মানবজাতির স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য এবং চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় হলো বিয়ে। পবিত্র, পরিচ্ছন্ন, সংযত ও সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য বিয়ের বিকল্প নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে শুধু জৈবিক প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম নয়, বরং একটি মহান ইবাদত ও ধর্মীয় অনুশাসন এবং আচারের অন্যতম অংশ। এ জন্য ইসলামে বিয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
বিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠে নারী-পুরুষের শান্তি-সুখের পরিবার। এরপর পরিবারে জন্ম নেয় ভালোবাসার সেতুবন্ধ মানব শিশু। সেই শিশু একসময় পূর্ণ মানবে পরিণত হয়। এভাবেই মানব প্রজন্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো।’ -সুরা হুজরাত : ১৩
বিজ্ঞাপন
বিয়ে মানসিক প্রশান্তি, স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খল জীবনের অন্যতম মাধ্যম। বিয়ের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে সখ্য, ভালোবাসা ও দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদের, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য তাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে।’ -সুরা রুম : ২১
আমাদের সমাজে সাধারণত বিয়ের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য, সম্পদ ও বংশ মর্যাদা দেখা হয়। এগুলোর কোনোটি টেকসই প্রশান্তি নিশ্চিত করতে পারে না। প্রশান্তির জন্য প্রয়োজন নৈতিকতা, দায়িত্ব সচেতনতা, কর্তব্যবোধ, কল্যাণকামিতা, অল্পে তুষ্টতা, পরকালকে অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি। এসব রয়েছে দ্বিনের মধ্যে। এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘চারটি গুণ দেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়। তার সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য ও ধার্মিকতা। তোমরা ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দাও।’ -সহিহ বোখারি : ৪৮০২
ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম, কল্যাণকর ও বরকতময় বিয়ে হলো, যা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সহজসাধ্যভাবে অল্প খরচে অনুষ্ঠিত হয়। জমকালো আয়োজন, জৌলুসপূর্ণ আলোকসজ্জা, গান-বাদ্য এবং খরচের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিয়ের বরকত নষ্ট করে। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বোত্তম বিয়ে হলো যা সহজসাধ্য হয়।’ -মুসনাদ আহমাদ : ২৪৫২৯
আরেকটি কথা, ইসলাম বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা নির্ধারণ করেনি; বরং শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে সক্ষমতা অর্জনকেই বিয়ের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে। অঞ্চলভেদে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী বিয়ের সমীচীন বয়সসীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে বিশেষ অবস্থায় এ বয়সসীমা শিথিলও হতে পারে। যেমন- কোনো ব্যক্তির যৌনসংক্রান্ত অনাচারে লিপ্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকলে এবং অন্যান্য সামর্থ্য অর্জিত হলে তার বিয়েতে বাধা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কোনোভাবে সমীচীন নয়।
এভাবে কোনো নারী শারীরিক, মানসিকভাবে পূর্ণতা লাভ করার পর সুযোগ্য পাত্র পাওয়া গেলে তার অভিভাবকদের দ্রুত বিয়ের আয়োজন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন এমন কোনো ব্যক্তি তোমাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করে, যার দ্বিনদারি ও চারিত্রিক দিক তোমাদের মুগ্ধ করে, তখন তোমরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দাও। যদি তোমরা তা না করো তাহলে সমাজে বিরাট ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় দেখা দেবে।’ -জামে তিরমিজি : ১০৮৪
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কর্ণফুলী নদী হয়ে সাগরপথে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দর ছুঁয়ে পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনা। একটা সময় এভাবেই জাহাজপথে হজপালন করতে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেশে যেতেন এই অঞ্চলের মানুষ।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাংলাদেশ থেকে সেই জাহাজযাত্রা থেমে যায় বহু দশক আগেই। একেবারেই ভাটা পড়ে যাওয়া জাহাজ পথে হজ করতে যাওয়ার আলোচনায় ফের জোয়ার আসে এক বছর আগে।
