বিয়ে বরকতময় হয় যে কাজে
মানবজাতির স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য এবং চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় হলো বিয়ে। পবিত্র, পরিচ্ছন্ন, সংযত ও সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য বিয়ের বিকল্প নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে শুধু জৈবিক প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম নয়, বরং একটি মহান ইবাদত ও ধর্মীয় অনুশাসন এবং আচারের অন্যতম অংশ। এ জন্য ইসলামে বিয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
বিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠে নারী-পুরুষের শান্তি-সুখের পরিবার। এরপর পরিবারে জন্ম নেয় ভালোবাসার সেতুবন্ধ মানব শিশু। সেই শিশু একসময় পূর্ণ মানবে পরিণত হয়। এভাবেই মানব প্রজন্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো।’ -সুরা হুজরাত : ১৩
বিয়ে মানসিক প্রশান্তি, স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খল জীবনের অন্যতম মাধ্যম। বিয়ের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে সখ্য, ভালোবাসা ও দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদের, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য তাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে।’ -সুরা রুম : ২১
আমাদের সমাজে সাধারণত বিয়ের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য, সম্পদ ও বংশ মর্যাদা দেখা হয়। এগুলোর কোনোটি টেকসই প্রশান্তি নিশ্চিত করতে পারে না। প্রশান্তির জন্য প্রয়োজন নৈতিকতা, দায়িত্ব সচেতনতা, কর্তব্যবোধ, কল্যাণকামিতা, অল্পে তুষ্টতা, পরকালকে অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি। এসব রয়েছে দ্বিনের মধ্যে। এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘চারটি গুণ দেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়। তার সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য ও ধার্মিকতা। তোমরা ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দাও।’ -সহিহ বোখারি : ৪৮০২
ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম, কল্যাণকর ও বরকতময় বিয়ে হলো, যা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সহজসাধ্যভাবে অল্প খরচে অনুষ্ঠিত হয়। জমকালো আয়োজন, জৌলুসপূর্ণ আলোকসজ্জা, গান-বাদ্য এবং খরচের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিয়ের বরকত নষ্ট করে। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম বিয়ে হলো যা সহজসাধ্য হয়।’ -মুসনাদ আহমাদ : ২৪৫২৯
আরেকটি কথা, ইসলাম বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা নির্ধারণ করেনি; বরং শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে সক্ষমতা অর্জনকেই বিয়ের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে। অঞ্চলভেদে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বিয়ের সমীচীন বয়সসীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে বিশেষ অবস্থায় এ বয়সসীমা শিথিলও হতে পারে। যেমন- কোনো ব্যক্তির যৌনসংক্রান্ত অনাচারে লিপ্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকলে এবং অন্যান্য সামর্থ্য অর্জিত হলে তার বিয়েতে বাধা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কোনোভাবে সমীচীন নয়।
এভাবে কোনো নারী শারীরিক, মানসিকভাবে পূর্ণতা লাভ করার পর সুযোগ্য পাত্র পাওয়া গেলে তার অভিভাবকদের দ্রুত বিয়ের আয়োজন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন এমন কোনো ব্যক্তি তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করে, যার দ্বিনদারি ও চারিত্রিক দিক তোমাদের মুগ্ধ করে, তখন তোমরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দাও। যদি তোমরা তা না করো তাহলে সমাজে বিরাট ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় দেখা দেবে।’ -জামে তিরমিজি : ১০৮৪