মক্কা নগরী (সৌদি আরব) থেকে: মক্কার গভর্নর যুবরাজ খালেদ আল ফয়সাল মসজিদে হারামের প্রধান ইমাম ও খতিব শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসের কাছে কাবা শরিফের নতুন গিলাফ হস্তান্তর করেছেন। এ সময় কাবার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক শায়খ সালেহ বিন যাইনুল আবিদিন আশ শিবলিসহ মসজিদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২৪ জুলাই মসজিদে হারামের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির সদস্যরা তৈরিকৃত নতুন গিলাফ কারখানায় যেয়ে দেখে আসেন।
বিশেষ গাড়িতে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নতুন গিলাফ উম্মুল জুদ এলাকার কারখানা থেকে মক্কায় এনে মসজিদের হারামে বিশেষ সংরক্ষিত জায়গায় রাখা হয়েছে। তবে প্রতীকী এক খণ্ড গিলাফ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরে মাধ্যমে গিলাফ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
কাবা শরিফে নতুন গিলাফটি পরানো হবে ১০ জিলহজ সকালে। ওই মক্কায় ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে হজপালনকারীরা হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে থাকবেন মিনায়। মিনা থেকে ফিরে হাজিরা নতুন গিলাফ দেখতে পাবেন।
কাবার ইমাম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আলেম-উলামা, কাবা ঘরের তত্বাবধায়ক, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক কোরের সদস্য, সৌদি আরবের বিশিষ্ট নাগরিক এবং রাজ পরিবারের কয়েকজন সদস্য গিলাফ পরিবর্তনের কাজে অংশ নেবেন।
কাবার গিলাফ পরিবর্তনের কাজকে অত্যন্ত সম্মানজনক ও বরকতময় কাজ হিসেবে মনে করা হয়। এটি একটি উৎসবও বটে।
কাবা শরিফের গিলাফকে ‘কিসওয়াহ' বলা হয়। কালো রেশমি কাপড়ে তৈরি গিলাফটির গায়ে স্বর্ণের সুতা দিয়ে আরবি ক্যালিওগ্রাফিতে লেখা থাকে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ, আল্লাহতায়ালা, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম, ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান'সহ আল্লাহতায়ালার পবিত্র নামসমূহ।
কাবাঘরের গিলাফ তৈরির কারখানাটি মক্কা নগরীর উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত। এ কারখানায় মদিনায় হুজরায়ে নববীর গিলাফও তৈরি করা হয়। কাবার গিলাফ তৈরিতে ১ কোটি ৭০ লাখ সৌদি রিয়াল ব্যয় হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩৮ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৪ টাকার মতো।
১৪ মিটার দীর্ঘ ও ৯৫ সেমি প্রস্থ ৪১টি বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় গিলাফ। চার কোনায় সৌন্দর্যবর্ধন করে বৃত্তাকারে লেখা থাকে সূরা ইখলাস। রেশমি কাপড়ের নিচে দেওয়া হয় মোটা সাধারণ কাপড়। একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমি কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম ও স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম।
প্রতি বছর ১০ জিলহজ তারিখে কাবায় নতুন গিলাফ পরানো হয়। আর পুরনো গিলাফটি খণ্ড খণ্ড করে বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রধান, ইসলামি স্কলার, কৃতি ব্যক্তিদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
ব্যস্ততার কারণে কেউ হজে যেতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। কারণ এটি শরিয়ত নির্দেশিত অপারগতা নয়। বদলি হজ কেবল শরিয়তের দৃষ্টিতে মক্কায় যেতে অপারগদের জন্য প্রযোজ্য। বদলি হজের বিধান হলো-
হজ ফরজ হওয়ার পর হজ করা হয়নি, এখন শারীরিকভাবে মক্কায় যেতে অক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য অন্য কাউকে পাঠিয়ে হজ করা ফরজ। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
বার্ধক্য বা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম হতে হবে। -মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি
অসিয়ত না করলেও মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা চাইলে তার জন্য বদলি হজ করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং ওয়ারিশদের মধ্যে কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। -আদ দুররুল মুখতার
যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা
বদলি হজের বিনিময়ে মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গোনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। -আল-বাহরুল আমিক
টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন, আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। -যুবদাতুল মানাসিক
হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকে বদলি হজের জন্য পাঠানো উত্তম। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হলেও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। -সুনানে আবু দাউদ
ষাটের দশকে বেশিরভাগ মানুষ পবিত্র হজপালন করতে আসতেন জলপথে অর্থাৎ জাহাজে। কোনো হজযাত্রীর জেদ্দাবন্দরে পৌঁছাতে চার-পাঁচ মাস সময় লেগে যেত। জেদ্দায় আসার পরে চড়তে হতো মক্কার বাসে। এ সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের যাত্রার সঙ্গী হতেন একজন মুতাওয়িফ।
মুতাওয়িফ হলেন একজন গাইড, হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী। তিনি মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের নানাভাবে, নানাক্ষেত্রে সহায়তা করেন এবং তাদের যত্ন নেন, আবাসান ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। ঐতিহ্যগতভাবে একজন মুতাওয়িফ পারিবারিকভাবে দায়িত্বটি পালন করতেন এবং এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এভাবেই রীতিটি হস্তান্তরিত হতো। একসময় এই অতীত রীতি ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।
রিয়াদের বাসিন্দা হায়াত ইদ একজন সাবেক মুতাওয়িফ। তিনি অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, এ সময়টাতে তিনি তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে, বাড়িতে ধূপ জ্বালিয়ে দূর থেকে আসা হজযাত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতেন।
ইদের দাদা একসময় হজযাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতেন এবং সেগুলো নিজেই পরিষ্কার করতেন। তিনি হজযাত্রীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সুপারভাইজার এবং অনুবাদক নিয়োগ করতেন। পরে এ দায়িত্ব বর্তায় তার ছেলে ইদের বাবার হাতে।
হায়াত ইদের বাবা জামিল আবদুর রহমান ইদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হজযাত্রীদের ‘শায়খ’ (শায়খ একটি সম্মানসূচক পদবি। এটি সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। তবে সৌদি আরবে কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞদের পদবি হিসেবেও শায়খ ব্যবহৃত হয়।) ছিলেন বলে জানান তিনি। জনসাধারণের মাঝে মুতাওয়িফদের শায়খ হিসেবেই পরিচিতি ছিল।
হায়াত ইদ বলেন, ‘আমার দাদার পাশাপাশি দাদীও মুতাওয়িফ ছিলেন। আমার দাদা ছিলেন ‘জাভার শায়খ’ অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করতেন তিনি। আমার দাদা-দাদি মারা যাওয়ার পর আমার বাবা মুতাওয়িফের পদ গ্রহণ করেন।’
যাট ও সত্তরের দশকের সেই দিনগুলোর কথা মনে করে ৫০ বছর বয়সী ইদ বলেন, হজযাত্রীরা তার পরিবারকে চিঠি পাঠাতেন যেন তাদের আবাসনের সুযোগ হয়। হজযাত্রীদের জন্য ঈদের সময় বাড়তি খাবারেরও প্রস্তুতি নিত তার পরিবার।
শায়খরা হজযাত্রীদের হজের আচার-অনুষ্ঠান এবং তাদের কী করা উচিত সেসব বুঝিয়ে দিতেন। তাদেরকে মক্কা এবং অন্যান্য স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে করে বাড়ি ফিরে আনার দায়িত্ব ছিল তাদের।
এ সময় তার ভাই আদেল ইদ বলেন, মুতাওয়িফের ভূমিকা অতীতে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান ছিল কিন্তু এখন এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকায় পরিণত হয়েছে।
প্রত্যেক মুতাওয়িফকে তাদের সামর্থ্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক হজযাত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হত। কেউ মাত্র ১০০ জনের দায়িত্ব নিত, আবার অনেকে ১ হাজার জনেরও দায়িত্ব নিতে পারত। তবে তাদের অবশ্যই হজযাত্রীদের ভাষা বোঝার জন্য বা তাদের সঙ্গে কথা বলতে দোভাষী নিয়োগ দিতে হত।
