উমরার অফারে পণ্য বিক্রি কি জায়েজ?

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

উমরার অফারে পণ্য বিক্রি প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান, ছবি: সংগৃহীত

উমরার অফারে পণ্য বিক্রি প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান, ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, কিছু ধর্মীয় লাইব্রেরি, সুগন্ধি বিক্রেতাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দিচ্ছে- যারা নির্দিষ্ট পণ্য কিনবে, তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে একজনকে অথবা একাধিকজনকে উমরা করানো হবে।

ঘোষণায় উমরা করানোর খরচ কোন প্রক্রিয়ায় বহন করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে, নাকি বিক্রয়ের লভ্যাংশ থেকে খরচ নির্বাহ করে লটারি বিজয়ীকে উমরা করানো হবে, তাও বোধগম্য নয়।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে অনেকে বলছেন, ইসলাম লটারি সমর্থন করে না। তাহলে এ ধরনের লটারির বিষয়ে ইসলামের বিধান কী?

এমন প্রশ্নের আলোকে ইসলামি স্কলার ও মুফতিদের অভিমত হলো- অনেক সময় পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিক্রেতারা বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকেন। বর্তমান সময়ে প্রচলিত একটা অফার হচ্ছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ কিংবা নির্ধারিত মূল্যের সমপরিমাণ পণ্য ক্রয় করলে তাদের একটি কুপন দেওয়া হয় অথবা অন্যকোনো উপায়ে তাদের নাম সংরক্ষণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তারপর লটারির মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে উমরা করানোসহ বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটা দুই শর্তে জায়েজ।

এক. অফারের কারণে পণ্যের দাম স্বাভাবিক মূল্য থেকে বাড়ানো যাবে না এবং গুণগত মান কমানো যাবে না।

দুই. পণ্য ক্রয় মূল উদ্দেশ্য হতে হবে। শুধু লটারি বা পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও পণ্য কেনা যাবে না।

মোটকথা, লটারির মাধ্যমে যে পুরস্কার দেওয়া হবে, তা সম্পূর্ণ বিক্রেতার স্বাভাবিক লভ্যাংশ থেকে দিতে হবে। পুরস্কারের জন্য ক্রেতাদের থেকে আলাদা টাকা নেওয়া যাবে না।

শর্ত পাওয়া গেলে এ ধরনের বেচাকেনা ও অফার গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। উমরাও করা যাবে। বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ‘ফতোয়ায়ে শামি’তে বলা হয়েছে, ‘লটারির মাধ্যমে হাদিয়া ও পুরস্কার বিতরণ ও গ্রহণ করা বৈধ।’

ইসলামে সাধারণভাবে সব লটারি হারাম নয়। যে লটারিতে শুধু জুয়া থাকে, তা হারাম। অর্থাৎ লটারির কারণে যখন কারও লাভ হয় আর কারও ক্ষতি হয়, তখন তা হারাম। কিন্তু যে লটারিতে কারও লাভ হয়, কিন্তু কারও ক্ষতি হয় না, তা জায়েজ। -আল মুহিতুল বুরহানি : ৭/৩৫৬

উল্লেখ্য, পণ্য মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে শরিয়তের পছন্দনীয় নীতি হলো, পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা কিংবা সরাসরি মূল্য ছাড় দেওয়া। তা না করে মূল্যের কিছু অংশ অনিশ্চিত পুরস্কারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এবং লাখ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা, এরপর অল্প কয়েকজনকে সামান্য পুরস্কার দেওয়া সম্পূর্ণ ধোঁকা। এতে একপ্রকার প্রতীকী প্রতারণা পাওয়া যায়।

এভাবে বাজারকে প্রভাবিত করা ইসলামের বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী। পুঁজিবাদীদের আবিষ্কৃত এসব কার্যকলাপ অনেক সময় বাজারকে অসৎ উপায়ে পরিচালিত করে এবং বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করে। মুসলমানদের এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।