালমান মসজিদ। নান্দনিকতায়ও এটি অদ্বিতীয়। এ মসজিদে একসঙ্গে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
সমাজে যখন নৈতিক অবক্ষয় ঘটে, তখন মানুষের পরস্পরের মধ্যে মায়া-মমতা, সহমর্মিতা, সৌভাতৃত্ববোধ কমে যায়। হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, কুটনা-কুটনি এসব প্রবল রূপ ধারণ করে। সমাজের সদস্যরা একে অন্যের ভালো দেখতে পারে না। সুযোগ পেলেই একে অন্যকে ল্যাং মারতে চায়। কেউ বেপথু হলে অন্যরা তার জন্য কোনো দরদ অনুভব করে না। তাকে সুপথে আনার চেষ্টা চালানোর কোনো তাগিদ কাজ করে না। যে যার মতো স্রেফ সমালোচনা করেই দায় সারে।
অনেকেই আবার নিছক অভ্যাসবশে কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে কারো কোনো দোষ খুঁজে পেলে তা ফলাও করে প্রচার করে বেড়ায়। উদ্দেশ্য যতটা না অপকর্মের প্রতিবাদ করা, তার চেয়েও বেশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দুর্নাম রটানো এবং তাকে সমাজের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করা।
সমাজে কারো কোনো দোষ পাওয়া গেলে, বিশেষ করে তা যদি একটু দৃষ্টিকটু ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হয় তাহলে এটা নিয়ে দশ কান করা আর রসিয়ে রসিয়ে একে-ওকে বলে বেড়ানোর বেশ চল আছে। সামাজিক এসব নিন্দা-মন্দের অবশ্য একটা ভালো সোস্যাল ইমপ্যাক্ট আছে। মানুষ সতর্ক হয়, সামাজিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে এ ধরনের কাজ এড়িয়ে চলে। তবে এসবই সমাজের নিরীহ গোছের ছা-পোষা মানুষের জন্য। জাঁদরেল পালোয়ান কিসিমের প্রভাবশালী লোকজন প্রকাশ্যে অপকর্ম করে বেড়ায়। এতে তাদের কোনো লাজলজ্জা কাজ করে না। বরং এটাকে তারা নিজেদের অহংকার বলে বিবেচনা করেন, বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ান। আপনি দেখবেন, সোসাইটি তাদের ব্যাপারে আড়ালে-আবডালে ফিসফাস করলেও প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটে থাকে।
মনুষ্য সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মাচারের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাদের জীবনাচারে আলেম-উলামা, পীর-দরবেশদের বিরাট প্রভাব রয়েছে। আপনি আলেম-উলামাদের সঙ্গে উঠা-বসা করলে বুঝে থাকবেন, ইসলাম কিছু ব্যতিক্রমী সিচুয়েশন বাদে কারো নিন্দামন্দ করে বেড়ানোকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করে। এর কারণ এই যে, এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো মহৎ উদ্দেশ্য কাজ করে না, সমাজের সদস্যদের পারস্পরিক সৌহার্দে চিড় ধরে, সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সামাজিকভাবে অনেকটা নিজের অগোচরেই হেয় হন।
আপনি তাবলিগ জামাতের লোকজনের সাহচর্যে এলে দেখবেন, তারা যে কয়টি বিষয়ের ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেন, তার একটি হলো- অন্যদের সম্মান করা।
ইদানীংকালে সমাজে একদিকে কিছু দুর্বৃত্তের দুরাচার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে এসবের প্রতিক্রিয়ায় সমাজের পরিমিতিবোধেও যেন বিশেষ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সমাজে দুষ্কর্মের ব্যাপকতায় মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি, যা তাদের অসহিষ্ণু করে তুলেছে। প্রায়ই দেশের কোনো না কোনো জায়গা থেকে রোমহর্ষক সব অপরাধকাণ্ডের খবর আসছে, যা মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভকে আরো ঘনীভূত করছে। দেশে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি সোস্যাল মিডিয়ার আগমন মানুষকে তাদের ধূমায়িত রোষ সহজে প্রকাশ করার বিশেষ সুযোগ এনে দিয়েছে। ফলে অনেক সময় দেখে থাকবেন, অনেকেই সংঘটিত ঘটনার গভীরে না গিয়েই হুটহাট মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