তবে দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ওই আলোচনাও প্রায় মুছেই গিয়েছিল। সম্প্রতি বালাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হাজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে সৌদি সরকার সম্মতি দেওয়ার পর নতুন করে আশা জাগাচ্ছে জাহাজে চড়ে হজে যাওয়ার স্বপ্ন।
৬ অক্টোবর সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং সৌদি হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক ফাউজান আল রাবিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সৌদি মন্ত্রী এই সম্মতির কথা জানানোর পর আলোচনা হচ্ছে কবে থেকে শুরু হবে এই জাহাজপথে হজযাত্রা। আবার প্রশ্ন উঠছে আদৌ কি এটি সফল হবে এই পরিকল্পনা? কেননা জাহাজপথে হজযাত্রায় যেমন আছে সুবিধা, তেমনি যে আছে চ্যালেঞ্জও।
বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য সমুদ্রপথে জাহাজ নামার প্রাথমিক আলোচনা চলছিল বহুদিন ধরে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজে হজযাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি লিমিটেডকে (আইআইএফসি) দিয়ে সমীক্ষাও চালায়। আইআইএফসি জাহাজ চলাচলকে কার্যকর বলেছে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি একটা প্রস্তাবনাও তৈরি করেছিল। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী জাহাজপথে যাওয়া-আসাসহ হজের পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ২৭ দিন সময় লাগবে। জাহাজে গেলে উড়োজাহাজের চেয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ কমবে।
সৌদি হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক ফাউজান আল রাবিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর জাহাজে হজযাত্রীদের পাঠানোর বিষয়ে নিজের ফেসবুকে তুলে ধরেছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি লেখেন, ‘সৌদি হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে হাজি প্রেরণে সৌদি সরকারের কোনো বাঁধা নেই বলে জানিয়েছেন। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে নেবেন। বাংলাদেশকেও জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। পানির জাহাজযোগে ২/৩ হাজার হাজীকে পরীক্ষামূলকভাবে হজব্রত পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে প্রেরণের ব্যাপারে বাংলাদেশ চিন্তাভাবনা করছে।’
এখন নতুন করে আলোচনা শুরুর পর সমুদ্রপথে হজযাত্রী নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আসে। কেউ কেউ জাহাজে করে হজ করতে যাওয়াকে ইতিবাচক বলেছেন। নানামুখী চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেছেন অনেকে। আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে জাহাজে করে সৌদি আরবে যেতেন হজযাত্রীরা। তখন জাহাজে করে যেতে-আসতে সময় লাগত তিন মাস। দীর্ঘ সময় লাগায় এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় সেই যাত্রা। তবে এবার সেই সময় অনেকটাই কমে আসছে। সময় কমলেও উড়োজাহাজযাত্রার তুলনায় জাহাজে খরচ কত কমবে- সেটিও আলোচনায় আসছে।
ভাড়া কমবে ৪০ শতাংশ সমুদ্রপথে জাহাজে হজযাত্রীদের পাঠানো গেলে উড়োজাহাজ থেকে ভাড়া ৪০ শতাংশ খরচ কম পড়বে বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন , ‘জাহাজে হাজিদের পাঠানো হলে চার্টার শিপ ভাড়া করতে হবে। এটা করতে গেলে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আমাদের কর্জ দেয়, তাহলে আমরা এটা করতে পারব।’
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুদান নয়, ঋণ নেওয়া হবে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘সৌদি সরকার থেকে অনুমোদন পেলে সরকারের অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করে দুই হাজার কোটি টাকা যদি তারা ঋণ দেন, তাহলে হাজিদের নেওয়া হবে। একটা শিপিং কোম্পানি জানিয়েছে, তারা লাভের আশায় নয়, সওয়াবের আশায় এটা করবে। এটা করা হলে উড়োজাহাজের তুলনায় ৪০ শতাংশ ভাড়া কম লাগবে জাহাজে। আমাদের বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, তাদের ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে খরচ ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭ টাকা। অবশ্য সেই প্রস্তাবনা দেওয়ার পর প্রতিজনের হজ প্যাকেজ খরচ ৪ লাখের মধ্যে রাখার পরামর্শ এসেছিল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজে সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর নতুন করে চালু করা বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজে উড়োজাহাজ ভাড়া ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করেছিল হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। প্রস্তাবনা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে জাহাজপথে হজে গেলে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত সাধারণ হজ যাত্রীদের সাশ্রয় হতে পারে, যদিওবা জাহাজে দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি সইতে হবে।
