আয়ারল্যান্ডে ইসলাম গ্রহণের হার দিন দিন বাড়ছে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন আয়ারল্যান্ডের মুসলিমরা, ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন আয়ারল্যান্ডের মুসলিমরা, ছবি: সংগৃহীত

আয়ারল্যান্ডের ধর্মীয় পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, কারণ আগের চেয়ে আরও বেশি শ্বেতাঙ্গ আইরিশ নাগরিক ইসলাম গ্রহণ করছেন। ইসলাম গ্রহণকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং এই পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে ঘটছে। এর কয়েকটি হলো, ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান, প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি মোহভঙ্গ এবং বৈশ্বিক বিষয়গুলোর সঙ্গে সংযোগের অনুভূতি ইত্যাদি। যা নিউজ টক রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে।

ওই রিপোর্টে সালভাডোরান নামের এক শিক্ষক ক্যাথলিক ধর্ম থেকে ইসলামে আসার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। একসময় তিনি যাজক হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি ক্যাথলিক চার্চের কিছু অনুশীলনের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন অনুভব করতেন। তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে কেউ আমাকে ইসলাম অন্বেষণ করতে আমন্ত্রণ জানায়, এটা আমার কাছে আধ্যাত্মিক চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি সন্তোষজনক ও অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

ইমাম উমর আল-কাদরি লক্ষ করেছেন যে, কোভিড মহামারির পর এবং সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সংঘাত, বিশেষ করে গাজায় ঘটনার পরে, ইসলামের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আমরা অনেক মানুষকে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হতে দেখছি, যারা আমাদের বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাইছেন। এটি অনেক আইরিশ মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রামের সঙ্গে মিল খায়।’

বিজ্ঞাপন

গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আল-কাদরি আয়ারল্যান্ডে প্রায় ৫০০ জনকে ইসলাম গ্রহণ করতে সাহায্য করেছেন, যার মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব প্রয়াত সিনিয়াড ওকনরও ছিলেন।

আয়ারল্যান্ডের বাতাসে কান পাতলে শোনা চার্চের বিষয়ে নানা অসন্তোষের কথা শোনা যায়। অনেকের জন্য ক্যাথলিক চার্চের প্রতি অসন্তোষই ইসলামের পথে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। চিকিৎসক হ্যাজেল ওব্রায়েন উল্লেখ করেছেন যে, অনেক ধর্মান্তরকারী চার্চের কাঠামো এবং কেলেঙ্কারির কারণে হতাশা প্রকাশ করেন, বিশেষত যাজকদের অপব্যবহার নিয়ে।

বেলফাস্টে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন আয়ারল্যান্ডের মুসলিমরা, ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো মনে করে চার্চ তাদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিকতা প্রদান করে না।’ তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সামাজিক সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করেন, যা মানুষকে গভীর অর্থ খুঁজতে এবং ধর্মতাত্ত্বিক প্রতিফলনের দিকে ধাবিত করে।

অমলা, তিনি আট বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে ইসলামে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। প্রথম দিকের কিছু ভুল ধারণার কথা স্মরণ করেছেন। তার শিক্ষক তাকে ভুলভাবে ‘মোহামেডান’ বলে পরিচয় করিয়েছিলেন, যার ফলে তিনি পরিষ্কার করতে বাধ্য হন, ‘আমরা মোহাম্মদের উপাসনা করি না। মোহাম্মদ কেবল একজন নবী, আমরা ঈশ্বরের উপাসনা করি।’ তার মা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি খুশি তো? তুমি কি শান্তি পেয়েছ?’ এটা তার আধ্যাত্মিক যাত্রার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আইরিশ মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইরিশ মুসলিম পরিচয়ের একটি স্বতন্ত্র আলোচনা শুরু হয়েছে। ড. আল-কাদরি বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রীতিনীতি না গ্রহণ করে আইরিশ ঐতিহ্যকে সংহত করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আইরিশ ভাষাকে মুসলিম সম্ভাষণে অন্তর্ভুক্ত করার এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ইসলামি বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিত করার ওপর জোর দেন।

২০১৬ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী আয়ারল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার।

অনেকের জন্য, আইরিশ এবং মুসলিম উভয় হওয়া মানে একটি ভালো সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা করা এবং একটি ভাগ করা পরিচয় গ্রহণ করা। আল-কাদরি বলেছেন, ‘দিনের শেষে, আমরা সবাই আইরিশ। আমরা সবাই এই সুন্দর দ্বীপ আয়ারল্যান্ডের নাগরিক।’