এখানেই উদ্বেগের বিষয়। সমাজে আমরা সবাই পারস্পরিক মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ। এখানে কেউ অন্যায় কিছু করলে তাকে অবশ্যই আমরা ধরব, তিনি যদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে থাকেন প্রয়োজনে তাকে শাস্তির আওতায়ও আনব। এজন্য শাস্তি ছাড়াও নিন্দা-মন্দেরও ভাগীদার তিনি অবশ্যই হবেন।
তবে সমালোচনা যেন কুৎসা রটনায় পর্যবসিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার। মনে রাখা চাই, সমাজের দায়িত্ব বিপথগামী সদস্যদের সুপথে আনা, তাদের প্রতি কোনো রকম বিদ্বেষ পোষণ কিংবা তাদের সম্মানহানি হতে পারে এমন কিছু করে বেড়ানো নয়।
নাসিরুল মুলক মসজিদ। ইরানের ফার্স প্রদেশের শিরাজ নগরীতে অবস্থিত একটি বিখ্যাত মসজিদ। ১৮৭৬ সালে মসজিদটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮৮৮ সালে। নাসিরুল মুলকের শাসনামলে খাজা রাজত্বে মির্জা হাসান আলি সৌন্দর্যমন্ডিত এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নকশা করেন মোহাম্মদ হাসান আল মেমার এবং মোহাম্মাদ রেজা কাশি-সাজ ই শিরাজি।
নাসিরুল মুলক মসজিদের কাঁচগুলো সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনে। সেই কাঁচ সকালের আলো ধারণ করে। আর বর্ণিল সেই আলো খেলা করে মসজিদের ফ্লোরে। শরৎ এবং শীতকালে যখন কাচের গায়ে সূর্যের আলো পড়ে নীল মোজাইকে প্রতিফলিত হয়, তখন যে দৃশ্যের উদ্ভব ঘটে তা বর্ণনা করার ভাষা নেই। মসজিদের এই নান্দনিক সৌন্দর্যই এটিকে ইরানের অন্যান্য মসজিদ থেকে করেছে আলাদা।
মসজিদটি বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত। অধিকাংশ মানুষ একে ‘গোলাপি মসজিদ’ নামে চেনেন। এর কারণ হলো- মসজিদের টাইলসগুলো অদ্ভুত সুন্দর গোলাপের রঙে রাঙানো। এছাড়া এটি ‘বর্ণিল মসজিদ’, ‘রঙধনু মসজিদ’ এবং ‘ক্যালিডাইস্কোপ’ বা ‘বিচিত্রদৃক’ মসজিদ নামেও পরিচিত।
অন্যান্য মসজিদের মতো নাসিরুল মুলক মসজিদে কোনো গম্বুজ নেই। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক আলোকচিত্রী ছুটে আসেন আলোর বর্ণিলতার ছবি তুলতে। এর বর্ণিল আলোকময়তা একে অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে আকর্ষণীয় এবং ব্যতিক্রম হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে। কাঁচের জানালাই এর মূল আকর্ষণ।
মসজিদটির অজু করার জায়গায় তৈরি ঝরনাটি আইয়ান সাম্রাজ্যের নিদর্শন বহন করে। মসজিদটিতে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন।
উজ্জ্বল নকশার কাচ, ছাদের দেওয়ালে হাজারো রঙিন টালি এবং মেঝেতে পারস্যের ঐতিহ্যবাহী কার্পেট যেন প্রতিটি কোণা থেকে এই প্রার্থনার স্থানে সৃষ্টি করেছে এক অনুপম রঙধনু। এই রঙের মেলায় পুরো মসজিদকে যেন একটি ক্যালিডাইস্কোপের (যার মাঝে অসংখ্য রঙের খেলা দেখা যায়) মতো মনে হয়। মসজিদের ঠিক কেন্দ্রে একটি খোলা চত্বর বিদ্যমান। অসংখ্য ফুলে পরিবেষ্টিত এই চত্বরে একটি আয়তাকার জলাশয়ও রয়েছে।
মসজিদের নান্দনিক সৌন্দর্যই এটিকে ইরানের অন্যান্য মসজিদ থেকে করেছে আলাদা। সম্প্রতি, নাসিরুল মুলক মসজিদকে রাতেও আলোকিত করা হয়েছে, যাতে বর্ণিল কাচের মধ্য দিয়ে আলো অতিক্রমের মাধ্যমে পুরো মসজিদ এক অনুপম সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হতে পারে। এখনও এই মসজিদটি প্রার্থনাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মসজিদটি ইরানের জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে নথিভুক্ত হয়, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৬৯। নাসিরুল মুলক মসজিদ ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় হলো- সকাল ৯টার আগে। এই সময়ই পুরো হলঘরে কার্পেট এবং কাচের মধ্যে আলোর খেলা চলে, যার সৌন্দর্য অতুলনীয়!