এখন এই বিষয়ে আগেই সমীক্ষা চালানো ও প্রস্তাবনা তৈরি করা কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আলোচনা হয়েছে কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাহাজে হজ করতে সময় লাগবে ২৯ দিন! কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রস্তাবনা অনুযায়ী হজের জন্য মোট সময় লাগবে ২৯ দিন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-জেদ্দা যেতে ৬ দিন, জেদ্দা-চট্টগ্রাম আসতে ৬ দিন এবং হজপালনের জন্য ১৭ দিন সময় লাগবে। যদিওবা হজযাত্রীরা অন্তত ৪০ দিন পর্যন্ত সৌদি আরবে অবস্থান করে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখেন।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল হজযাত্রীরা যতদিন জাহাজে থাকবেন তত দিন পর্যন্ত জাহাজ কর্তৃপক্ষ তাদের সবকিছু দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রাম সংলগ্ন কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের নিজস্ব জেটি/টার্মিনাল রয়েছে যেখানে হজযাত্রীরা ওঠা-নামা করতে পারবেন। প্রস্তাবিত ক্রুজ শিপে বিশুদ্ধ খাবার পানি হিসেবে সমুদ্রের পানি মিনারেল ওয়াটারে রূপান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে। হাজিদের সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরোনো জাহাজ কেনার কথা প্রাথমিকভাবে বলা হলেও, পরে প্রতিষ্ঠানটি জানায় পুরোনো জাহাজ কেনাটা বাস্তবসম্মত হবে না। তার চেয়ে ব্যবহৃত উপযুক্ত জাহাজ বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনে হজযাত্রীদের পরিবহনের ব্যবস্থা করল যুক্তিসঙ্গত হবে।
যত চ্যালেঞ্জ সমুদ্রপথে হাজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে সৌদি সরকার সম্মতি দেওয়া এই পদক্ষেপকে অনেকদূর এগিয়ে দিলেও রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জও। বহু বছর ধরে জাহাজ নিয়ে এই বন্দর থেকে ওই বন্দরে যাওয়া বেশ কয়েকজন নাবিকের সঙ্গে কথা বলে সেই চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে ধারণাও পাওয়া গেছে।
জাহাজপথে স্বাভাবিকভাবে মধ্যবিত্তদের সাড়াই মিলতে পারে বেশি। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায় মধ্যবিত্তদের বেশিরভাগই সারাজীবন টাকা জমিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ করতে যান। প্রবীণদের শরীর এই দীর্ঘ জাহাজ-জার্নির ধকল কতটা সইতে পারে সেটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন করতে হলে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করার বিষয়ও আছে। কেননা সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবছর যে চুক্তি হয়, তাতে উড়োজাহাজের কথা উল্লেখ থাকে, জাহাজের কথা বলা থাকে না। আবার সেই চুক্তি সংশোধন হলেও জলপথে যাওয়া হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন কোথায় হবে, সেটাও আলোচনার বিষয়।
সমুদ্রপথে সময় লাগবে বেশি। এই সময়ে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে, মাঝ সমুদ্রে কীভাবে হবে তার চিকিৎসা সেটাও ভাবনার বিষয়। যাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগেরও একটা বিষয় আছে। সেক্ষেত্রে নেটওয়ার্কবিহীন গভীর সমুদ্রে তারা কীভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।
মূলত এসব জটিলতা এড়াতে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ জাহাজপথে যাত্রা থেকে সরে এসেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন একমাত্র সুদানের মানুষ ২০১৮ সাল থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রা করছেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জ্বালানি থাকলে মাঝপথে কোনো বন্দরে না থেমে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে জেদ্দা বন্দরে যাওয়া সম্ভব। তবে জাহাজপথে হজে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো খরচ কমানো। এটা একটা সময় নিয়মিত হতো। এখন যদি খরচটা একটা বাস্তবসম্মতভাবে কমানো যায় তাহলে এই পদক্ষেপ ভালো হবে, সাড়া পাবে।’
অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘একটা সময় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায় হজ প্যাকেজ ছিল। এখন সেটা অনেকটাই বেড়ে গেছে। সেই খরচটা আগে কমানো দরকার। তারপর উড়োজাহাজে যাওয়ার প্যাকেজের সঙ্গে জাহাজে যাওয়ার প্যাকেজের তুলনা করা যাবে। খরচ তুলনামূলক কমলে চ্যালেঞ্জ থাকলেও যাত্রীদের আগ্রহ বাড়বে।’
'তৌহিদ ও রেসালতের আহ্বানে মানুষকে আকৃষ্ট করে এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই চিরায়ত ইসলামী জ্ঞান, মানবতা ও কল্যাণের পথে মানুষকে আলোকিত করতে হবে' বলে আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদগণ। তাঁরা বলেন, 'সুফি সাধকগণ এদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও মানুষকে আপন করে নিয়ে সমাজের গভীরে ইসলামের বীজ রোপণ করেছিলেন। যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ইসলামী দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।'
শনিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গাউসুল অলি আলি রজা কানু শাহ র ৫ম তম বংশধর হযরত খাজা শাহ্ নূর দরবেশ মাওলা (রাহ.)-এর পবিত্র ১৩তম উরস শরিফ উপলক্ষে খাজা দরবেশ মাওলা রাহ এর গবেষণামূলক জীবনী গ্রন্থ 'নক্ষত্র রাজির অস্তাচল' (মাওয়াকিয়ুন নজুম)-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বক্তারা আরও বলেন, 'ইসলামের আধ্যাত্মিক শক্তি আপামর মানুষের মধ্যে জাগ্রত করার মাধ্যমে তাঁদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে পরিশুদ্ধ করার বিকল্প নেই। দুর্নীতি, অন্যায় ও অপরাধ প্রতিরোধের যে নৈতিক শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে, তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।'
নাসিরাবাদ নুরীয়া বিষু দরবার শরীফের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দরবারের সাজ্জাদানশীন মওলানা মঈনউদ্দীন নূরী সিদ্দিকী আল কোরাইশী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।
অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.মুফতি নুর হোসাই, ড. ওসমান মেহেদী ও ড.শেখ সাদী, সুফি গবেষক ড.সেলিম জাহাঙ্গীর, সুফি মেডিটেশন স্কলার খাজা ওসমান ফারুকী, ড.আব্দুল আজিম শাহ, ড.খলিলুর রহমান, প্রফেসর শফিউল গনি চৌধুরী, সুরাইয়া মমতাজ, হাসান মোহাম্মদ কপিল উদ্দীন।
আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে পবিত্র হজের নিবন্ধন না করলে মিনা ও আরাফার ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। এতে জামারা (কঙ্কর নিক্ষেপের স্থান) থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ি এলাকায় ও নিউ মিনা এলাকায় অবস্থান করতে হবে। ফলে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘপথ হাঁটার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন সংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৫ সালে হজে গমনেচ্ছু হজযাত্রী, বেসরকারি হজ এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, রাজকীয় সৌদি সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে, আল-মাশায়ের ও আল-মোকাদ্দাসার (মিনা ও আরাফা) তাঁবু নির্ধারণ ও সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের কার্যক্রম ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে তাঁবু বরাদ্দ প্রদান করা হয় বলে বিশ্বের অনেক দেশ জামারার নিকটবর্তী জোনে তাঁবু বরাদ্দ নেবে।
ফলে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন না হলে মিনা ও আরাফার ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। তাঁবু গ্রহণ ও সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে বিলম্ব হলে হজযাত্রীদের জামারা থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ি এলাকায় ও নিউ মিনা এলাকায় অবস্থান করতে হবে। ফলে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘপথ হাঁটতে হবে যা হজযাত্রীদের জন্য কষ্টকর হবে। মিনা ও আরাফার কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু গ্রহণ, সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন, মক্কা ও মদিনায় বাড়ি/হোটেল ভাড়া ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজযাত্রীদের ভিসা করার মাধ্যমে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজে গমনেচ্ছু সবাইকে ৩ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
