ভ্রমণের সময়ে রোজার বিধান

  • মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভ্রমণকালীন সময়ে রোজার বিধান, ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণকালীন সময়ে রোজার বিধান, ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান যুগেও ভ্রমণ মানুষের জীবনের অতি প্রয়োজনীয় অংশ। দ্বীন প্রচার, অর্থ উপার্জন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষকে ভ্রমণে বের হতে হয়। আবার মহান আল্লাহর কুদরতের বৈচিত্র্যতা নিজ চোখে দেখে ঈমান বাড়াতেও মানুষ ভ্রমণে বের হয়। যে কারণেই ভ্রমণ করা হোক, তা মানুষের জন্য সীমাহীন কষ্ট, অস্বস্তি ও বিড়ম্বনার কারণ। অত্যাধুনিক বিলাসী যানবাহনের ভ্রমণও কিন্ত কষ্টমুক্ত নয়। তাই ইসলাম মানুষের জন্য বিধানকে সহজ করতে যেয়ে প্রায় সবব্যাপারেই ভ্রমণের বিধান ভিন্ন রেখেছে।

যে ব্যক্তি ৮৭.৭৬ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দূরে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নিজের এলাকা ত্যাগ করেছে শরিয়তের পরিভাষায় সে মুসাফির। যতক্ষণ পর্যন্ত যে নিজ এলাকায় ফিরে না আসছে অথবা কোনো এলাকায় ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার ইচ্ছা না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুসাফির বিবেচিত হবে।

বিজ্ঞাপন

মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে সফর সমাপ্ত হওয়ার পর এ দিনগুলোর কাজা রোজা রাখতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তবে কেউ (রমজান মাসে) অসুস্থ থাকলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ দিনগুলো পূরণ করবে। তোমাদের জন্য যা সহজ আল্লাহ তা চান। আর যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা তিনি চান না। যেন তোমরা সংখ্যাপূরণ কর এবং তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা গাও। তাহলেই তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবে।’ -সূরা বাকারা: ১৮৫

খুব বেশি কষ্ট না হলে মুসাফিরের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখাই উত্তম। কেননা, অন্য সময় কাজা রেখে সংখ্যাপূরণ করলেও রমজান মাসে ইবাদত আদায়ের বাড়তি বরকত তো আর পাওয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

দিনের শুরু অংশে নিজ এলাকায় থাকা অবস্থায় রোজা শুরু করার পর সফরে যেয়ে সফরের অজুহাতে সে দিনের রোজা ভাঙা জায়েজ হবে না। তবে কেউ যদি ভেঙে ফেলে তবে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে; কাফ্ফারা নয়।

আবার দিনের শুরু অংশে সফরে থাকা অবস্থায় রোজা না রাখার পর নিজ এলাকায় ফিরে আসলে সে দিনের অবশিষ্ট অংশে রমজানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। যদিও পরবর্তীতে সেই দিনের কাজা করতে হবে। তবে কেউ যদি পানাহার করে তবে এতে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না।

অতি দ্রুতগামী যানবাহনে পশ্চিম দিকে ভ্রমণ করার কারণে রোজাদারের জন্য দিন দীর্ঘ হবে। সেক্ষেত্রে ভ্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার রোজাও দীর্ঘ হবে। রোজাদার বর্তমানে যে জায়গায় অবস্থান করছে সে জায়গার সূর্যাস্তের পরেই তাকে ইফতার করতে হবে। এতে ব্যত্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। কেননা, আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা, রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর। -সূরা বাকারা: ১৮৭

তবে দিন অস্বাভাবিক দীর্ঘ হওয়ার জন্য কেউ যদি রোজা কুলোতে না পারে, দেহের পানি শূন্যতায় তার মৃত্যুর আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠে তাহলে শরিয়ত তাকে রোজা ভাঙার অনুমতি দিয়েছে। পরে সে দিনের কাজা করে নেবে।

রমজান মাসে দেশ পরিবর্তন করার কারণে যদি রোজা ৩০টির বেশি হয়ে যায় তাহলেও বেশি রোজা রাখতে হবে। যেমন রমজান মাসের প্রথম দিকে পশ্চিমের এমন কোনো দেশে ছিলেন যেখানে চাঁদ দেখাগেছে ১/২ দিন আগে। রমজান মাসের শেষের দিকে আপনি চলে আসলেন পূর্বের কোনো দেশে। যেখানে রমজানের চাঁদ দেখা গেছে ১/২ দিন পরে। এমতাবস্থায় আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের মানুষের সাথে সাথে আপনাকেও বাড়তি রোজাগুলো রাখতে হবে এবং মানুষের সাথেই আপনাকে ঈদ করতে হবে।

আপবার বিপরীতে রমজান মাসে দেশ পরিবর্তনের কারণে যদি আপনার রোজা ২৯টির কম হয়ে যায় তাহলে বর্তমান দেশের মানুষের সাথেই আপনাকে ঈদ করতে হবে। ঈদের পরে কাজা রোজা রেখে ২৯ পূর্ণ করে নিতে হবে।