তিনি বলেন, প্রত্যেক মুতাওয়িফ একাই হজযাত্রীদের সেবা করতে পারতেন। তারা নির্দিষ্ট এলাকার হজযাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে সেবা প্রদানের জন্য সেসব দেশে ভ্রমণ করতেন এবং তাদের বিভিন্ন বিষয়গুলো শিখে আসতেন। তাদের খাদ্যাভ্যাস, রুচি, আচার-আচরণ ও ভাষা রপ্ত করাও ছিল একজন মুতাওয়িফের বিশেষ গুণ।
ইদ পরিবার ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা হজযাত্রীদের সহায়তা করত। তাই তারা মালয় ভাষা এবং তাদের মেহমানদের পছন্দের মশলা এবং খাবার সম্পর্কে শিখেছিলেন, যেন তারা হজযাত্রীদের যতটা সম্ভব মক্কাকে নিজের বাড়ি অনুভব করাতে পারেন।
একইভাবে ৪৬ বছর বয়সী উইজদান আবদুর রাজ্জাক লুলু বুকাস উত্তরাধিকারসূত্রে মুতাওয়িফের পেশা পেয়েছেন। তিনি মালয় ভাষায় সাবলীল ছিলেন। তার বাবা এবং দাদার কাছ থেকে মালয় ভাষা রপ্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, কিছু জাতীয়তা বা দেশের ভাষা অন্যদের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে আমরা সে দেশের অনুবাদক নিয়োগ দিই। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হজযাত্রীদের সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলি। কিন্তু চীনা ভাষা কঠিন, তাই আমরা চীনা যাত্রীদের জন্য একজন দক্ষ অনুবাদক নিয়োগ দিয়েছি।
বুকাস বলেন, কিছু হজযাত্রী ঈদুল আজহায় মুতাওয়িফকে উপহার দেওয়ার জন্য উপহার হিসেবে সোনা বা মুক্তা নিয়ে আসতেন। তার বাবা, আবদুল হান্নান লুলু বুকাস হজযাত্রীদের কাছ থেকে অনেক উপহার পেয়েছেন বলে তার নামের সঙ্গে লুলু যোগ করেছেন যার অর্থ মনিমুক্তা।
মুতাওয়িফ থাকা অবস্থায় ঘটা এক অবিস্মরণীয় পরিস্থিতির বর্ণনা করেন বুকাস। তিনি একজন গর্ভবতী নারী হজযাত্রীর কথা বলেন, যিনি হজে এসে বাচ্চা জন্ম দিয়েছিলেন। তিনিই তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং ওই নারী নিরাপদে সন্তান জন্ম দেন।
বুকাস বলেন, তিনি বছরের পর বছর ধরে হজের বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তবে বর্তমান সময়ে বেশ ভালোই পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, অতীতে এবং আধুনিক সময়ের হজের মধ্যে পার্থক্য হলো- যাতায়াত ও আবাসনের অসুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগে কয়েক মাস সময় লেগে যেত। যা এখন মাত্র ঘণ্টায় সমাধান হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সৌদি সরকারের প্রশাসনিক সুবিধার বিষয়টির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
আরব নিউজ থেকে অনুবাদ আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
চলতি মৌসুমে হজ পালন করতে গিয়ে মো. মোস্তফা (৮৯) নামে আরও এক হজ যাত্রী মারা গেছেন। শনিবার (১৮ মে) মক্কায় মারা যান তিনি।
রোববার (১৯ মে) রাত ২টার হজ পোর্টালের আইটি হেল্প ডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে, গত বুধবার (১৫ মে) চলতি হজ মৌসুমে সৌদি আরবের প্রথম বাংলাদেশি এক হজযাত্রী মারা যান। মো. আসাদুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন।
এ দিকে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত (১৮ মে রাত ১টা ৫৯ মিনিট) সৌদি পৌঁছেছেন ২৮ হাজার ৭৬০ জন হজযাত্রী। মোট ৭২টি ফ্লাইটে তারা সৌদিতে পৌঁছান। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ২৫ হাজার ১৩ জন। এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮৬২টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।
হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে হেল্পডেস্ক।
হেল্প ডেস্কের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত মোট ৭২টি ফ্লাইটের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২৮টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৬টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর গত মধ্যরাত পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮৬২ জন হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু হয়েছে। সে হিসেবে এখনো ৩ হাজার ৩৯৫ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। সর্বশেষ শনিবার (১৮ মে) মো. মোস্তফা নামের ৮৯ বছর বয়সী হজযাত্রী মক্কায় মারা যান।
নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালনে বঞ্চিত হবেন না বলে আশাবাদী বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।
ভিসা না হওয়া হজযাত্রীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তবে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি হজ মৌসুমে নিবন্ধিত সবার ভিসা হবে বলে আমি আশাবাদী। কয়েকটি এজেন্সির হজযাত্রী নিয়ে জটিলতা হচ্ছে, তার অর্ধেকই ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। বাকি কাজ সমাধানের পথে।
জিলহজ মাসে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইট শেষ হবে ১০ জুন। এই সময়ের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ১১৭ জন। ইতোমধ্যে ২৮ হাজার ৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। ৮২ হাজার ১০০ জনের ভিসা ভিসা হয়েছে। এখনও বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ৩ হাজার ৩৩৬ জনের ভিসা হয়নি।
জানা গেছে, যথাসময়ে ভিসার আবেদন না করায় ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ৫৭০, যাত্রী সংখ্যা ২৮৬), আনসারি ওভারসিস (লাইসেন্স ৬০১, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), আল রিসান ট্রাভেল এজেন্সি (লাইসেন্স ৬৭২, যাত্রী সংখ্যা ৪৪৪), মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স ১০২৫, যাত্রী সংখ্যা ৩৭৫), নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (লাইসেন্স ১০৮৬, যাত্রী সংখ্যা ২৬০), হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস (লাইসেন্স ১৪৬২, যাত্রী সংখ্যা ২৫০) কে ধর্ম মন্ত্রণালয় শোকজ করে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে ১ হাজার ৮৭৫ জনের চলতি বছর হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।
আর আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সির নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কারও ভিসা না করায় বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়ার দেশত্যাগ স্থগিত ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সিসহ অভিযুক্ত এজেন্সির মালিকদের নিয়ে আমরা বসে, পয়েন্ট পয়েন্ট ধরে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে হলি দারুন নাজাত হজ ওভারসিস, ওয়ার্ল্ডলিঙ্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং মিকাত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের হজযাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যদেরও হয়ে যাবে। নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী হজপালন থেকে বঞ্চিত হবেন না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এমন আশাবাদী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাব সভাপতি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব অংশে যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করা দরকার এজেন্সিগুলো তা পাঠিয়েছে। আর যতটুকু সমস্যা রয়েছে, আশা করি তা সমাধান করা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সালাম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি এবার হজে কোনো লোক পাঠাইনি। আকবর হজ গ্রুপের মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী তার লাইসেন্সে সমস্যা হওয়ায় আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে ৪৪৮ জন হজযাত্রী পাঠাচ্ছে। চলতি সমস্যা নিয়ে হাব সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে মুফতি লুৎফর রহমান সৌদি থেকে ফোনে কথা বলেছেন, তিনি আশ্বস্থ করেছেন; আজকালের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জনের ভিসা হয়ে যাবে। আর আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে সবার ভিসা হয়ে যাবে। তিনি মদিনার বাড়ি ভাড়া করেছেন, মক্কার বাড়িও ভাড়া হওয়ার পথে।’