আগামী বছর হজে যেতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এবার সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজপালনের সুযোগ পাবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দুপুর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট এক হাজার ৪০৩ জন হজযাত্রী প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান সৌদি আরবে হজপালন করতে যান। তবে অনুমোদন ছাড়া হজে অংশ নেওয়া, তীব্র সূর্যতাপ ও গরমের মধ্যে যথেষ্ট বিশ্রাম ছাড়া লম্বা দূরত্বে হাঁটার কারণে ২০২৪ সালের সবচেয়ে বেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে।
গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৪ লাখ ১৬ হাজার ২৩৪ বাংলাদেশি পবিত্র হজপালন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজ করেছেন ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।
অন্যদিকে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কম হজযাত্রী সৌদি আরব গেছেন, সংখ্যা ৫৮ হাজার ৬২৮। এর পরের বছর হজযাত্রীর সংখ্যা ৩২ হাজার বেড়ে যায়, সেবার হজে যান ৯১ হাজার ৩৮৪ জন।
২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর (২০২৪) পর্যন্ত বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ও হজে গমনকারী হজযাত্রীর সংখ্যা প্রকাশ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে এরমধ্যে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিদেশিদের জন্য হজ বন্ধ ছিল।
হজযাত্রীর সংখ্যা হিসেবে দেখা গেছে, বেসরকারি মাধ্যমে হজপালন করেছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৭০ জন। আর সরকারি মাধ্যমে হজপালনকারীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৬৮৯ জন।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজপালন করেন। ওই বছর হজযাত্রীর কোটাও ছিল এটি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে হজপালন করেন ৫৮ হাজার ৬২৮ জন, গত ১৫ বছরে এটি ছিল সবচেয়ে কম বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা। ২০০৯ সালে বাংলাদেশি হজযাত্রীর কোটা ছিল ৬৫ হাজার।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালে ৭৫ হাজার কোটার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করেন ৯১ হাজার ৩৮৪ জন। ২০১১ সালে এক লাখ ২০ হাজার কোটার বিপরীতে এক লাখ ৭ হাজার ৩৭২ জন বাংলাদেশি হজ করেন। ২০১২ সালে কোটা একই থাকলেও হজপালন করেন এক লাখ ১২ হাজার ৬৮০ জন।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের কোটা বেড়ে হয় এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৯ হাজার ১৯০ জন হজপালন করেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে কোটা কিছুটা কমে হয় এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন। কিন্তু হজপালন করেন ৯৮ হাজার ৬৮৩ জন।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে হজপালন করেন এক লাখ ৬ হাজার ২৩৮ জন। ওই বছর বাংলাদেশের কোটা ছিল এক লাখ ৬ হাজার ৭৫৮ জন। ২০১৬ সালের হজে বাংলাদেশের কোটা ছিল এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন। ওই বছর হজযাত্রীর কোটা পূরণ হয়, অর্থাৎ এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জনই বাংলাদেশ থেকে হজ করেন।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজ করার সুযোগ ছিল। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে কোটার চেয়ে ৪০৯ জন কম হজপালন করেন। ২০১৯ সালেও কোটা আগের বছরের মতো ছিল। ওই বছর এক লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন হজপালন করেন। কোটার চেয়ে হজযাত্রী কম ছিল ২৭৫ জন।
করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বিদেশিদের জন্য হজ বন্ধ ছিল। করোনা মহামারির পর ২০২২ সালে সীমিত পরিসরের হজে বাংলাদেশের কোটা ছিল ৬০ হাজার জন। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ৫৯ হাজার ৯১৬ জন হজপালন করেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০২৩ সালের হজে বাংলাদেশের কোটা আগের মতো এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হয়। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে হজপালন করেন এক লাখ ২৩ হাজার ২১৮ জন। কোটার চেয়ে ৩ হাজার ৯৮০ জন কম হজপালন করেন।
চলতি বছরও বাংলাদেশের হজের কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এ বছর কোটার চেয়ে ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম হজপালন করেন। এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে হজপালন করেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।
গত ১৪ বছরে চলতি বছরের মতো কোটার চেয়ে এত কম হজযাত্রী আর হয়নি। আগামী বছরের হজেও বাংলাদেশের কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বহাল থাকছে বলে এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।