বদনজর থেকে রক্ষায় বিশেষ আমল
নজর অর্থ দৃষ্টি। বদনজরের অর্থ কুদৃষ্টি বা মন্দ চাহনি। হিংসার নিকৃষ্ট স্বভাবমিশ্রিত বিষাক্ত দৃষ্টিপাতের প্রভাবে ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে যে ক্ষতি দেখা যায় তাকে বদনজর বলা হয়। বদনজর দুইভাবে হয়- মানুষের বদনজর ও জিনের বদনজর।
যুগে যুগে বদনজরের সমস্যা ও সমধান ছিল। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। কেননা বদনজর সত্য।’ -ইবনে মাজাহ : ৩৫০৮
বদনজরের প্রভাব বেশি পড়ে ছোট বাচ্চাদের ওপর। এ থেকে মুক্তি পেতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকইয়া বা কোরআনি চিকিৎসা করতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে এটি সুস্থতার নেয়ামত লাভ ও নিরাপদ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপনে সহায়ক হয়।
লক্ষণ : বদনজরে আক্রান্ত ছোট বাচ্চাদের বেশ কিছু লক্ষণ ফুটে ওঠে। যেমন- শিশুরা মায়ের বুকের দুধ বা খাবার খেতে না চাওয়া, অনর্থক ভয় পাওয়া, অস্বাভাবিক কান্নাকাটি করা ইত্যাদি।
বদনজর থেকে রক্ষার আমল : বদনজরের রুকইয়া বা কোরআনি চিকিৎসা প্রধানত দুই পদ্ধতিতে করা যায়।
এক. কোরআন মাজিদের আয়াত বা হাদিসে বর্ণিত দোয়া লিখে গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমন্ত অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে, সে যেন ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাজাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাজাতিশ শায়াতিনি ওয়া আই ইয়াহদরুন’ এই দোয়া পড়ে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর তার উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ : ৩৮৯৩
দুই. বিশেষ দোয়া বা সুরা পাঠ করে ঝাড়ফুঁক করা। এ প্রসঙ্গে সহজ ও সংক্ষিপ্ত চারটি আমল হলো-
ক. হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে, কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। দোয়াটি হলো- ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা-ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামাই ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম।’ -জামে তিরমিজি : ৩৩৮৮
খ. হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে এই দোয়া পাঠ করবে সে প্রত্যেক সৃষ্টবস্তুর অনিষ্ঠ থেকে রক্ষা পাবে, বিশেষ করে সাপ-বিচ্ছুর অনিষ্ট থেকে রেহাই পাবে। দোয়াটি হলো- ‘আউজু বিকালিমা তিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৬৩২
গ. হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত হাসান ও হজরত হুসাইন (রা.)-কে এই দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করতেন আর বলতেন তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এই দোয়ার মাধ্যমে (তার সন্তানদের) ঝাড়ফুঁক করতেন। দোয়াটি হলো- ‘আউজু বিকালিমা তিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়াহাম্মাহ ওয়ামিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।’ -সহিহ বোখারি : ৩১৩২
ঘ. হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করবে। সব কিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ -জামে তিরমিজি : ৩৫৭৫