বিপদে-দুর্যোগে অসহায় মানুষের বন্ধু মাওলানা গাজী ইয়াকুব
নিজে অসুস্থ, তার পরও পথচলা থেমে নেই। অসুস্থ ভাইসহ সংসারে রয়েছে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তান। পরিচালনা করেন একটি মাদরাসা। উপার্জনের জন্য ব্যবসা করেন, কিন্তু সেটা এখন অনিয়মিত। কারণ, বছরের প্রায় সময়ই তাকে ছুটে বেড়াতে হয় দেশের নানাপ্রান্তে। কয়েক ধাপের বন্যা শেষ হতে না হতেই শীত আসছে, শুরু করেছেন শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি। শুধু মৌসুমি দুর্যোগ নয় অগ্নিকাণ্ড ও নৌকাডুবিসহ নানাবিধ দুর্যোগেও ছুটে চলেন মমতার পরশ নিয়ে, পাশে দাঁড়ান অসহায়ের। এরই ফাঁকে চলে নিজের চিকিৎসা, তাও অনিয়মিত। তিনি মাওলানা গাজী ইয়াকুব।
মানবতার বন্ধু, মানবতার ফেরিওয়ালা গাজী ইয়াকুব প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।’ প্রতিষ্ঠানের স্লোগানটিও বেশ চমৎকার, ‘মানবতার কল্যাণে আমরা।’ আসলেই তিনি, তার প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। যার প্রমাণ বিভিন্ন দুর্যোগে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি।
এই তো কয়েকদিন আগে, নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে গরিব, নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রয়মূল্যে সবজি বিক্রি করলেন। মানবসেবায় মাওলানা গাজী ইয়াকুব ও তার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের এমন উদ্ভাবনী চিন্তা দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনেক স্থানে তার অনুকরণে ক্রয়মূল্যে সবজি বিক্রি শুরু হয়।
তাকওয়া ফাউন্ডেশন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। করোনায় সাড়ে চার হাজার লাশ দাফন করেছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন। ২০২৪ সালের বন্যায় ৪০ হাজার মানুষকে সহায়তা দিয়েছে। দেশের নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা।
তিনি প্রচারবিমুখ একজন সাদা মনের মানুষ, সমাজসেবক পরোপকারী, গরিবের বন্ধু ও উদারমনা। গাজী ইয়াকুব বন্ধু হিসেবেও বেশ চমৎকার। আমরা আড্ডায় যখন রাজনীতি কিংবা সম-সাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলি, তখন তিনি বিভোর থাকেন অন্য চিন্তায়। তার চিন্তার জগৎজুড়ে থাকে গরিব দুঃখী অসহায় মানুষের কথা, কাউকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার চিন্তা, কোনো প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার চেষ্টা, অভাবীর বাড়িতে খাদ্য পৌঁছাতে দৌড়ঝাঁপসহ কাপড় কিনে দেওয়া, নগদ অর্থ সহযোগিতা অথবা গরিব কোনো মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করা।
সত্যি কথা বলতে কী, পৃথিবীতে মানবসেবায় নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দেওয়া মানুষের সংখ্যা এখন বলা যায় হাতেগোনা। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মেই মানবসেবার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সে অনুভূতিকে ধারণ ও লালন করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান গাজী ইয়াকুব। যেখানেই হতদরিদ্র, বঞ্চিত ও অসহায় মানুষ, সেখানেই কাজ করছে গাজী ইয়াকুব ও প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে দুর্যোগে অসহায় মানুষের সেবায় সেচ্ছাসেবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
কখনও ছুটে যাচ্ছে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে, কখনও পরিচালনা করছে শীতবস্ত্র বিতরণ, কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছে একমুঠো খাবার, আবার কখনও নগদ অর্থ দিয়েও বাড়িয়ে দিচ্ছে সাহায্যের হাত।
প্রতিষ্ঠানটির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, নিজস্ব কোনো অফিস, পরিবহন কিংবা উল্লেখযোগ্য লোকবল কিংবা আসবাবপত্র নেই। এখানে যারা কাজ করেন, সবাই স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে কাজ করেন। তারা বেতনভুক্ত নন, তারা প্রতিদান প্রত্যাশা করেন একমাত্র আল্লাহতায়ালার কাছে। তবে কাজের সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনগুলোর পূরণ হওয়া দরকার বলে মনে করি। যেন গাজী ইয়াকুব ও তার টিম আরও নিরলসভাবে মানবসেবা করতে পারে।
ছাত্র জীবন থেকে গাজী ইয়াকুব গরিব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের জন্য কাজ করার এ মানসিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার।
একদিন জানতে চেয়েছিলাম তার মানবসেবার অভিযাত্রা প্রসঙ্গে, তখন গাজী ইয়াকুব বলেছিলেন, ‘শুরুর কথা বলতে গেলে আমার ছাত্র জীবনের কথা বলতে হবে। এর পর যখন রাজনীতি করতাম, তখন থেকেই মানুষের জন্য নিজের ভেতর ভালোবাসা কাজ করতো। একটি বিষয় আমি সবসময় লক্ষ্য করেছি, আমরা নিজেদের জন্য সবকিছু করছি। অথচ আমাদের প্রতিবেশী ঠিকমতো তিনবেলা খেতেও পায় না। মানুষের এ ধরনের মনমানসিকতায় আমি কষ্ট পাই। মানুষের প্রতি মানুষের যে সামাজিক দায়বদ্ধতা। ছোটবেলা থেকেই আমার ভেতরে তা কাজ করতো। আর সেই চিন্তা থেকেই এ কাজে জড়িয়ে যাই।
বিভিন্ন দুর্যোগে, বিপদে গাজী ইয়াকুবের ছুটে চলা, পাশে দাঁড়ানোর দৃশ্য নানা কারণে আমাদের আশাবাদী করে তোলে। একজন আলেম তীব্র গরমের সময় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পথচারীদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি কিংবা শরবতের ব্যবস্থা করছেন, বুক সমান পানি পেরিয়ে ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে ছুটছেন- এসব দৃশ্য শান্তিদায়কও বটে। এমন কাজ করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ ভালো কাজ করা সবার ভাগ্যে জোটে না।
অনেকের কোটি কোটি টাকা আছে কিন্তু মানবসেবায় এগিয়ে আসার মন-মানসিকতা ও সুযোগ থাকে না। যারা এমন কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের ভাগ্যবান বলাই যায়। সে অর্থে গাজী ইয়াকুব একজন ভাগ্যবান মানুষ। দোয়া করি, তার কাজ আরও বিস্তৃত হোক; তার স্বপ্নগুলোর আলোর মুখ দেখুক। আমাদের পাষাণ সমাজ গাজী ইয়াকুবের দরদ ও কর্মতৎপরতা দেখে শিখুক।