ঐতিহ্যের প্রতীক: দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ

  • মাহমুদ আল হাসান (রাফিন), ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, নীলফামারী, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ, ছবি: বার্তা২৪.কম

দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ, ছবি: বার্তা২৪.কম

সৈয়দপুর উত্তরের সমৃদ্ধ জেলা নীলফামারীর একটি প্রাচীন শহর। রেলের শহর হিসেবে পরিচিত হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য শহরটি আগে থেকেই প্রসিদ্ধ । এই শহরের একটি দুর্লভ স্থাপত্য 'চিনি মসজিদ'।

ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে অনেক পীর-আউলিয়া ও বুজুর্গের আগমন ঘটেছিল ভারতবর্ষে। তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণায় মুসলমান শাসক ও মোগল আমলে অসংখ্য মসজিদ স্থাপিত হয় এই উপমহাদেশে। ইসলামের মহিমা প্রচারে ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সৈয়দপুরের 'চিনি মসজিদ'।

বিজ্ঞাপন

ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। চিনি মসজিদ শুধু উপাসনালয় নয়, এই মসজিদ অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীকও বটে। এই মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্য খুব সহজেই সবার নজর কাড়ে। এই মসজিদটি একনজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রায়শই আসেন এখানে।

দৃষ্টিনন্দন ও ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের ২৭ মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তরে ও দক্ষিণে দরজা রয়েছে। মসজিদের দোতলায় একটি ভবনসহ পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ

বিজ্ঞাপন

এই মসজিদের সারা অবয়ব রঙিন উজ্জ্বল চীনা মাটির পাথরের টুকরো দ্বারা আবৃত। মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে মসজিদের দেয়ালে চিনামাটির থালার ভগ্নাংশ ও কাঁচের ভগ্নাংশ বসানো হয়। এই পদ্ধতিকে ‘চিনি করা’ বা ‘চিনি দানার কাজ করা’ বলা হয়। এখান থেকেই মসজিদের নাম হয় চিনি মসজিদ বা চীনা মসজিদ।

সৌন্দর্যের কাজে ব্যবহৃত চিনামাটির উপকরণসমূহ কলকাতা থেকে আনা হয়। ১৯৬৫ সালে বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি চিনি মসজিদের জন্য প্রায় ২৫ টনের মতো চীনা মাটির পাথর দান করে। এ ছাড়া সে সময় কলকাতা থেকেও ২শ’ ৪৩ খানা শংকর মর্মর পাথর এনে লাগানো হয় এই মসজিদে।

এই মসজিদের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৬৩ সালে হাজী বাকের আলী ও হাজী মুকু নামের দুজন স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দপুর শহরের উত্তরে ইসলামবাগ এলাকায় ছন ও বাঁশ দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় তা টিনের ঘরে রূপান্তরিত করা হয়। পরে এলাকার লোকেরা মসজিদটি নির্মাণের লক্ষ্যে একটি তহবিল গঠন করেন। এরপর শুরু হয় মসজিদের নির্মাণ কাজ। ১৯২০ সালে হাজি হাফিজ আবদুল করিমের উদ্যোগে মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়। ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকের দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়।
দৃষ্টিনন্দন চিনি মসজিদ

বাংলাদেশের কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন এই চিনি মসজিদ পরিদর্শন করে গেছেন। এই মসজিদ দেখার জন্য বহু বিদেশি পর্যটকদের আগমনের ইতিহাস রয়েছে।

যেভাবে আসবেন: রাজধানী ঢাকা থেকে রেলপথে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে সৈয়দপুর আসতে পারবেন। সড়কপথে গাবতলী-মাজার রোড এবং মহাখালী থেকে সৈয়দপুর আসার জন্য এসি/ননএসি বাস সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া আরামদায়ক এবং অল্পসময়ে আকাশপথে উড়োজাহাজযোগে সৈয়দপুর আসতে পারেন।